বুধবার
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কপ৩০-এ জরুরি জলবায়ু অর্থায়ন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান বাংলাদেশের 

এনপিবি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম
বিবৃতি পাঠ করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ
expand
বিবৃতি পাঠ করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ

জরুরীভিত্তিতে ন্যায্য ও জবাবদিহিমূলক জলবায়ু পদক্ষেপ নিতে কপ৩০-এ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময় বুধবার (১৯ নভেম্বর) ব্রাজিলে চলমান কপ৩০-এর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ আহবান জানানো হয়।

এতে দেশের পক্ষে জাতীয় বিবৃতি পাঠ করেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের উপ-প্রধান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ। এসময় তিনি সতর্ক করে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যেই কোটি কোটি বাংলাদেশিকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই”।

তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন কোনো ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নয়—এটি আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতা। অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টি, বন্যা, আরও তীব্র ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন ও লবণাক্ততা—এসব প্রভাব “লাখো মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে, ফসল নষ্ট করছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে প্রান্তসীমায় ঠেলে দিচ্ছে।”

বিশ্বব্যাপী মোট নিঃসরণের ০.৫ শতাংশেরও কম অবদান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু খাতে “দায়িত্ব, নেতৃত্ব ও আশার পথ” বেছে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দেশে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের চারটি বড় উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন নাভিদ শফিউল্লাহ। প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এনডিসি ৩.০ উপস্থাপন, যার মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে তা ২৫ শতাংশে উন্নীত করা—যা বর্তমানের তুলনায় চার গুণ বেশি।

দ্বিতীয়ত, কৃষি ও বর্জ্য খাতে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানোর উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। তৃতীয়ত, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন, যেখানে গুরুত্ব পেয়েছে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও কমিউনিটি সহনশীলতা।

চতুর্থত, দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন কৌশল প্রণয়নের উদ্যোগ। প্যারিস চুক্তির ন্যায়পরায়ণতার নীতি উল্লেখ করে নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, উন্নত দেশগুলোকে “জরুরি ও গভীর” নিঃসরণ কমাতে হবে এবং জলবায়ু সহায়তা বহুগুণ বাড়াতে হবে।

তিনি উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী সরকারি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি, অভিযোজন অর্থায়নকে বছরে ১২০ বিলিয়ন ডলারে ত্রিগুণ বৃদ্ধির আহ্বান জানান এবং এমন আর্থিক প্রবাহের দাবি করেন যা সহনশীলতা, অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দেবে।

প্যারিস চুক্তির ধারা ২.১(সি)—যা বৈশ্বিক আর্থিক প্রবাহকে নিম্ন-কার্বন ও জলবায়ু-সহনশীল পথে সামঞ্জস্য করার কথা বলে—এর পুনঃপ্রতিশ্রুতি জানিয়ে তিনি বলেন, এই সামঞ্জস্য অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ দেশের টেকসই উন্নয়নকে সহায়তা করবে, বাধা দেবে না।

গ্লোবাল স্টকটেকের ফলাফল উল্লেখ করে নাভিদ শফিউল্লাহ পুনরায় বলেন, ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমা বৈশ্বিক প্রচেষ্টার কেন্দ্রে থাকা আবশ্যক। তিনি ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের জলবায়ু সহায়তা সংক্রান্ত পরামর্শমূলক মতামত উল্লেখ করে বলেন, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, ক্ষতি প্রতিরোধ, সহযোগিতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা—এসব বিষয়ে দেশগুলোর বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ন্যায্যতার দাবি আরও জোরালো করে।

নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ অনেক আশা ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কপ৩০-এ এসেছে। তিনি বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানান এই সম্মেলনকে এমন একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্তে পরিণত করতে যেখানে “প্রতিশ্রুতি বাস্তব কর্মে রূপ নেবে” এবং “ন্যায়ভিত্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিশ্চিত হবে।”

তিনি প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় সম্মিলিত সাহসের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এটি কূটনীতি নয়—এটি টিকে থাকার প্রশ্ন।”

কপ৩০-এর উচ্চপর্যায়ের সেশন চলমান রয়েছে। আর্থিক সহায়তা, নিঃসরণ হ্রাসের পথনকশা, অভিযোজন লক্ষ্যমাত্রা এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিল কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা আরও তীব্র হচ্ছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন