বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেরিতে সন্তান নেওয়া: কতটা নিরাপদ, চিকিৎসকরা যা বলছেন

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম
চিকিৎসকরা ৪১ বছর বয়সে এই গর্ভধারণকে ‘অ্যাডভান্সড ম্যাটারনাল এইজ’ বা দেরিতে গর্ভধারণ হিসেবে দেখছেন
expand
চিকিৎসকরা ৪১ বছর বয়সে এই গর্ভধারণকে ‘অ্যাডভান্সড ম্যাটারনাল এইজ’ বা দেরিতে গর্ভধারণ হিসেবে দেখছেন

বলিউডের ক্যাটরিনা কাইফের পর এবার ভারতী সিংও চল্লিশের কোঠায় পা দিয়ে মাতৃত্বকে বরণ করছেন। বয়স বাড়ার পর সন্তান জন্ম দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই কৌতূহল প্রকাশ করছেন।

চিকিৎসকদের মতে, বয়সের শেষভাগে গর্ভধারণে কিছু বাড়তি যত্ন প্রয়োজন হলেও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে অনেক নারীই সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারছেন। ৪১ বছরের বয়সের গর্ভধারণকে বিশেষজ্ঞরা “অ্যাডভান্সড ম্যাটারনাল এইজ” বা দেরিতে গর্ভধারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

দেরিতে গর্ভধারণ কতটা নিরাপদ?

ভারতের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নীলম সুরি জানিয়েছেন, ৩৫ বছরের পর গর্ভধারণকে সাধারণত দেরিতে গর্ভধারণ বলা হয়। এই বয়সে মা ও সন্তানের জন্য কিছু ঝুঁকি থাকলেও সচেতন পরিকল্পনা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে স্বাভাবিক ও সুস্থ গর্ভাবস্থা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, অনেক নারী ক্যারিয়ার, আর্থিক স্থিতি বা মানসিক প্রস্তুতির কারণে দেরিতে সন্তান নেন। এটি অস্বাভাবিক নয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিয়মিত চেকআপ গুরুত্বপূর্ণ।

সম্ভাব্য ঝুঁকি :

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়।

সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজন তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।

বয়সজনিত কারণে শিশুর ক্রোমোজোমজনিত সমস্যা যেমন ডাউন সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

প্রিম্যাচিউর বার্থ বা কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে।

তবে আধুনিক স্ক্রিনিং টেস্ট ও প্রি-নাটাল ডায়াগনস্টিকস এসব ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়েছে।

গর্ভধারণের আগে ও গর্ভাবস্থায় করণীয়:

প্রস্তুতি: চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে শারীরিক অবস্থা ও পূর্ববর্তী রোগের ইতিহাস যাচাই করুন।

নিয়মিত চেকআপ: গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে নিয়মিত পরীক্ষা করলে জটিলতা আগেভাগেই শনাক্ত করা যায়।

সুস্থ জীবনযাপন: সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা জরুরি।

মানসিক সুস্থতা: পরিবার ও প্রিয়জনদের সহায়তা, ইতিবাচক মনোভাব ও মানসিক শান্তি গর্ভাবস্থা সহজ করে।

সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তির ভূমিকা

বিখ্যাত তারকাদের দেরিতে মাতৃত্ব গ্রহণে আধুনিক চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন ফারাহ খান আইভিএফ বা আর্ট (ART) ব্যবহার করে মা হয়েছেন। প্রসিদ্ধ আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ডা. ইলা গুপ্তা বলেন, ৩৫ বছর পেরোনোর পর প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়। তাই অনেক নারী ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে বয়সজনিত ঝুঁকি এড়ানো যায়।

তিনি আরও বলেন, দেরিতে গর্ভধারণে বাড়তি যত্ন, চিকিৎসকের ঘন ঘন ফলোআপ এবং মানসিক প্রস্তুতি অপরিহার্য। এই ধরণের সিদ্ধান্ত সমাজে ইতিবাচক বার্তা দেয়। প্রত্যেক নারীর শরীর, হরমোন ও প্রজনন ক্ষমতা ভিন্ন, তাই গর্ভধারণের আগে নিজের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

দেরিতে গর্ভধারণ করা একেবারেই অসম্ভব নয়। সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মানসিক প্রস্তুতি থাকলে যেকোনো নারী সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন