

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


জেআইসি সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক ও বর্তমান মোট ১২ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু করার আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, শাইখ মাহদী ও অন্যান্যরা।
এদিন সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন—ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
অন্যদিকে, মামলার ১০ জন আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন—লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
পলাতক অন্য আসামিরা হলেন—শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।
এই মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন আগে নির্ধারিত ছিল ১৪ ডিসেম্বর। তবে সেদিন কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে আজকের তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগেই গত ৯ নভেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির অব্যাহতির আবেদন করেন তাদের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। বেআইনি আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুম—এই চারটি যুক্তি তুলে ধরে তিনি অব্যাহতি চান। পরে পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করে। ৭ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর জানান, কীভাবে জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে দীর্ঘ সময় গুম করে রাখা হতো এবং ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হতো। তিনি ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ২৬ জনের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। শুনানি শেষে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করা হয়।
এর আগে ২৩ নভেম্বর পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনার পক্ষে শুরুতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না লড়াইয়ের আগ্রহ দেখালেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি সরে দাঁড়ান। পরে মো. আমির হোসেনকে তার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা তিন কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরার জন্য জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয় আদালত। উল্লেখ্য, ৮ অক্টোবর এই মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন, যার পর আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মন্তব্য করুন

