

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকার যে সাত দিনের মধ্যে সমঝোতা করতে বলেছে, সেই সময় আগামী সোমবার শেষ হবে। শুক্রবার পর্যন্ত কোনো সমঝোতার প্রমাণ দেখা যায়নি।
বিএনপি এই বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেছে। দলীয় সূত্রের খবর, শুধুমাত্র সরকার উদ্যোগ নিলে বিএনপি আলোচনায় বসবে। বৈঠকে সরকারের ভূমিকা ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াকে নিয়েও সমালোচনা করা হয়েছে।
দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে জামায়াতের আহ্বানকে ‘সঠিক পন্থা নয়’ বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে, জামায়াতের সরাসরি আহ্বানে তারা সাড়া দেবে না।
আলোচনার প্রক্রিয়া ও সরকারের ভূমিকা
জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট সংরক্ষণের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট নয়। এনসিপি গণভোটের সময় নিয়ে নমনীয় হলেও নোট অব ডিসেন্ট রাখতে হবে না বলে শর্ত দিয়েছে। সরকারের দুই উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে, তবে কোনো দল ছাড় দিতে রাজি নয়।
উপদেষ্টা একে বলে, দলগুলো ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের লক্ষ্য মাথায় রেখেই এগোচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সোমবার পর্যন্ত কোনো সমঝোতা না হলে সরকার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে দলের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করতে পারে।
উপদেষ্টা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে অধিকাংশ উপদেষ্টা একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে কয়েকজন উপদেষ্টা সতর্ক করেছেন, একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হলে সংস্কারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সরকার সেই প্রেক্ষাপটে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য এক সপ্তাহ সময় দেয়।
জামায়াত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে থাকলেও, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও ছয়দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চও এই আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান অনড় থাকার কারণে তা সফল হয়নি।
জামায়াত ও এনসিপির আশঙ্কা, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের মতো করে গঠন করবে। এ কারণেই বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে।
এনসিপি বলছে, নোট অব ডিসেন্ট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গণভোটে হবে।
বিএনপির অবস্থান
বিএনপি জামায়াতের সরাসরি আহ্বানকে ‘সঠিক পন্থা নয়’ বলে দেখছে। দল মনে করছে, সরকার এবং ঐকমত্য কমিশনই আলোচনার প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছে। সনদে নোট অব ডিসেন্ট সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। ফলে সরকার যে আহ্বান দিয়েছে, বিএনপি তা তামাশা মনে করছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে জামায়াতের টেলিফোন ও ৯ দলের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়। নেতারা বলেন, রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়ে জামায়াত বিএনপিকে ডাকতে পারে না। ব্যক্তিগত বা দুই দলের মধ্যকার বিষয় হলে তবেই যোগাযোগ হতে পারে।
মাঠে কর্মসূচি নয়
১১ নভেম্বর ঢাকায় জামায়াতসহ আট দলের মহাসমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি বিএনপি দেবে না। দল মনে করছে, নির্বাচনের আগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া উচিত নয়। তবে প্রয়োজনে মাঠে সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, সরকার ডাকলে বিএনপি আলোচনা করবে এবং দলীয় অবস্থান জোরালোভাবে উপস্থাপন করবে। নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনানুগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
সূত্র, সমকাল
মন্তব্য করুন
