শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দাউদ: লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
দাদ হলে কি করবেন, কি করবেন না? দাদ রোগের চিকিৎসা
expand
দাদ হলে কি করবেন, কি করবেন না? দাদ রোগের চিকিৎসা

দাউদ বা রিংওয়ার্ম ত্বকের সবচেয়ে সাধারণ ছত্রাকজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে সাধারণ হলেও, এই রোগটি নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচুর ভুল ধারণা এবং বিভ্রান্তি রয়েছে।

এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো দাউদ সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ, নির্ভরযোগ্য এবং বৈজ্ঞানিক চিত্র তুলে ধরা, যাতে রোগীরা সঠিক তথ্য জেনে সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেন এবং ভুল চিকিৎসার বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন।

প্রথমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া যাক। দাউদ বা রিংওয়ার্মের নামের সাথে 'ওয়ার্ম' বা কৃমি শব্দটি থাকলেও এর সাথে কোনো প্রকার কৃমির সম্পর্ক নেই । এটি আসলে কৃমি দ্বারা সৃষ্ট কোনো রোগ নয় ।

এটি ‘ডার্মাটোফাইটস’ (Dermatophytes) নামক এক বিশেষ প্রকার ছত্রাক (Fungus) দ্বারা সৃষ্ট ত্বকের একটি সংক্রমণ । ত্বকের ওপর গোলাকার, চাকার মতো বা আংটির মতো দেখতে র‍্যাশ তৈরি হয় বলেই এর এমন নামকরণ হয়েছে । মেডিকেলের ভাষায় এই রোগটিকে বলা হয় 'টিনিয়া' (Tinea) ।

এই আলোচনাটি অত্যন্ত জরুরি, কারণ দাউদ একটি ছোঁয়াচে রোগ এবং খুব সহজেই এটি একজন থেকে অন্যজনে বা শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে ।

কিন্তু সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেকেই ফার্মেসি থেকে না জেনে বিভিন্ন স্টেরয়েডযুক্ত মলম কিনে ব্যবহার করেন। এর ফলে সাময়িকভাবে চুলকানি কমলেও সংক্রমণটি ভেতরে ভেতরে মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং পরবর্তীতে সাধারণ অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসাতেও সহজে সারতে চায় না ।

এই পোস্টে আমরা এই রোগের লক্ষণ, কারণ, সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অধ্যায় ১: দাউদের লক্ষণগুলো চেনার উপায়

শরীরের কোন অংশে দাউদ হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে এর লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত ছত্রাকের সংস্পর্শে আসার ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে । নির্ভুলভাবে লক্ষণগুলো চিনতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।

সাধারণ লক্ষণ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাউদ কিছু সাধারণ লক্ষণ দিয়ে শুরু হয়, যা সহজেই চোখে পড়ে:

  • আক্রান্ত স্থানে একটি লালচে, চুলকানিযুক্ত এবং গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির র‍্যাশ হিসেবে এর সূচনা হয় ।

  • এই র‍্যাশের সবচেয়ে স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য হলো এর কিনারাগুলো সামান্য উঁচু, স্পষ্ট এবং বেশি লালচে হয়, আর মাঝখানের অংশটুকু ধীরে ধীরে পরিষ্কার বা স্বাভাবিক রঙের হতে শুরু করে। এর ফলে এটি দেখতে অনেকটা আংটি বা রিং-এর মতো হয় ।

  • আক্রান্ত স্থানের ত্বক খসখসে, শুষ্ক বা আঁশের মতো হয়ে যায় এবং সেখান থেকে চামড়া উঠতে পারে ।

  • তীব্র চুলকানি দাউদের একটি অন্যতম প্রধান এবং কষ্টদায়ক উপসর্গ ।

তবে এখানে একটি বিষয় মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদিও "রিংওয়ার্ম" নামটি একটি গোলাকার আংটির মতো র‍্যাশের কথা বলে, এই বৈশিষ্ট্যটি সব ক্ষেত্রে উপস্থিত নাও থাকতে পারে। অনেক সময় দাউদ কেবল লালচে, আঁশযুক্ত দাগ হিসেবেও প্রকাশ পেতে পারে, যেখানে কোনো স্পষ্ট রিং বা কিনারা বোঝা যায় না ।

মাথার ত্বকে হলে এটি অনেক সময় সাধারণ খুশকির মতো আঁশযুক্ত দেখাতে পারে । এই ভিন্নতার কারণে অনেকেই দাউদকে সাধারণ র‍্যাশ বা একজিমা ভেবে ভুল করেন। ফলে সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়, যা সংক্রমণকে আরও ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়।

তাই, ত্বকে আঁশযুক্ত, লালচে ও চুলকানিযুক্ত যেকোনো র‍্যাশ দেখা দিলে, তা গোলাকার হোক বা না হোক, দাউদের সম্ভাবনা মাথায় রাখা উচিত।

শরীরের বিভিন্ন অংশে দাউদের ভিন্ন ভিন্ন রূপ

দাউদের মেডিক্যাল নামকরণ এবং এর নির্দিষ্ট লক্ষণগুলো শরীরের কোন অংশে সংক্রমণ হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় ।

  • শরীর বা ত্বক (Tinea Corporis): এটিই সবচেয়ে পরিচিত দাউদ, যা সাধারণত হাত, পা, বুক, পেট বা পিঠের উন্মুক্ত ত্বকে দেখা যায়। উপরে বর্ণিত সাধারণ লক্ষণগুলো, যেমন—গোলাকার র‍্যাশ, উঁচু কিনারা এবং মাঝখানে পরিষ্কার ত্বক, এখানে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ।

  • মাথার ত্বক (Tinea Capitis): এই ধরনের দাউদ সাধারণত শিশু এবং স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায় ।

    • লক্ষণ: মাথার ত্বকে এক বা একাধিক জায়গায় গোলাকার দাগ হয়ে সেখানকার চুল পড়ে যায় এবং টাকের মতো সৃষ্টি হয় । আক্রান্ত স্থানের চুলগুলো প্রায়ই গোড়া থেকে ভেঙে যায়, যার ফলে ছোট ছোট কালো বিন্দুর মতো দেখা যেতে পারে । ত্বক আঁশযুক্ত হয় এবং তীব্র চুলকানি থাকে।

    • গুরুতর অবস্থা (কেরিওন): যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি ‘কেরিওন’ (Kerion) নামক একটি গুরুতর ও বেদনাদায়ক অবস্থায় রূপ নিতে পারে। এক্ষেত্রে মাথার ত্বক মারাত্মকভাবে ফুলে ওঠে, পুঁজ জমে এবং স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয় ।

  • কুঁচকি (Tinea Cruris বা Jock Itch): এটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে যারা খেলাধুলা করেন, অতিরিক্ত ঘামেন বা আঁটসাঁট অন্তর্বাস পরেন ।

    • লক্ষণ: কুঁচকি, উরুর ভেতরের দিক এবং নিতম্বে লালচে, চুলকানিযুক্ত ও আঁশযুক্ত র‍্যাশ দেখা যায়। র‍্যাশটি প্রায়শই অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির হয় এবং এর কিনারাগুলো স্পষ্ট থাকে ।

  • পা (Tinea Pedis বা Athlete's Foot): এটি অত্যন্ত সাধারণ একটি ছত্রাক সংক্রমণ, যা প্রায়ই ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ থেকে ছড়ায় ।

    • লক্ষণ: পায়ের আঙুলের ফাঁকে, বিশেষ করে চতুর্থ ও পঞ্চম আঙুলের মাঝে ত্বক সাদাটে, ভেজা, ফাটাফাটা হয়ে যায়, চামড়া ওঠে এবং তীব্র চুলকানি বা জ্বালাপোড়া করে । গুরুতর ক্ষেত্রে পায়ে দুর্গন্ধ হতে পারে বা ছোট ছোট ফোসকাও পড়তে পারে ।

  • নখ (Tinea Unguium বা Onychomycosis):

    • লক্ষণ: নখের সংক্রমণ হলে নখ ধীরে ধীরে পুরু, বিবর্ণ (সাদা, হলুদ বা বাদামী), ভঙ্গুর এবং বিকৃত হয়ে যায় । সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে নখ তার নিচের মাংসপেশী থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে । পায়ের নখে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায় ।

  • দাড়িযুক্ত স্থান (Tinea Barbae):

    • লক্ষণ: পুরুষদের ক্ষেত্রে মুখমণ্ডলের দাড়িযুক্ত অংশে, যেমন—গাল, চিবুক এবং গলায় লাল, ফোলা ও চুলকানিযুক্ত দাগ দেখা যায় । আক্রান্ত স্থানের দাড়ি বা চুল পড়ে যেতে পারে এবং অনেক সময় পুঁজ ভর্তি ছোট ছোট ফোড়া হতে পারে ।

নিচের সারণিতে শরীরের বিভিন্ন অংশে দাউদের লক্ষণগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।

সারণি ১: শরীরের অবস্থান অনুযায়ী দাউদের লক্ষণ

শরীরের অংশ (Body Part) মেডিকেল নাম (Medical Term) মূল লক্ষণ (Key Symptoms)
শরীর (Body) Tinea Corporis

লাল, গোলাকার র‍্যাশ, উঁচু কিনারা, মাঝখানে পরিষ্কার, চুলকানি ।

মাথা (Scalp) Tinea Capitis

গোলাকার টাক, চুল ভেঙে যাওয়া (কালো বিন্দু), আঁশযুক্ত ত্বক, চুলকানি ।

কুঁচকি (Groin) Tinea Cruris

লালচে র‍্যাশ, চুলকানি, জ্বালাপোড়া, উরুর ভাঁজে ও নিতম্বে ছড়ায় ।

পা (Feet) Tinea Pedis

আঙুলের ফাঁকে ত্বক ফাটা, চামড়া ওঠা, চুলকানি, জ্বালাপোড়া, ফোসকা ।

নখ (Nails) Tinea Unguium

নখ পুরু, বিবর্ণ (হলুদ/বাদামী), ভঙ্গুর, বিকৃত হয়ে যাওয়া ।

দাড়ি (Beard) Tinea Barbae

লাল, ফোলা প্যাচ, চুলকানি, দাড়ি পড়ে যাওয়া, পুঁজ জমতে পারে ।

অধ্যায় ২: দাউদ কেন হয় এবং কীভাবে ছড়ায়?

দাউদ হওয়ার কারণ এবং এর বিস্তারের প্রক্রিয়াটি বুঝতে পারলে একে প্রতিরোধ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

সংক্রমণের মূল হোতা

দাউদ কোনো কৃমি বা ব্যাকটেরিয়া থেকে হয় না। এর জন্য দায়ী হলো এক ধরনের আণুবীক্ষণিক ছত্রাক, যাদেরকে ডার্মাটোফাইটস বলা হয়।

এদের মধ্যে প্রধান তিনটি গণ হলো—Trichophyton, Microsporum, এবং Epidermophyton । এই ছত্রাকগুলো আমাদের ত্বকের বাইরের স্তরে থাকা কেরাটিন (Keratin) নামক প্রোটিনকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বেঁচে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে। উষ্ণ ও আর্দ্র বা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ এদের বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত অনুকূল ।

ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম

দাউদ অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। এর ছত্রাক বা স্পোর (spore) খুব সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ছড়ানোর প্রধান মাধ্যমগুলো হলো:

  1. মানুষ থেকে মানুষে (Person-to-Person): এটিই দাউদ ছড়ানোর সবচেয়ে সাধারণ উপায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি ত্বক থেকে ত্বকের সংস্পর্শে এলে সুস্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারেন ।

  2. পশু-পাখি থেকে মানুষে (Animal-to-Person): অনেক পোষা প্রাণী, বিশেষ করে বিড়াল ও কুকুর (বাচ্চা বিড়াল ও কুকুর আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ), দাউদের ছত্রাক বহন করতে পারে । সংক্রমিত পশুকে আদর করলে বা তার সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরেও এই রোগ ছড়াতে পারে ।

  3. জড়বস্তু থেকে মানুষে (Object-to-Person): দাউদের ছত্রাক বা স্পোর বিভিন্ন জড়বস্তুতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত जीवित থাকতে পারে । আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত তোয়ালে, বিছানার চাদর, চিরুনি, পোশাক, টুপি বা অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারেন ।

  4. এছাড়া, জিমন্যাসিয়ামের মেঝে, লকার রুম, পাবলিক টয়লেট বা সুইমিং পুলের চারপাশের ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা থেকেও সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে ।

ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর

কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা ও অভ্যাস দাউদ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। যেমন:

  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল (যেমন—ডায়াবেটিস রোগী, কেমোথেরাপি গ্রহণকারী বা HIV আক্রান্ত ব্যক্তি), তাদের সংক্রমিত হওয়ার এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কম থাকে ।

  • যারা অতিরিক্ত ঘামেন, তাদের ত্বক উষ্ণ ও আর্দ্র থাকায় ছত্রাক জন্মানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় ।

  • আঁটসাঁট পোশাক বা সিনথেটিক কাপড়ের অন্তর্বাস পরলে ত্বকে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং ঘাম জমে ছত্রাকের বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।

  • উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বসবাস করলে দাউদের ঝুঁকি বাড়ে ।

  • জিমন্যাসিয়াম, পাবলিক শাওয়ার বা লকার রুমে খালি পায়ে হাঁটলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

  • কুস্তি, রাগবির মতো খেলাধুলা, যেখানে খেলোয়াড়দের মধ্যে সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ হয়, সেখানে দাউদ দ্রুত ছড়ায় ।

  • সংক্রমিত পোষা প্রাণীর সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা একটি বড় ঝুঁকির কারণ ।

অধ্যায় ৩: রোগ নির্ণয়: কখন এবং কীভাবে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেবেন

দাউদের মতো দেখতে অনেক চর্মরোগ রয়েছে, যেমন—একজিমা, সোরিয়াসিস বা সেবোরিক ডার্মাটাইটিস। তাই সঠিক চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরি।

প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ

একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সাধারণত আক্রান্ত স্থানের র‍্যাশের চেহারা, এর অবস্থান এবং রোগীর কাছ থেকে তার লক্ষণগুলোর বিস্তারিত বিবরণ শুনেই প্রাথমিকভাবে দাউদ সন্দেহ করতে পারেন ।

চিকিৎসক রোগীর জীবনযাত্রা, তিনি খেলাধুলা করেন কিনা, তার বাড়িতে পোষা প্রাণী আছে কিনা এবং পরিবারের অন্য কেউ একই সমস্যায় আক্রান্ত কিনা, সে সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারেন ।

নিশ্চিত হওয়ার পরীক্ষা

সন্দেহ নিশ্চিত করার জন্য এবং অন্যান্য রোগ থেকে দাউদকে আলাদা করার জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

  • KOH টেস্ট (Potassium Hydroxide Test): এটি দাউদ নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, দ্রুত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি পরীক্ষা ।

    • পদ্ধতি: এই পরীক্ষায়, একটি ভোঁতা স্ক্যালপেল বা স্লাইডের ধার দিয়ে আক্রান্ত স্থানের কিনারা থেকে আলতো করে কিছু চামড়ার নমুনা চেঁছে তুলে নেওয়া হয় । নখের ক্ষেত্রে, নখের নিচের অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় । এই নমুনাটি একটি কাঁচের স্লাইডে রেখে তার ওপর কয়েক ফোঁটা পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH) দ্রবণ যোগ করা হয় । KOH দ্রবণটি ত্বকের সাধারণ কোষগুলোকে গলিয়ে দেয়, কিন্তু ছত্রাকের কোষ প্রাচীরকে অক্ষত রাখে । এরপর মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করলে ছত্রাকের উপস্থিতি (লম্বা সুতার মতো হাইফি বা গোলাকার স্পোর) খুব সহজেই দেখা যায় ।

    • গুরুত্ব: এই পরীক্ষার মাধ্যমে খুব দ্রুত এবং নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় যে সংক্রমণটি ছত্রাকজনিত কিনা। দাউদের লক্ষণগুলো যেহেতু অন্যান্য অনেক চর্মরোগের মতো হতে পারে, তাই এই পরীক্ষাটি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটি નિર્ણায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি ভুল চিকিৎসা, বিশেষ করে স্টেরয়েড মলমের ব্যবহার, এড়াতে সাহায্য করে, যা ছত্রাক সংক্রমণকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখানো অত্যাবশ্যক?

সাধারণত ত্বকের ছোটখাটো দাউদ ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ওষুধে সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি দুই সপ্তাহ ধরে ফার্মেসি থেকে কেনা অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহারের পরেও সংক্রমণের কোনো উন্নতি না হয় বা এটি আরও বাড়তে থাকে ।

  • যদি সংক্রমণটি মাথার ত্বকে (Tinea Capitis) হয়। কারণ মাথার ত্বকের দাউদ সারানোর জন্য খাওয়ার ওষুধের প্রয়োজন হয়, যা শুধুমাত্র ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পাওয়া যায় ।

  • যদি সংক্রমণটি শরীরের একটি বিশাল অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বা এর তীব্রতা খুব বেশি হয় ।

  • যদি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোনো কারণে দুর্বল থাকে (যেমন—ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা) ।

  • যদি আক্রান্ত স্থানে পুঁজ জমে, তীব্র ব্যথা হয়, জ্বর আসে বা স্থানটি ফুলে যায়। এগুলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের (secondary bacterial infection) লক্ষণ হতে পারে, যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় ।

অধ্যায় ৪: দাউদের সঠিক ও কার্যকরী চিকিৎসা

দাউদের চিকিৎসা নির্ভর করে সংক্রমণের স্থান, তীব্রতা এবং ব্যাপ্তির ওপর। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে দাউদ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।

প্রাথমিক চিকিৎসা: ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) অ্যান্টিফাঙ্গাল

শরীরের ত্বকে হওয়া সাধারণ ও হালকা দাউদের ক্ষেত্রে, ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, লোশন বা স্প্রে পাওয়া যায়, সেগুলো খুবই কার্যকর ।

  • কার্যকরী উপাদান: এই ওষুধগুলোর মধ্যে সাধারণত Clotrimazole (Lotrimin), Miconazole (Desenex), Terbinafine (Lamisil), বা Tolnaftate (Tinactin) এর মতো উপাদান থাকে ।

  • ব্যবহারের নিয়ম: আক্রান্ত স্থানটি প্রথমে পরিষ্কার করে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর দিনে এক বা দুইবার (পণ্যের নির্দেশনা অনুযায়ী) ক্রিমের একটি পাতলা স্তর র‍্যাশের ওপর এবং তার চারপাশের প্রায় এক ইঞ্চি সুস্থ ত্বকেও লাগাতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, র‍্যাশ বা চুলকানি সেরে যাওয়ার পরেও ছত্রাককে সম্পূর্ণ নির্মূল করার জন্য আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ক্রিমটি ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে । তা না হলে সংক্রমণ পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে।

প্রেসক্রিপশন চিকিৎসা

যখন OTC ঔষধে কাজ হয় না, সংক্রমণ গুরুতর হয়, অথবা মাথার ত্বক বা নখে হয়, তখন অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী শক্তিশালী চিকিৎসার প্রয়োজন হয় ।

  • টপিক্যাল ঔষধ: চিকিৎসক আরও শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা লোশন প্রেসক্রাইব করতে পারেন, যেমন—Ketoconazole, Cicloprox ইত্যাদি ।

  • খাওয়ার ঔষধ (Oral Antifungals): মাথার ত্বকের দাউদ, নখের দাউদ বা শরীরের বিশাল অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাহ্যিক ব্যবহারে কাজ হয় না। এক্ষেত্রে খাওয়ার ঔষধ অপরিহার্য । চিকিৎসক সাধারণত Terbinafine, Itraconazole, Fluconazole বা Griseofulvin এর মতো ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেন । সংক্রমণের তীব্রতা অনুযায়ী এই ওষুধগুলো কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত খেতে হতে পারে ।

সবচেয়ে বড় ভুল: স্টেরয়েড মলমের ব্যবহার ও ‘টিনিয়া ইনকগনিটো’র বিপদ

দাউদের চিকিৎসায় সবচেয়ে মারাত্মক এবং সাধারণ ভুল হলো চুলকানি কমানোর জন্য না বুঝে স্টেরয়েডযুক্ত মলম ব্যবহার করা । ফার্মেসিতে এমন অনেক কম্বিনেশন ক্রিম পাওয়া যায় যেগুলোতে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানের সাথে শক্তিশালী স্টেরয়েড (যেমন—Betamethasone, Clobetasol) মেশানো থাকে। এই ক্রিমগুলো ব্যবহার করা দাউদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

এর পেছনের কারণটি বোঝা জরুরি। যখন কেউ দাউদের ওপর স্টেরয়েড ক্রিম লাগান, তখন স্টেরয়েডের প্রদাহ-রোধী (anti-inflammatory) ধর্মের কারণে ত্বকের লাল ভাব এবং চুলকানি খুব দ্রুত কমে যায় ।

এতে রোগীর মনে হয় যে তার রোগটি সেরে যাচ্ছে। কিন্তু পর্দার আড়ালে একটি বিপরীত এবং বিপজ্জনক প্রক্রিয়া চলতে থাকে। স্টেরয়েড ত্বকের স্থানীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমন করে দেয় ।

এর ফলে, ছত্রাক, যা আগে শরীরের প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছিল, তা এখন কোনো বাধা ছাড়াই দ্রুত বংশবৃদ্ধি করার এবং ত্বকের আরও গভীরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যায় ।

যখন রোগী স্টেরয়েড ব্যবহার বন্ধ করে দেন, তখন দমিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় হয় এবং ছত্রাকের এই বিশাল সমারোহের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়, যার ফলে সংক্রমণটি আগের চেয়েও ভয়াবহ রূপে ফিরে আসে।

এই পর্যায়ে দাউদের ক্লাসিক গোলাকার চেহারাটি বদলে গিয়ে একটি অস্বাভাবিক রূপ নেয়—র‍্যাশটি তার স্পষ্ট কিনারা হারিয়ে ফেলে, অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ে এবং দেখতে অনেকটা একজিমা বা অন্য কোনো জটিল চর্মরোগের মতো লাগে।

দাউদের এই পরিবর্তিত রূপটিকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় ‘টিনিয়া ইনকগনিটো’ (Tinea Incognito), কারণ স্টেরয়েডের প্রলেপে এর আসল পরিচয় ঢাকা পড়ে যায় ।

রোগী তখন আরও বেশি চুলকানির কারণে পুনরায় স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করেন এবং এই দুষ্টচক্র চলতেই থাকে, যা একটি সাধারণ দাউদকে দীর্ঘস্থায়ী এবং চিকিৎসা-প্রতিরোধী (treatment-resistant) সমস্যায় পরিণত করে।

সহায়ক ঘরোয়া পরিচর্যা

কিছু ঘরোয়া উপাদান চিকিৎসার পাশাপাশি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, যেমন—টি ট্রি অয়েল, নারকেল তেল বা অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, যেগুলোর হালকা অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ রয়েছে ।

তবে এগুলোকে কখনোই মূল চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে ভাবা উচিত নয়। রসুন, নিম বা হলুদের মতো উপাদানের কথাও শোনা যায় , কিন্তু এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে पर्याप्त বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

অধ্যায় ৫: প্রতিরোধ ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি

দাউদের ক্ষেত্রে একটি কথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য—প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা। কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি এবং সতর্কতা মেনে চললে দাউদের সংক্রমণ থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে অনেকাংশে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি

  • ত্বক সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। গোসলের পর বা ঘামলে তোয়ালে দিয়ে শরীর, বিশেষ করে ত্বকের ভাঁজযুক্ত স্থান (যেমন—কুঁচকি, বগল, আঙুলের ফাঁক) ভালোভাবে মুছে শুকিয়ে নিন ।

  • প্রতিদিন পরিষ্কার ও শুকনো মোজা এবং অন্তর্বাস পরুন। একই মোজা বা অন্তর্বাস একাধিক দিন পরা থেকে বিরত থাকুন ।

  • আঁটসাঁট পোশাকের পরিবর্তে ঢিলেঢালা, সুতির পোশাক পরুন, যা ত্বকে বাতাস চলাচলে সাহায্য করে এবং ঘাম জমতে দেয় না ।

  • নিজের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র—যেমন তোয়ালে, চিরুনি, পোশাক, বিছানার চাদর—অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না এবং অন্যেরটাও ব্যবহার করবেন না ।

  • হাতের এবং পায়ের নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখুন, যাতে নখের নিচে ছত্রাক জমতে না পারে ।

পরিবেশগত সতর্কতা

  • জিমন্যাসিয়াম, লকার রুম, সুইমিং পুল বা পাবলিক শাওয়ারের মতো সর্বজনীন ভেজা জায়গায় খালি পায়ে হাঁটবেন না। সবসময় স্যান্ডেল বা ওয়াটারপ্রুফ জুতো ব্যবহার করুন ।

  • পরিবারের কেউ দাউদে আক্রান্ত হলে তার ব্যবহৃত বিছানার চাদর, তোয়ালে ও পোশাক প্রতিদিন গরম পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, যাতে ছত্রাক নির্মূল হয় ।

  • বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে কার্পেট এবং যেসব স্থানে প্রাণীটি বেশি সময় কাটায়, সেসব জায়গা নিয়মিত ভ্যাকুয়াম করুন এবং প্রয়োজনে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন ।

পোষা প্রাণীর যত্ন

  • আপনার পোষা প্রাণীর শরীরের কোনো স্থানে গোলাকার দাগ হয়ে পশম উঠে গেলে বা ত্বকে কোনো অস্বাভাবিক র‍্যাশ দেখা দিলে দেরি না করে পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান ।

  • সংক্রমিত পোষা প্রাণীর পরিচর্যা করার সময় হাতে গ্লাভস পরুন এবং কাজ শেষে সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন ।

  • চিকিৎসা চলাকালীন সংক্রমিত পোষা প্রাণীটিকে বাড়ির অন্য প্রাণী এবং শিশুদের থেকে সাময়িকভাবে আলাদা রাখুন, যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে ।

নিচের সারণিটি আপনাকে দাউদ প্রতিরোধে কী কী করণীয় এবং বর্জনীয়, তা এক নজরে বুঝতে সাহায্য করবে।

সারণি ২: দাউদ প্রতিরোধে করণীয় ও বর্জনীয়

করণীয় (Do's) বর্জনীয় (Don'ts)

ত্বক পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন ।

ব্যক্তিগত জিনিস (তোয়ালে, চিরুনি) শেয়ার করবেন না ।

ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন ।

আঁটসাঁট, সিনথেটিক পোশাক এড়িয়ে চলুন ।

পাবলিক শাওয়ারে স্যান্ডেল ব্যবহার করুন ।

আক্রান্ত স্থান চুলকাবেন না বা ঘষবেন না ।

পোষা প্রাণীকে স্পর্শ করার পর হাত ধুয়ে ফেলুন ।

না জেনে বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড মলম ব্যবহার করবেন না ।

প্রতিদিন পরিষ্কার মোজা ও অন্তর্বাস পরুন ।

ভেজা কাপড় পরে দীর্ঘক্ষণ থাকবেন না।

দাউদমুক্ত জীবন

পরিশেষে, দাউদ বা রিংওয়ার্ম কৃমি দ্বারা সৃষ্ট কোনো রোগ নয়, এটি একটি সাধারণ ছত্রাক সংক্রমণ। এটি ছোঁয়াচে এবং অস্বস্তিকর হলেও, সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে একে সহজেই নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময় করা সম্ভব।

এই আলোচনার মূল বার্তা হলো—ত্বকে দাউদের মতো লক্ষণ দেখা দিলে তাকে অবহেলা করবেন না বা নিজে থেকে ভুল চিকিৎসা শুরু করবেন না। বিশেষ করে, চুলকানির জন্য যেকোনো স্টেরয়েডযুক্ত মলম ব্যবহার থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকুন, কারণ এটি সাময়িক আরাম দিলেও সংক্রমণকে আরও জটিল ও -প্রতিরোধী করে তোলে।

একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, সঠিক অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসার কোর্স সম্পূর্ণ করুন এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। এই সহজ পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলেই দাউদ থেকে পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করা এবং একটি সুস্থ, সংক্রমণমুক্ত জীবনযাপন করা সম্ভব।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

প্রশ্ন ১: দাউদ কি আসলেই কৃমি দ্বারা হয়? উত্তর: না, এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ ভুল ধারণা। দাউদ বা রিংওয়ার্ম কোনো কৃমি দ্বারা সৃষ্ট রোগ নয়। এটি ‘ডার্মাটোফাইটস’ নামক এক ধরনের ছত্রাক (Fungus) দ্বারা সৃষ্ট ত্বকের সংক্রমণ । এর গোলাকার বা আংটির মতো চেহারার কারণে এর এমন নামকরণ হয়েছে ।

প্রশ্ন ২: দাউদ কি নিজে থেকে সেরে যায়? উত্তর: খুব বিরল ক্ষেত্রে এটি নিজে থেকে সেরে যেতে পারে, তবে সাধারণত এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা না করালে এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, পরিবারের অন্য সদস্যদের সংক্রমিত করতে পারে এবং পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি থাকে ।

প্রশ্ন ৩: দাউদ এবং একজিমার মধ্যে পার্থক্য কী? উত্তর: দাউদ একটি ছোঁয়াচে ছত্রাক সংক্রমণ, যা সাধারণত গোলাকার ও স্পষ্ট কিনারাযুক্ত র‍্যাশ তৈরি করে। অন্যদিকে, একজিমা একটি অ-ছোঁয়াচে ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা, যার র‍্যাশের কোনো নির্দিষ্ট আকার থাকে না এবং এটি ছত্রাকের কারণে হয় না । সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

প্রশ্ন ৪: দাউদের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করা যাবে কি? উত্তর: না, একেবারেই উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দাউদের ওপর স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। স্টেরয়েড সাময়িকভাবে চুলকানি ও লাল ভাব কমালেও এটি ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে ছত্রাকের সংক্রমণ আরও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যায় ।

প্রশ্ন ৫: চিকিৎসা শুরু করার কতক্ষণ পর দাউদ আর ছোঁয়াচে থাকে না? উত্তর: সাধারণত, সঠিক অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা (ক্রিম বা খাওয়ার ঔষধ) শুরু করার ৪৮ ঘণ্টা পর থেকে দাউদ আর ছোঁয়াচে থাকে না । তবে, সংক্রমণ পুরোপুরি নির্মূল করতে এবং পুনরায় হওয়া রোধ করতে চিকিৎসার সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা অপরিহার্য।

প্রশ্ন ৬: পোষা প্রাণী থেকে কি দাউদ হতে পারে? উত্তর: হ্যাঁ, পোষা প্রাণী, বিশেষ করে বিড়াল ও কুকুর, দাউদের একটি সাধারণ উৎস। সংক্রমিত প্রাণীর সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরেও এই রোগ ছড়াতে পারে। তাই পোষা প্রাণীর ত্বকে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সংক্রমিত প্রাণীকে স্পর্শ করার পর ভালোভাবে হাত ধোয়া উচিত ।

তথ্যসূত্র (References):

Centers for Disease Control and Prevention (CDC). (2021). Fungal Diseases: Ringworm.

Mayo Clinic. (2022). Ringworm (body) - Symptoms and causes.

World Health Organization (WHO). Dermatophytosis (tinea).

American Academy of Dermatology (AAD). How to treat ringworm.

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন