

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশে ডায়াবেটিস এখন বড় জনস্বাস্থ্য-ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। দেশে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যাদের একটি বড় অংশ নারী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস শুধু ব্যক্তিগত ঝুঁকি নয়; এটি কর্মজীবী মানুষের উৎপাদনশীলতা পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বাড়ায় বাড়তি চাপ দেখা দিচ্ছে। অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট পদ নেই। দেশে মাত্র ৩৫০ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, আর প্রতি বছর নতুন চিকিৎসক যুক্ত হলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্যমতে, আক্রান্তের সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সপ্তম স্থানে। এ বাস্তবতায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ২০২৫, যার মূল বার্তা কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। দিবস উপলক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।
ACEDB–র সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দীন বলেন, শরীরে ইনসুলিন কমে গেলে বা ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে গিয়ে সেটি প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয় এ অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলা হয়।
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ১৩% ডায়াবেটিসে আক্রান্ত; শহরে এই হার ১৬–১৮%, আর গ্রামে ৮–১০%। গ্রামের হার দ্রুত বাড়ছে জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে। আক্রান্তদের প্রায় ৯০%–ই শহরের রোগী।
নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডায়াবেটিস একাধিক অঙ্গের ক্ষতি করে।
বিশেষজ্ঞ ডা. এমএ হালিম খানের তথ্য মতে, স্ট্রোকের ঝুঁকি ২ গুণ, কিডনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি ৫ গুণ,পা কেটে ফেলতে হতে পারে এমন অবস্থা (গ্যাংগ্রিন) ২০ গুণ, চোখের রেটিনার ক্ষতি ২৫ গুণ বাড়ে চোখ এবং হৃদরোগ ও কিডনি হাসপাতালে আসা রোগীদের বড় একটি অংশই ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় ভুগছেন।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খানের মতে, দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা, মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন সবকিছু মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। মানসিক চাপ গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, আর দীর্ঘমেয়াদে কর্মক্ষমতা কমে উৎপাদনশীলতা কমে যায়।
স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে দেশের প্রায় অর্ধেক ডায়াবেটিস রোগীই জানেন না তারা আক্রান্ত। জটিলতা না দেখা দিলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যান না। ফলে চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ে প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থায় মোট খরচের মাত্র ২০%। জটিল পর্যায়ে এই খরচ বেড়ে ৮০% পর্যন্ত পৌঁছে যায়।নারীদের মধ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল।
OGSB-এর তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রতি চারজন গর্ভবতী নারীর একজন এ সমস্যায় পড়েন, ১০ বছর আগে হার ছিল ১০%, এখন প্রায় ১৪%, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ৬৫% পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, এমন নারীদের সন্তানেরাও বেশি ঝুঁকিতে থাকে
উপজেলা পর্যায়ে থাকা ১,৩০০টির বেশি এনসিডি কর্নারে দুই ধরনের ডায়াবেটিসের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। রোগীরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকেও রিফিল নিতে পারেন। এই ওষুধ নিয়মিত পাওয়া গেলে নিয়ন্ত্রণ হার ৬০% পর্যন্ত উন্নত হয়। তবে সামগ্রিকভাবে এখনো দেশের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হার মাত্র ১৩%।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ফাস্টফুড ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, ধূমপান পরিহার, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো, চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ বা ইনসুলিন নিয়মিত গ্রহণ
সুশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাস, দিবস উপলক্ষে আজ-কাল যেসব কর্মসূচি
সকাল ৮:৩০: শাহবাগে বারডেম কার পার্কিং থেকে টেনিস ক্লাব পর্যন্ত রোড শো, সারাদিন: পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার বিতরণ
আগামীকাল (শনিবার): সকাল ১০টা: বারডেম মিলনায়তনে বিশেষজ্ঞ–রোগী আলোচনা।
দুপুর ১২টা: দিবসের মূল আলোচনা সভা: সকাল ৮টা–১১টা: বারডেম, বিআইএইচএস, এনএইচএন–এ বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা, সকাল ৮টা–৪টা: বারডেমে স্বেচ্ছায় রক্তদান।
সকাল ৯টা–৪টা: ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে কম খরচে হার্ট ক্যাম্প, যেখানে পরীক্ষাসহ চিকিৎসা পরামর্শ হ্রাসকৃত মূল্যে পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন
