শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিশ্ব হার্ট দিবস আজ

বছরে পৌনে এক লাখ শিশুর জন্ম হয় হৃদরোগ নিয়ে

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩৪ এএম
প্রতীকী ছবি
expand
প্রতীকী ছবি

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিশ্ব হার্ট দিবস পালন করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর এই দিনে হৃদরোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সুস্থ জীবনধারা অনুশীলনে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

২০২৫ সালের বিশ্ব হার্ট দিবসের প্রতিপাদ্য হলো—“Don’t Miss a Beat” বা বাংলায় “এক স্পন্দনও মিস করবে না”। এই বার্তার মাধ্যমে মানুষকে হৃদরোগের আগাম সতর্কতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের আহ্বানে সারা বিশ্বে পালিত এই দিবসটি বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর উদ্যোগে র‌্যালি, সেমিনার, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ক্যাম্প এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রতিদিন দুইশ শিশুর জন্ম হয় ত্রুটিযুক্ত হৃৎপিণ্ড নিয়ে। সেই হিসাবে বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় পৌনে এক লাখ। তাদের এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ২৫ হাজার শিশু তাদের প্রথম জন্মদিনের আগেই মারা যায়। বিশ্বজুড়ে নবজাতকের মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ হৃদরোগজনিত, আর বাংলাদেশে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি শিশুদের প্রায় ৩০ শতাংশের হৃদরোগ শনাক্ত হয়। ত্রুটিযুক্ত হৃৎপিণ্ড নিয়ে প্রতি বছর জন্ম নেওয়া বিপুল নবজাতকের মধ্যে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার চিকিৎসার আওতায় আসে। বাকিরা থেকে যায় চিকিৎসার বাইরে। দেশের শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তারা বলেন, দেশের শিশুস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে জন্মগত হৃদরোগ। দেশে প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার শিশুর জন্ম হয়, যার মধ্যে অন্তত ২০০ শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্মায়। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজারে। তার মধ্যে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার শিশু চিকিৎসার আওতায় এলেও ৯২ শতাংশ শিশু চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়। উন্নত বিশ্বের চেয়ে বাংলাদেশে হৃদরোগের ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুর হার প্রায় দেড়গুণ।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগের ত্রুটি নিয়ে জন্মানো ২৫ শতাংশ নবজাতকের পরিবারকে চিকিৎসার জন্য সম্পদ বেচতে হয়। জনসচেতনতার অভাব, বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধার সীমাবদ্ধতা এবং আর্থিক অক্ষমতার কারণে অনেক শিশু সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায় না। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা অপরিহার্য।

প্রখ্যাত হৃদরোগ সার্জন অধ্যাপক ডা. এস আর খান বলেন, ২০০০ সাল থেকে বিশ্ব হার্ট দিবস প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে। হৃদরোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়। এই প্রতিরোধ নীতির কার্যকারিতা একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝানো যেতে পারে। যেমন, কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে শিশুদের বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাত্র ২০ পয়সার সিরিন ট্যাবলেট দিয়েই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব, অথচ একটি হার্ট ভালভ পরিবর্তন করতে খরচ পড়তে পারে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ কারণে প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর ও সস্তা উপায়।

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা বলেন, বাংলাদেশে জন্মগত হৃদরোগের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন দুই শতাধিক শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্মাচ্ছে, বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭৪ হাজারে। এটি ডেঙ্গু বা কভিডের মতো একটি মহামারি রোগ। তবু জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে জন্মগত হৃদরোগ এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি। শিশুদের সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার জন্য অবকাঠামো এবং বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি নবজাতককে প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে জটিলতা দেখা দেওয়ার আগে চিকিৎসা দেওয়া যায়।

তিনি বলেন, গত দুই দশকে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞরা এখন রোগীদের শনাক্ত করে পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠাচ্ছেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত দুর্বলতা এখনো রয়ে গেছে। ২০১৩ সালের দিকে মাত্র ১২ থেকে ১৬ জন কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ এবং ছয় থেকে আটজন কার্ডিয়াক সার্জন কাজ করতেন। বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানো না হলে শিশু হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন