


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের শেষ পর্যন্ত বেশ হাসিখুশি দিন কাটাতাম। তার আগে স্কুল,মাদরাসা ও কলেজ জীবন গেছে ভীষণ দুরন্তপনায়। সুতরাং হাসি ও আনন্দই ছিলো এ সময়ের অনিবার্য অনুষঙ্গ। মাঝে মাঝে এখনো বন্ধু-বান্ধবীরা মুঠোফোনে কথা বলে শিক্ষাজীবনের স্মৃতি জাগানিয়া সেসব কাহিনি মনে করিয়ে দিলে কিছুসময় মধুর অতীতে ফিরে যাই।শুধু কি বন্ধুরা! শিক্ষাজীবনের অনুজপ্রতিম কনিষ্ঠরাও ফোনে কথা বলে তাদের সাথে করা হাসিঠাট্টার প্রসঙ্গ টেনে নিজেরাই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। ভালো লাগে,আপ্লূত হই।
এই সময় হয়তো মোহতারামা সহধর্মিণী বাজার করার তাগাদা দেয়ায় সম্বিৎ ফিরে পাই। ফলে সংসার ও পেশা জীবনের কঠিন বাস্তবতায় এখন হাসি আসে না,খুশি তো বহু আগেই আলবিদা বলে গেছে। কিন্তু তারপরও চেষ্টা করি নিজের দুঃখ -দারিদ্র্য গোপন করে এখনকার বন্ধু-সহকর্মীদের সাথে স্বতঃস্ফূর্ত থাকার। আমরা সাংবাদিকদের দ্বিতীয় গৃহ জাতীয় প্রেসক্লাবে যাই,আড্ডা দিই, কিন্তু ছুটি শেষে পরীক্ষা আছে একথা মনে আসলে যেমন ঈদের আনন্দও মাটি হয়ে যায় তেমনি প্রেসক্লাবের আড্ডায়ও আগের সেই প্রাণপ্রাচুর্য এখন আর পাওয়া যায় না। তবু যাই,যেতে হয়। নাই মামার চেয়ে কানা মামা তো ভালো। প্রেসক্লাবে গিয়ে দরদবশত একবার ইউনিয়ন অফিসে উঁকি মারি।
এসময় ইউনিয়নে জড়িত ও সক্রিয় কেউ কেউ, কোনো কোনো ছোটো ভাই এগিয়ে আসে,কুশল বিনিময় করে, দোয়া চায় যেনো ইউনিয়নে ভালো করতে পারে। নির্বাচনের মৌসুমে দোয়া ও ভোট দুটোই চায়। মাঝে মাঝে মাস্টারি করার সাধ জাগে তাই জিজ্ঞেস করি ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র পড়েছে কি-না,সাংবাদিকদের শ্রমিক বলা হয় কেনো,রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়নের কাজ কি, বেতন ও মজুরির তফাৎ কি,বাংলাদেশের শ্রম আইন পড়েছে কি-না, ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জবাব নেতিবাচক হয়,এটাও ব্যাপার না, আমরাও বা এমন কি লেখাপড়া করি সুতরাং তারা না করলে দোষ হবে কেনো? কিন্তু আমার খুব হাসি পায় যখন ছোটো ভাইয়েরা জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে আজগুবি সব কথা বলে। তখন নিজে নিজে খুব হাসি আর খুশি হই যাক্ অন্তত হৃৎপিণ্ডটার তো চিকিৎসা হলো। এভাবে আরো একটি ঘটনায় আমি বেশ হাসার সুযোগ পেয়েছি।
গত ২৫.০৯.২৫ প্রস্তাবিত সাংবাদিক সুরক্ষা অধ্যাদেশ(২০২৫) নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা বলেছেন দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সাংবাদিকরা শ্রমিক হিসেবে গণ্য কিন্তু তারা আর শ্রমিক হয়ে থাকতে চায় না। সাংবাদিকরা আর শ্রমিক হয়ে থাকতে চায় না এমন কথা নতুন। সাংবাদিকদের মধ্যে নিজেকে অভিজাত ভাবেন একথা সেরকম কারো হলে হতে পারে কিন্তু এটা সাধারণ সাংবাদিকদের কথা না।
সাধারণ সাংবাদিকরা এটা নিয়ে ভাবে না। নিজেকে শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে তারা কখনো কুণ্ঠিত নয়,বরং গর্ব বোধ করে। এনিয়ে তারা কখনো দুশ্চিন্তা বা আপত্তি করেনি। তাদের যতো উদ্বেগ রুটি-রুজি, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে। তাছাড়া সাংবাদিকরা শুধু বাংলাদেশে শ্রমিক হিসেবে গণ্য তাতো না,সারা দুনিয়ায় তাদেরকে মেহনতি শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাংবাদিকরা শ্রমিক না হয়ে কি হিসেবে বাঁচতে চায় নেতারা তা স্পষ্ট করেননি।
তবে তাঁদের কথা অনুযায়ী সাংবাদিকরা শ্রমিক থাকতে না চাইলে তাদের তো আর ট্রেড ইউনিয়ন (শ্রমিক সংগঠন)করার অধিকার থাকে না। নেতারাও আর শ্রমিক সংগঠনের নেতা থাকেন না। তাহলে তারা সেখানে কোন সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করলেন? সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে আলোচনায় গিয়ে তারা সাংবাদিক ইউনিয়নের অস্তিত্ববিনাশী কথা বলে আসলেন।
এরচেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে? এসবের কারণ হচ্ছে সাংবাদিক ইউনিয়নের নিয়ম-নীতি ও রসম-রেওয়াজ সম্পর্কে সঠিক ও স্বচ্ছ ধারণার অভাব। তারা রাজনীতি আর ট্রেড ইউনিয়নকে গুলিয়ে ফেলার কারণে রাজনীতিবিদদের মতো সুলভ জনপ্রিয়তা কামানোর জন্য মুখরোচক কথা বলতে গিয়ে আত্মঘাতী কাজ করছেন। হতাশাজনক আলোচনায় উপস্থিত বিদগ্ধজনদের কেউ সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের এই প্রশ্নটি করলেন না, এমনকি যে আমলারা নিজেদেরকে অহেতুক বহুজান্তা ভেবে পাগলের মতো মনে মনে সুখ পান তাদের মাথায়ও বিষয়টি খোঁচা দেয়নি।
সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন তথা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের মতো নিছক রুটি-রুজির সংস্থা নয় বরং শ্রমিক হিসেবে সাংবাদিকদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের জন্য আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি এই দুই সংগঠন হচ্ছে সাংবাদিকদের গণতন্ত্র চর্চার জায়গা। এজন্য বিএফইউজে এবং ডিইউজেকে বলা হয় সাংবাদিকদের পার্লামেন্ট বা সংসদ। বিএফইউজে হচ্ছে সেই সংসদের উচ্চকক্ষ আর ডিইউজে হচ্ছে নিম্মকক্ষ। নিয়মিত নির্বাচন ছাড়া যেমন সংসদ টিকে থাকে না তেমনি নিয়মিত নির্বাচনই সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রাণ। নিয়মিত নির্বাচন না হলে সাংবাদিক ইউনিয়ন নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।
এজন্য যে-কোনো মূল্যে নিয়মিত নির্বাচন করাই সাংবাদিক ইউনিয়নের আদর্শ ও চেতনা। কোনো অজুহাতে নির্বাচন না করা সাংবাদিক ইউনিয়ন তো বটেই যে কোনো সাংবাদিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের চিরাচরিত আদর্শ, চেতনা ও রেওয়াজ পরিপন্থী। কারণ সাংবাদিকতা পেশাই হচ্ছে গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক। সাংবাদিক ইউনিয়নের কোনো একটি পদও অতীতে বেশিদিন অনির্বাচিত অবস্থায় শূন্য ও ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালিয়ে যেতে দেখা যায়নি। জাতীয় সংসদ যেমন পরিচালিত হয় কার্যপ্রণালী বিধির( রুলস অব প্রসিডিওর) মাধ্যমে তেমনি সাংবাদিক ইউনিয়ন পরিচালনার জন্যও রয়েছে গঠনতন্ত্রের পাশাপাশি কিছু রীতিনীতি ও রসম-রেওয়াজ (কনভেনশন)।
এসব রসম-রেওয়াজ ছাড়া ইউনিয়ন চলে না, চলতে পারে না। তাই বহুল চর্চিত এসব রসম-রেওয়াজও গঠনতন্ত্রের অলিখিত অংশ। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে উঠেছে বলে এগুলো গঠনতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সাথে জড়িয়ে আছে সংগঠনের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি,সৌন্দর্য ও শিষ্টাচার। এসব রীতি-রেওয়াজ বাদ দেয়া বা অগ্রাহ্য করা হলে সংগঠনের সংহতি,ওজন,গাম্ভীর্য ও আভিজাত্য ক্ষুণ্ন হতে বাধ্য।
জাতীয় সংসদের স্পিকার যেমন সংসদের অভিভাবক সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিও তেমনি সংগঠনের অভিভাবক, গঠনতন্ত্রের জিম্মাদার। সংসদের অধিবেশনে সদস্যরা যেমন স্পিকারকে সম্বোধন করেই কথা বলেন তেমনি সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদের সভায়ও সভাপতিকে সম্বোধন করেই কথা বলতে হয়। এক্ষেত্রে মাঠের নেতা হিসেবে ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক এবং বিএফইউজের মহাসচিব প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। চলবে।
রসম০২.জাতীয় সংসদে যেমন সদস্যদের উত্থাপিত জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে স্পিকার প্রয়োজনবোধে বিবৃতি দেন তেমনি ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদের সভায়ও সভাপতি এধরনের বিবৃতি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বিষয়টি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়ে থাকলে সভাপতি সমস্যা নিরসন বা আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য চাইতে পারেন।
রসম ০৩. ডিইউজের কোনো সদস্য বা নেতা সাংবাদিকদের সমান্তরাল অন্যকোনো সাংবাদিক বা পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হওয়া গঠনতন্ত্র ও রীতি কোনো দিক থেকে বৈধ নয়। অতীতে এজন্য বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের ডিইউজে সদস্যপদ খারিজের নজির আছে। যেমন বিলুপ্ত ঘোষিত দৈনিক আজাদ ও বাংলার বাণীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করা এম এ করিম প্রেস শ্রমিক সংগঠনের জড়ানোর কারণে তাঁকে ডিইউজে থেকে বহিষ্কার করা হয়।
একইভাবে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা নামে একটি সংগঠন করার দায়ে দৈনিক আজাদ ও ইনকিলাবসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনকে ডিইউজে থেকে বহিষ্কার করা হয়।চেষ্টা করেও তাঁরা সদস্যপদ আর ফিরে পাননি।তাঁদের কেউ এখন আর বেঁচে নেই।
তবে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে ছাড় আছে যেহেতু অতীতে আবুল কালাম শামসুদ্দিন, শ্রী নির্মল কুমার সেন(নির্মল সেন),আবুল বাশার মোহাম্মদ মূসা(এবিএম মূসা),আনোয়ার জাহিদের মতো নেতা রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন। যুক্তির বিচারে এই ছাড় না টিকলেও ব্যাপারটা নিপাতনে সিদ্ধ হওয়ার মতো গা সওয়া।তবে ডিইউজের কোনো সদস্য বা নেতা দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত না হওয়াকেই এখনো আদর্শ মনে করা হয়।এজন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং সমূহ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক নেতা আহমেদ হুমায়ুন রাজনীতি বা এরশাদের দলে যোগ দেননি।
রসম০৪.সাংবাদিক ইউনিয়ন যখন ঐক্যবদ্ধ ছিলো তখন ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদে নির্বাচিত হতে বহুমত ও পথের লোকজন ফলে নির্বাহী পরিষদের সভার প্রকৃতি, পরিচালনা পদ্ধতিএবং সর্বোপরি গণতন্ত্র চর্চায় বহুমতের প্রতিফলন ঘটতো।সবাইকে সামাল দিয়ে সভা ও ইউনিয়নকে লক্ষ্য পানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিলো যুগপৎ দুরূহ ও উপভোগ্য। সভায় পান থেকে চুন খসলে বিরোধী পক্ষ ক্ষমতাসীনদের চুল পরিমাণ ছাড় দিতেন না, কিন্তু ইউনিয়ন তথা সদস্য সাংবাদিকদের স্বার্থের প্রশ্ন আসলে সবাই একাট্টা হয়ে আন্দোলনে শুধু শরিকই হতেন না উপরন্তু ক্ষমতাসীনরা কোনো শিথিলতা দেখাচ্ছেন কি-না বা কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারে লিপ্ত কি-না সেদিকে সারাক্ষণ সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন।
রসম০৫. ঐক্যবদ্ধ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদে কোনো কোনো সদস্যকে সামাল দিতে গিয়ে বহু জাঁদরেল নেতাকেও হিমশিম খেতে দেখেছি। কিন্তু তারা কি মারামারি করতেন, একপক্ষের উপর শারীরিকভাবে চড়াও হতেন? না,সভায় চলতো যুক্তিতর্ক ও ইউনিয়নের নিয়ম-নীতি দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই। এনিয়ে হৈ হুল্লোড় মাঝে মধ্যে হতো না তা নয়,কোনো কোনো সময় বিরোধী পক্ষ সভা থেকে সংসদীয় কায়দায় ওয়াকআউটও করতেন এই ওয়াকআউট প্রলম্বিত হতেও দেখেছি। এসময় সংসদের স্পিকারের মতো ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব সংক্ষুব্ধ বিরোধী পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনায় বসে তাদেরকে আবার নির্বাহী পরিষদের সভায় ফিরিয়ে আনা হতো। এতে একদিকে ইউনিয়ন সতেজ,সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো অন্যদিকে নেতারা জবাবদিহিতায় আওতায় আসতে বাধ্য হতেন। এই বহুমুখী গণতন্ত্র চর্চার সুবাদে সাংবাদিক ইউনিয়নে নতুন নতুন নেতা তৈরি হতেন। দেশে বহুদলীয় এই গণতন্ত্র চর্চার নমুনা ও উদাহরণ ছিলো সাংবাদিক ইউনিয়ন।
অথচ জাতীয় রাজনীতিতেও তখন এভাবে বহুমুখী গণতন্ত্র চর্চা হতো না। এজন্য তখনকার দিনে সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচন,এতে কারা জয়ী হচ্ছেন,কারা হারছেন- এসব সারা দেশেতো বটেই এমনকি বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও আলোচনার বিষয়। সাংবাদিক ইউনিয়নে বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চা রাজনৈতিক অঙ্গনের মতো সহিংস না হওয়ার কারণ ইউনিয়ন অবিভক্ত হওয়ায় বছর শেষে নির্বাচনে জেতার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সবদলের ভোট প্রয়োজন হতো।সুতরাং কেউ যদি ইউনিয়ন চর্চায় কট্টর বা অসহিষ্ণু হিসেবে একবার চিহ্নিত হয়ে যায় তাহলে নির্বাচনে জয়লাভ করা কঠিন হতো।তাই বাধ্য হয়ে নিজস্বার্থেই সবাই সংযত আচরণ করতেন।
কিন্তু আফসোস ইউনিয়ন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আজ না আছে গণতন্ত্র চর্চা আর না আছে ইউনিয়নের সেই শক্তিমত্তা। এখন ইউনিয়নের দুই অংশই নিজনিজ রাজনৈতিক সমগোত্রীয় ও সমমতের। কিন্তু তাতেও নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি শিখে ও মেনে ইউনিয়ন চর্চা করা হলে কিছুটা কাজ দিতো,কিন্তু তাতো হয়ই না উল্টো সমমেরুতে বিকর্ষন দেখা দেয়। ফলে গণতন্ত্র চর্চা হয় না শত্রুতা চর্চা হয়। নতুন কোনো ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীর দেখা এখন পাওয়া যায় না।
এখন যারা সাংবাদিক ইউনিয়নে দৌড়াদৌড়ি করছেন তারা রাজনৈতিক কর্মী। রাজনৈতিক শ্লোগানকে তারা ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকাণ্ড হিসেবে ধরে নিয়ে মাঠ গরম করে। ফলে এখন সাংবাদিক ইউনিয়নের কর্মকাণ্ড আর রাজনৈতিক দলের তৎপরতা আলাদা করার কোনোই জো নেই। এটা খুবই হতাশাজনক। এই অবস্থার অবসান না হলে সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয় এখন নামে হলেও একদিন সত্যি সত্যিই রাজনৈতিক দলের সম্প্রসারিত কার্যালয়ে পরিণত হতে বাধ্য। এখন সাংবাদিক নেতারা রাজনৈতিক দলের কাছে সাংবাদিক বলে একটু খাতির তোয়াজ পেলেও তারও অবসান হবে।
অন্যদিকে সবাই রাজনৈতিক কর্মী হয়ে পড়লে সাংবাদিকদের কাছে এসে রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিয়ে ফুলের মালা নেয়ার সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই নবীনদেরকে সাংবাদিক ইউনিয়নের নিয়ম-নীতি ও রসম-রেওয়াজ শেখানো যেমন দরকার তেমনি নবীনদেরও মগজে রাজনীতি ঢুকানোর আগে সাংবাদিক হওয়া আর সাংবাদিক ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আয়ত্ত করতে আগ্রহী হওয়া।
রসম০৬.ইউনিয়ন নির্বাহী পরিষদ দিয়ে রসম-রেওয়াজ শুরু করি। বিএফইউজে নির্বাহী পরিষদকে ইংরেজিতে বলা হয় ফেডারেল এক্সিকিউটিভ কমিটি সংক্ষেপে এফইসি আর ডিইউজে নির্বাহী পরিষদের ইংরেজি হচ্ছে এক্সিকিউটিভ কমিটি সংক্ষেপে ইসি। সংক্ষিপ্ত ও বলতে সহজ হওয়ায় আগেকার দিনে সবাই এফইসি ও ইসিই বলতেন এবং এভাবেই তা পরিচিতি পায়।
নির্বাহী পরিষদের সভায় ছাতা,লাঠি বা ব্যাগ বা থলে নিয়ে আসা রীতি বিরোধী কেননা এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অপ্রতিভ(আনস্মার্ট) ও অগোছালো মনে হয় যা সাংবাদিক ইউনিয়নের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে মানানসই নয়,ঠিক জাতীয় সংসদের অধিবেশনেও এগুলো নিষিদ্ধ। হ্যাঁ কোনো প্রবীণ সদস্য বাধ্য হলে নির্বাহী পরিষদের সভায় তা অনুমোদনযোগ্য। নির্বাহী পরিষদের সভা শুরু হলে ইউনিয়নের অফিস সহকারী দরজা বন্ধ করে দিয়ে 'নির্বাহী পরিষদের সভা চলছে 'লেখা একটি কাঠের ফলক বাইরে দাঁড় করিয়ে দিতো যাতে যে কেউ সভাকক্ষে না ঢুকে।
রসম০৭. সভা চলাকালে সংশ্লিষ্ট কেউ দেরিতে আসলে তাকে দরজা খুলে হাত উঁচিয়ে অনুমতি নেয়া নিয়ম। বিএফইউজে অঙ্গ ইউনিয়নের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদাধিকার বলে ফেডারেল নির্বাহী পরিষদের সদস্য কিন্তু তাদের একজনকে ফেডারেল নির্বাহী পরিষদের সভায় উপস্থিত হতে হয়। দুজন আসা রীতিবিরোধী। এজন্য আগে দাওয়াতপত্রে সভাপতি / সাধারণ সম্পাদক লেখা থাকতো। এখনকার অবস্থা জানি না। তবে কোন কারণে দুজনকেই আসতে হলে কোনো জরুরি বিষয়ে সভায় একজনের ভোটাধিকার থাকবে,দুজনের নয়।
অন্যদিকে ডিইউজের ইউনিট প্রধান ও উপ-ইউনিট প্রধানরা পদাধিকার বলে নির্বাহী পরিষদের সদস্য তবে পরিষদের সভায় ইউনিট প্রধান বা উপ-ইউনিট প্রধানের মধ্যে যেকোনো একজন ইউনিটের প্রতিনিধিত্ব করবেন, দুজন নয়।কোনো প্রয়োজনে দুইজনকেই হাজির থাকতে ভোটাভুটিতে একজনই গ্রহণযোগ্য।ইউনিয়নের অভিভাবক ও গঠনতন্ত্রের মহাফেজ হিসেবে সভাপতিকে কেন্দ্র করে সভা পরিচালিত হয়। তাই সবকিছুতে 'মাননীয় সভাপতি'বলে তাঁকে সম্বোধন করতে হয়। অবশ্য কোনো প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের নাম আসলে সেক্ষেত্রেও 'মাননীয়' বলা রেওয়াজ।
সভায় কোনো বিষয়ে বক্তব্য দিতে হলে হাত তুলে সভাপতির অনুমতি নিতে হয়। সভাপতি অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত জোর করে কথা বলার নিয়ম নেই। তবে অনুমতির জন্য তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে। কোনো বিষয় নিয়ে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরে থাকলে অর্থাৎ বক্তব্য দেয়া অবস্থায় অন্য কারো কথা বলা রীতি বিরোধী। এসময় বসে শুনতে হয়।
এমনকি কেউ বক্তব্য দেয়ার সময় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেন বা বাড়তি কোনো তথ্য জানতে চান তাহলেও বক্তব্যরত ব্যক্তি বসে তাঁদের কথা শোনা বা জিজ্ঞাসার জবাব দেয়া নিয়ম।
রসম০৮.সভায় কোনো বিষয় নিয়ে বিতর্কে কারো কথায় কেউ আঘাত পেলে 'পয়েন্ট অব অর্ডার ' বলে দাঁড়িয়ে এব্যাপারে সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সভাপতি তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের অনুমতি দিলে তিনি বক্তব্য দেয়ার সময় প্রথম ব্যক্তি বসে তা শোনা নিয়ম। পরে সভাপতি তাকে অনুমতি দিলে তিনিও নিজ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। শেষ পর্যন্ত যে বক্তব্য নিয়ে আপত্তি তা যদি সভাপতির বিবেচনায়ও আপত্তিকর মনে হয় তাহলে তিনি বক্তব্য দানকারীকে ভর্ৎসনা ও সতর্ক করে দিয়ে তার বক্তব্য বা অংশবিশেষ সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে পারেন-যাকে বলা হয় এক্সপাঞ্জ করা। যেকোনোভাবেই বিতর্কের অবসান হলে সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষ সভাপতিকে ধন্যবাদ দেয়া নিয়ম। এছাড়াও কারো কথাবার্তা ইউনিয়নের নিয়ম ও স্বার্থবিরোধী মনে হলেও পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সভাপতির মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।
রসম০৯.এধরনের বিরোধ মীমাংসার জন্য সভাপতি প্রয়োজন বোধ করলে উভয় পক্ষের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে পারেন।
বিরোধপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে সভায় সৃষ্ট হট্টগোলে বা কারো বাধার কারণে যদি কেউ বক্তব্য রাখতে না পারেন তাহলে তিনি সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁকে ব্যবস্থা নিতে বলতে পারেন। বিষয়টি বলার ভাষা হচ্ছে 'মাননীয় সভাপতি আমার বক্তব্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আমার অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, আমার অধিকার নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি (মি.প্রেসিডেন্ট আই এম সাপ্রেরসড,প্লিজ প্রটেক্ট মাই রাইট টু স্পিক)। এছাড়া সভায় কেউ যদি মনে করেন তিনি কোনো বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ বা অনুমতি পাচ্ছেন না, তাহলে তিনি এ ব্যাপারে তিনি মোলায়েম ও কিছুটা সরস ভাষায় সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে পারেন 'মাননীয় সভাপতি আমি বৈষম্যের শিকার, কারণটা জানতে পারি, কারণটা কি এই যে আমি সুদর্শন না?
এই ধরনের অন্যান্য রসোক্তিতে সভায় আনন্দের পরিবেশ তৈরি হয়, সাথে বার্তাটাও চলে যায়। সভায় বক্তব্য দিতে উঠে প্রথমেই সভাপতিকে ধন্যবাদ দেয়া নিয়ম। এছাড়াও বিরোধপূর্ণ কোনো বিষয়ে সর্বসম্মত সমাধান হলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত হলে হাততালি দিয়ে সভাপতিকে অভিনন্দিত করা রেওয়াজ।
নির্বাহী পরিষদের সকল কর্মকর্তা ও সদস্যকে বার্ষিক বা দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাহী পরিষদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও গৃহীত সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলাই বিধান, বিপক্ষে বলা যাবে না তবে কেউ যদি কোনো কর্মকাণ্ড বা সিদ্ধান্তের সাথে একমত না হন এবং তিনি নিজের ভিন্নমত এজিএম বা বিজিএমে তুলে ধরতে চান তাহলে নির্বাহী পরিষদের সভার কার্যবিবরণীতে তা লিখিয়ে নিতে হবে।এটাকে বলা হয় 'নোট অব ডিসেন্ট রেজিস্টার করা'।
এজন্য নির্বাহী পরিষদের যে সভায় এই ঘটনা ঘটবে সেই সভায় সভাপতি কে বলতে হবে ' মাননীয় সভাপতি বিষয়টি নিয়ে আমার দ্বিমত আছে, আমার দ্বিমত পোষণের (নোট অব ডিসেন্ট) বিষয় সভার কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ইউনিয়নের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাহী পরিষদের শেষ সভায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আনুষ্ঠানিক ভাবে সবার কাছে বিদায় নিবেন।তাঁরা ইউনিয়ন পরিচালনায় নিজেদের সম্ভাব্য ভুলত্রুটির জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং সাফল্যের জন্য সবাইকে কৃতিত্ব দান,সবার সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন।
নির্বাহী পরিষদের যারা যারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন পছন্দ নির্বিশেষে সবার সাফল্য কামনা করা রেওয়াজ। নির্বাহী পরিষদের অন্য সবাই সফলভাবে ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদ জানাবেন। এই সভা হবে আবেগ মথিত ও বেদনাবিধুর। এই দিন কোনো তিক্ত বিষয়ের অবতারণা বা বিরোধ সৃষ্টি করা একেবারেই রসমের খেলাপ।
সভার খবর ছাপানোর জন্য পত্রিকা বা টেলিভিশনে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কোনো বক্তার নাম বা তার বক্তৃতা যাওয়া রীতিবিরোধী,কেননা তাতে মানুষ অসময়ে প্রচারপ্রবণ ও উচ্চাভিলাষী হয়ে ইউনিয়নের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার আশঙ্কা থাকে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সভার খবর, গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে যেগুলো আম সদস্যকে জানানো দরকার শুধু সেই খবর যাবে। আর সভাপতিত্ব কে করেছেন তাঁর নাম এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম সাথে তিনি যে উপস্থাপনা করেছেন সেই খবর।
এছাড়া সভাপতি তথা নির্বাহী পরিষদ যদি কোনো জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজনে নির্বাহী পরিষদের বাইরের কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে আহ্বান করে বর্ধিত সভা করতে চান তাহলে করতে পারেন। সেটা রীতিসিদ্ধ।
এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে 'সভাপতি বা নির্বাহী পরিষদের বিশেষ আমন্ত্রণে সভায় অমুক বা অমুক অমুক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন ' কথাটা দেয়ার নিয়ম আছে। সভায় নির্বাহী পরিষদের পক্ষ থেকে সভাপতি আমন্ত্রিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে সাড়া ও সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো রেওয়াজ। প্রয়োজনে কোনো বিশেষ ইউনিটের সব সদস্যকে নিয়েও বর্ধিত সভা করা যায়। সেই সভার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কারো নাম যাওয়ার নিয়ম নেই।
প্রসঙ্গত ইউনিয়নের প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখা, সংবাদমাধ্যমে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা,ছাপানোর জন্য সংবাদমাধ্যম অফিসে যোগাযোগ করার দায়িত্ব প্রচার সম্পাদকের অন্য কারো নয়,সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের তো নয়ই।
প্রয়োজনে তিনি কারো সহযোগিতা নিতে পারেন কিন্তু কাজটা তাঁকেই সামাল দিতে হবে।নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলে সংবাদমাধ্যম অফিসের সাথে তাঁর যোগাযোগ ও সম্পর্ক জোরদার হবে। নির্বাহী পরিষদের সভায় কোনো কারণে সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত না থাকলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বা ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বতন সহকারী মহাসচিব (বিএফইউজের বেলায়) তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।
আরেকটি জরুরি বিষয় হচ্ছে যেহেতু অঙ্গ ইউনিয়ন বা ইউনিটই হচ্ছে ইউনিয়নের প্রাণশক্তি তাই নির্বাহী পরিষদের জরুরি সভা ছাড়া সব সভায় অঙ্গ ইউনিয়ন বা ইউনিট পরিস্থিতি এজেণ্ডাভুক্ত আবশ্যিক রীতি। বিবিধ এজেণ্ডা থাকাও নিয়ম। তবে জরুরি সভায় শুধু জরুরি বিষয়টি অন্য কোনো বিষয় বা বিবিধ রাখা নিয়ম বিরোধী।
রসম১০.নির্বাহী পরিষদের সভায় সভাপতি ঘটনাক্রমে উপস্থিত থাকতে না পারলে সিনিয়র সহসভাপতি সভাপতিত্ব করবেন। তিনিও অনুপস্থিত থাকলে ক্রমানুযায়ী সহসভাপতি সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। সহসভাপতিগণ কেউ উপস্থিত না থাকলে সভায় উপস্থিত নির্বাহী পরিষদ সদস্যদের মধ্য থেকে ক্রমানুসারে অপেক্ষাকৃত উপরের দিকের একজন সভাপতিত্ব করবেন।
তবে এধরনের পরিস্থিতিতে সভাপতি এসে হাজির হলে সহসভাপতি আর সহসভাপতি হাজির হলে সদস্য তাঁকে স্বাগত জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া নিয়ম। দ্বিতীয়ত নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের বিবেচনায় পেশায় অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ কেউ যদি নির্বাহী পরিষদের সদস্য তালিকায় উপরে থাকে আর পেশায় জ্যেষ্ঠ কেউ যদি নিচে পড়ে যায় তাহলে সভায় সভাপতিত্ব করতে কনিষ্ঠের ডাক পড়লেও তিনি জ্যেষ্ঠের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাঁকে সভাপতিত্ব করতে অনুরোধ করা রেওয়াজ। এক্ষেত্রে জরুরি বিষয় হচ্ছে সভাপতি ছাড়া অন্য কারো সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কোনো জরুরি, নীতিগত ও স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন নয়। সেক্ষেত্রে সভা মুলতবি করা অথবা নতুন করে আহ্বান করাই নিয়ম।
রসম১১.ইউনিয়ন নির্বাহী পরিষদের সভার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কার্যবিবরণী লিপিবদ্ধ করা। এটি কোনো খাতায় নামকাওয়াস্তে কিছু লেখা নয়,এটা ইউনিয়নের ইতিহাস ও ধারাবাহিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নেতা ও সদস্যরা এই দলিলের মাধ্যমে ইউনিয়নকে বুঝতে ও জানতে পারবেন।শুধু তাই নয়,কোন বিরোধপূর্ণ বিষয়ে নির্বাহী পরিষদের কোন কর্মকর্তা,সদস্য বা কোন ইউনিটের প্রধান বা উপপ্রধান কি
বলেছেন, পরে তিনি কি বলছেন এই দু’য়ের মধ্যে কোনো ফারাক হচ্ছে কি-না তা এই কার্যবিবরণী থেকে জানা যাবে এবং চলমান কোনো নিরসনে সহায়ক হবে।
এছাড়া আমাদের ইউনিয়ন বিস্তৃত ঐতিহ্য ধারণ করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএফইউজে বা ডিইউজের লিখিত কোনো ইতিহাস নেই।অথচ খুবই দরকার। কোনো সময় যদি নেতাদের কাছে বিষয়টি গুরুত্ব পায় বা কোনো ইতিহাস সন্ধানী যদি ইতিহাস লিখতে আগ্রহী হন তাহলে সে ইতিহাস রচনায় তথ্যের অন্যতম প্রধান উৎস হবে এই কার্যবিবরণী।
রসম১২. নির্বাহী পরিষদের সভা এবং ইউনিয়নের এজিএম ও বিজিএমে কার্যবিবরণী লেখা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব ইউনিয়নের দফতর সম্পাদকের। তবে এ জন্য মেধা ও দক্ষতা দরকার। যেনোতেনো কিছু লেখা নয়,একজন পেশাদার প্রতিবেদক যেমন বুঝেশুনে ও গুরুত্ব যাচাই করে কারো বক্তৃতা নোট নেন এক্ষেত্রেও পাইকারিভাবে সবকিছু না বাছাই করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে। এজিএম ও বিজিএমে ইউনিয়নের পূর্ববর্তী এজিএম থেকে পরবর্তী এজিএম পর্যন্ত যত কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্ত হয়েছে তার কার্যবিবরণী এজিএমে সাধারণ সম্পাদক পাঠ করে আম সদস্যদের অনুমোদন নিতে হয়।
তবে যেহেতু এটা খুবই দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তাই নিয়ম হচ্ছে এজিএম বা বিজিএমের আগে কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ বিষয়গুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্তসমূহের একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে তা এজিএমে পাঠ করে শোনানোর পর সভাপতি উপস্থিত সদস্যদের অনুমোদন নিয়ে পুরো কার্যবিবরণী পঠিত ও অনুমোদিত ধরে নিয়ে বিষয়টি ফয়সালা করা।
সমাবেশ-সেমিনার প্রসঙ্গঃ
নানা প্রয়োজন ও উপলক্ষে ইউনিয়নের উদ্যোগে বড় পরিসরে সভা-সমাবেশ, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, মানববন্ধন ও গোলটেবিল জাতীয় কর্মসূচি নিতে হয়।
এসব অনুষ্ঠানে ইউনিয়নের সাধারণ সদস্য এবং নেতা ছাড়াও রাজনৈতিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতা এবং সুধীরা উপস্থিত থাকেন।
এক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে রাজধানীতে এসব কর্মসূচি নেয়া হবে বিএফইউজে ও ডিইউজের যৌথ উদ্যোগে। শুধু নিয়ম নয়,ইউনিয়ন থেকে এধরনের সিদ্ধান্তও নেয়া আছে।
যৌথ কর্মসূচিতে বড় কোনো সমস্যা না হলে সভাপতিত্ব করবেন বিএফইউজের সভাপতি আর কর্মসূচি সঞ্চালনা করবেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক। তবে একান্তভাবে বিএফইউজে বা ডিইউজের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে উভয় সংগঠন নিজস্ব কর্মসূচিও পালন করতে পারে।
সেক্ষেত্রে নিজ নিজ সভাপতি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আর মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদক স্বাগত বক্তব্য দিবেন। সঞ্চালনা করবেন সহকারী মহাসচিব ও যুগ্ম সম্পাদক।
রসম১৩.একইভাবে এজিএমের উন্মুক্ত অধিবেশনে মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদক স্বাগত বক্তব্য রাখবেন। সঞ্চালনা করবেন সহকারী মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদক। এখানে উল্লেখযোগ্য যে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া এবং ঘনঘন মঞ্চে উঠে আমন্ত্রিত মেহমানদের সামনে নিজের প্রদর্শনী করে কেউ আত্মতৃপ্তি অনুভব করলেও তা ইউনিয়নের শৃঙ্খলা ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উপরন্তু সচেতন মেহমানরা এধরনের কাজ এবং লোককে ভালো চোখে দেখেন না।
তাঁরা ইউনিয়ন এবং ইউনিয়নের নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি নিষ্ঠাবান সদস্য বা নেতাদেরই পছন্দ করেন।প্রসঙ্গ বিএফইউজে বা ডিইউজে বড় কোনো কর্মসূচি বা অনুষ্ঠান এমনকি এজিএমের উন্মুক্ত অধিবেশনেও ইউনিয়নের কোনো বর্তমান বা সাবেক নেতার উপস্থিতি আলাদা জানান দেয়া রীতি বিরোধী, কেননা ঘরের লোক। তাঁর উপস্থিতি ঘোষণা করা হলে তিনি মেহমান হয়ে যান।
এতে তাঁর মর্যাদা বাড়ে না হ্যাঁ, বাইরের কোনো মেহমান, অন্য সাংবাদিক সংগঠনের কেউ অথবা সাংবাদিকতায় উচ্চপদস্থ কেউ (যেমন সম্পাদক) আসলে সেটা বলা যেতে পারে, তাতে উক্ত সংগঠনের প্রতিনিধিত্বও জানান দেয়া হয়ে যায়।
রসম১৪..তবে এখানে বলে রাখা ভালো বিএফইউজের আধলাদা কর্মসূচিতে ডিইউজে এবং অন্যান্য অঙ্গ ইউনিয়ন নেতাদের দাওয়াত দেয়া নিয়ম এবং রাজধানীর স্বাগতিক (হোস্ট) ইউনিয়ন হওয়ার সুবাদে ডিইউজে নেতাদের সম্মান যেনো উজ্জ্বল হয় সে ব্যাপারে যত্নবান হওয়া রেওয়াজ।
রাজধানীতে বিএফইউজে যে কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানই করুক না কেনো বাইরের আমন্ত্রিত অতিথি বাদে অংশগ্রহণকারীদের বাকি সবাই তো ডিইউজের সদস্য। অন্যদিকে ডিইউজের আলাদা কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানে বিএফইউজে নেতাদের সম্মান যাতে সমুন্নত থাকে সেভাবে কর্মসূচি বিন্যাস করতে হবে,কেননা এটা সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ অভিভাবক সংগঠন।
রসম১৫.বিএফইউজে-ডিইউজে সম্পর্কঃ বিএফইউজে ও ডিইউজের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়টি একাধারে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। গঠনতান্ত্রিকভাবে বিএফইউজে হচ্ছে ডিইউজেসহ ফেডারেশনভুক্ত সব অঙ্গ ইউনিয়নের অভিভাবক, কিন্তু ইউনিয়ন পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের সময়ে দেখা যাচ্ছে উভয়ের মধ্যে দেখা দেয় টানাপোড়েন,দ্বন্দ্ব, বিশৃঙ্খলা ও অচলাবস্থা, যা অতীতে ঐক্যবদ্ধ ইউনিয়নে পরস্পর বিপরীতমুখী রাজনৈতিক স্রোত থাকা সত্ত্বেও দেখা যায়নি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে সহনশীলতা ও উদারতার ঘাটতি থাকায় এধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।ইউনিয়নে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকা দোষের না,বরং প্রতিযোগিতা না থাকলে ইউনিয়নে গতি আসবে কিভাবে?কিন্তু প্রতিযোগিতার নামে ব্যক্তিগত রেষারেষি,কাদা ছোঁড়াছুড়ি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।এতে নেতৃত্বের সুনাম হানির পাশাপাশি ইউনিয়নের ঐক্য ও সংহতি নষ্ট, ইউনিয়ন দুর্বল হয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হয়ে হানাহানির পরিবেশ তৈরি হয়,ইউনিয়নে গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহত হয়।
এজন্য সবসময় সতর্ক থাকতে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ,মনোমালিন্য যেনো ইউনিয়নকে প্রভাবিত করতে না পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিএফইউজে ও ডিইউজের মধ্যে কর্তৃত্বের সংঘাত নজরে পড়ে। বিএফইউজে থেকে মনে করা হয় তারা সর্বোচ্চ সংগঠন, ডিইউজেসহ অন্যরা বিএফইউজের অঙ্গ ইউনিয়ন সুতরাং বিএফইউজে তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অন্যদিকে ডিইউজের পক্ষ থেকে মনে করা হয় তারা নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ট্রেড ইউনিয়ন সুতরাং বিএফইউজের সিদ্ধান্ত মানতে তারা বাধ্য নয়। উপরন্তু তাদের ধারণা বিএফইউজের মূল নেতারাও মূল ইউনিয়ন হিসেবে ডিইউজের সদস্য।
সুতরাং কেউ কারো প্রজা নয়।প্রয়োজনে ডিইউজে ফেডারেশন থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে এবং বিএফইউজের মূল নেতাদের বিরুদ্ধেও ডিইউজে ব্যবস্থা নিতে পারে। এধরনের ধারণা একেবারেই সঠিক না। প্রথম কারণ হচ্ছে,
রসম১৬. আমরা কথায় কথায় বলি বিএফইউজে ও ডিইউজের সাথে ঐতিহ্যবাহী বিশেষণ ব্যবহার করি কিন্তু ঐতিহ্যটা কি এটা কি আমরা ভাবি।
বিএফইউজে ও ডিইউজে রাতারাতি গজিয়ে উঠা বা ভুঁইফোড় কোনো সংগঠন না। এই দুই সংগঠনের রয়েছে সুদীর্ঘ, সমন্বিত ও গৌরবময় অতীত। ১৯৫০ সালের ২ আগস্ট গঠিত হয় তৎকালীন পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন(পিএফইউজে) আর এই ফেডারেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের অভিন্ন মিশন নিয়ে ১৯৫১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন (ইপিইউজে)।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ৩০ জুন গঠিত হয় আজকের বিএফইউজে এবং ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই গঠিত হয় ডিইউজে। তাহলে এই দুই ইউনিয়ন একই লক্ষ্যে পরিচালিত ইতিহাসের আজন্ম সাথী।
রসম১৭.সাথী নয় বরং বলা উচিত একই পরিবারের যমজ সন্তান। কেননা যারাই বিএফইউজে গঠন করেছেন তারাই পয়দা করেছেন ডিইউজে। পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-পিএফইউজের সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ভাষা সৈনিক খোন্দকার গোলাম মুস্তফা(ওরফে কেজি মুস্তফা)।
২০১০ সালে ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত আমাদের কোনো সাংবাদিক পাকিস্তান গেলে সেখানকার সাংবাদিকরা জানতে চাইতেন মোহতারাম কেজি ভাই কেইসে হেঁ ( সম্মানিত কেজি ভাই কেমন আছেন?)। সেই কেজি মুস্তফা ছিলেন বিএফইউজেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
ঐতিহাসিক পথ পরিক্রমায় যমজ ভাইয়ের মতো হাত ধরে চলার বিষয়টি এই দুই সংগঠনের সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারক, এই সমন্বয় উভয়ের গঠনতন্ত্রের অলিখিত রীতি ও রেওয়াজ, যা কেউ ভঙ্গ করার সুযোগ নেই। এজন্য নেতৃত্বের সামনে এ ধারার সাথে মেলবন্ধন রেখে নিজেকে পুনর্বিন্যাস ছাড়া অন্যকোনো বিকল্প নেই। এই কারণে এটা স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত যে যিনি মূল ইউনিয়ন ডিইউজের সদস্য তিনি বিএফইউজের ও সদস্য। তাই কেউ কাউকে বিয়োগ করার অবকাশ নেই। এই ধরনের চিন্তা আত্মঘাতী ও নেতৃত্বের বাতুলতা।সেদিকে হাঁটাই উচিত না। পক্ষান্তরে বিএফইউজে নেতৃত্বেরও উচিত হবে না রাজা-প্রজার সম্পর্ক তৈরি করা।
তাঁদেরকেও পথ চলতে হবে মূলনীতি ঠিক রেখে পরামর্শ ও সমঝোতার মাধ্যমে। তারপরও সংকীর্ণতা ও অসহিষ্ণুতার কারণে ভজকট লেগে গেলে উত্তরণের উপায় কি? এককথায় গণতন্ত্র চর্চা। দুই সংগঠনের যিনি বা যাদের কারণে সংকট তৈরি হবে তার বিরুদ্ধে ইউনিয়নের স্বস্ব নির্বাহী পরিষদের সভায় তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে।
তাতেও কাজ না হলে তলবি সভার মাধ্যমে অনাস্থা। তবে কথায় কথায় সেদিকে যাওয়া রীতিবিরোধী। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জনমত সংগঠিত করে নেতিবাচক পক্ষের বিদায় নিশ্চিত করে এই সংকটের সুরাহা করতে হবে।
রসম১৮. ইউনিয়নের এজিএম ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
বিএফইউজে সারা দেশের সংগঠন তাই এর একটি জাতীয় চরিত্র আছে আর জাতীয় চরিত্র থাকলে জাতির পক্ষে আন্তর্জাতিক বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়,অন্যথায় সংগঠনের মান ক্ষুণ্ণ ও সংকুচিত হয়।এজন্য বিএফইউজের ইজিএম ও বিজিএমের আগে একটি বিষয় নির্ধারণ কমিটি (সাবজেক্ট কমিটি) মনোনীত করা নিয়ম। কমিটিতে নির্বাহী পরিষদ থেকে মনোনীত সদস্য ছাড়াও বাইরে থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের রাখা নিয়ম। তবে তারা সবাই ইউনিয়ন সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং চোখ কান খোলা সাংবাদিক হওয়া দরকার।
সচরাচর এই কমিটিতে ইউনিয়নের সাবেক নেতারাই থাকেন। এই কমিটি দেশ-জাতির অবস্থা, দেশে সাংবাদিকতার সমস্যা ও সম্ভাবনা, উত্তরণের উপায়, দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, সাংবাদিকসহ শ্রমজীবী মানুষের রুটি-রুজি ও মর্যাদার সংগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সম্পর্কিত কিছু প্রস্তাব তৈরি করবে।
এসব প্রস্তাব অধিবেশনে উত্থাপন করে কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে অনুমোদন করিয়ে প্রকাশের জন্য সংবাদমাধ্যমে ইউনিয়নের প্রেস বিজ্ঞপ্তি হিসেবে পাঠাতে হবে।
রসম১৮. ইউনিয়নের এজিএম ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
বিএফইউজে সারা দেশের সংগঠন তাই এর একটি জাতীয় চরিত্র আছে আর জাতীয় চরিত্র থাকলে জাতির পক্ষে আন্তর্জাতিক বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়,অন্যথায় সংগঠনের মান ক্ষুণ্ণ ও সংকুচিত হয়।
এজন্য বিএফইউজের ইজিএম ও বিজিএমের আগে একটি বিষয় নির্ধারণ কমিটি (সাবজেক্ট কমিটি) মনোনীত করা নিয়ম। কমিটিতে নির্বাহী পরিষদ থেকে মনোনীত সদস্য ছাড়াও বাইরে থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের রাখা নিয়ম। তবে তারা সবাই ইউনিয়ন সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং চোখ কান খোলা সাংবাদিক হওয়া দরকার। সচরাচর এই কমিটিতে ইউনিয়নের সাবেক নেতারাই থাকেন।
এই কমিটি দেশ-জাতির অবস্থা, দেশে সাংবাদিকতার সমস্যা ও সম্ভাবনা, উত্তরণের উপায়, দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, সাংবাদিকসহ শ্রমজীবী মানুষের রুটি-রুজি ও মর্যাদার সংগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সম্পর্কিত কিছু প্রস্তাব তৈরি করবে।এসব প্রস্তাব অধিবেশনে উত্থাপন করে কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে অনুমোদন করিয়ে প্রকাশের জন্য সংবাদমাধ্যমে ইউনিয়নের প্রেস বিজ্ঞপ্তি হিসেবে পাঠাতে হবে।
রসম১৯.সাংবাদিক মানে শ্রমিক।এই পেশায় পদ-পদবির তারতম্য বেধে বেতন-ভাতাও কম-বেশি হতে পারে কিন্তু যিনি যেই বেতন পান না কেনো এই পেশাকে আর্থিক জৌলুশের বলা কঠিন। সেই পেশারই ইউনিয়ন নির্বাচন জাঁকজমক হওয়ার অবকাশ কোথায়?
ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে এটা করা সম্ভব হলেও সাধারণ চিত্র এটা নয়। তাই বিশেষ কোনো ঘটনাকে সাধারণীকরন করা যাবে না।যদি করা হয় তাহলে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকের পক্ষে ইউনিয়নের নেতৃত্বে আসতে পারবে না। অর্থাৎ তাদের মূল্যবান অবদান থেকে ইউনিয়ন বঞ্চিত হবে। এজন্য ইউনিয়ন নির্বাচন সাদামাঠা করাই রেওয়াজ।
এখানে প্রচারণা থেকে ভোটাভুটি সবকিছুই হবে ইউনিয়নের স্বার্থসচেতনতা ভিত্তিক, সাময়িক কোনো বৈষয়িকতার ভিত্তিতে নয়। এজন্য সাংবাদিক ইউনিয়ন নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য ব্যবসায়ী সংগঠন বা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো হওয়া রেওয়াজ বিরোধী। নির্বাচনের গাম্ভীর্য ও গুরুত্ব খাটো হয়ে যায় আর ত্যাগী সাংবাদিকরা ভোগবাদে নিমজ্জিত হয়।
রসম ২০.বর্তমান বিভক্ত ইউনিয়ন নির্বাচনে যেহেতু সবাই সমগোত্রীয় ও একই ধ্যান-ধারণার তাই সাবেক কোনো নেতা অর্থাৎ সভাপতি, মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদকের উচিত না প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্যানেলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়া। এতে সাবেক নেতা হিসেবে তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। হ্যাঁ, তিনি নিজের পছন্দ মতো ভোট দিতে সমস্যা নেই। নির্বাচনে প্রার্থীরা নিজের প্রার্থিতার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন, ভোট চাওয়া,নিজের যোগ্যতা ভোটারদের কাছে তুলে ধরতে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু কোনো প্রকার হানাহানি, বিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপবাদ, কুৎসা রটনা, অপপ্রচার সম্পূর্ণ রীতি বিরোধী।
এধরনের আরো কিছু রসম-রেওয়াজ, রীতিনীতি সাংবাদিক ইউনিয়নে রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই সচেতন থাকার মধ্যেই কল্যাণও শ্রীবৃদ্ধি। তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে সাংবাদিক ইউনিয়ন বিকশিত হয় নেতৃত্বের যোগ্যতা,উদারতা, সহনশীলতার সমন্বয়ে গড়ে উঠা মানবিক উচ্চতায়। নেতৃত্বের উন্নত মানস ছাড়া গঠনতন্ত্র রসম২১ রীতিনীতি,রসম-রেওয়াজ সবই বেকার, একথা আমরা যেনো ভুলে না যাই।
লেখার কলেবর নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আরো অঙ্গ ইউনিয়ন ও ইউনিটের রসম-রেওয়াজ,একান্তভাবে সাংবাদিক ইউনিয়নের কিছু কাজ ও করণীয় এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন বিশেষ কাজ আনজাম দেয়ার জন্য উপকমিটি গঠনে প্রচলিত রেওয়াজ-রীতির মতো আরো জরুরি কিছু বিষয় বাদ দিতে হলো। ভবিষ্যতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাওফিক দিলে এগুলো নিয়ে লেখার আশা রেখে শেষ করলাম।
লেখকঃ ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
মন্তব্য করুন