

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বিশ্বব্যাপী বৃহৎ জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে আন্তর্জাতিক করপোরেশনগুলো। এটি অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ রাখতে বেঁধে দেয়া সীমার চেয়ে ১১ গুণ বেশি কার্বন নিঃসরণ হবে। আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম কার্বনবোমস-এ সোমবার (২৭ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছে চারটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা — ইক্লাইরসিস, ডাটা ফর গুড, লিঙ্গ এবং রিক্লেইম ফাইন্যান্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ১৭৬টি বৃহৎ জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে “কার্বন বোমা।” এর ফলে, দুই বছর আগে প্রকাশিত তালিকার পর এখন পর্যন্ত মোট ৬০১টি কার্বন বোমা প্রকল্প শনাক্ত করা হলো।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) ২০২১ সালে সতর্ক করেছিল, নতুন তেল, গ্যাস ও কয়লা প্রকল্প শুরু হলে তা নেট-জিরো লক্ষ্য অর্জনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই সতর্কতার পরও জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন খাতে নতুন করে ২,৩০০টির বেশি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প ২০৫০ সালের মধ্যে চালু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অধিক কার্বন নিঃসরণকারী নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পগুলো টোটাল ইঞ্জিনিয়ার্স, চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল করপোরেশন (সিএনওওসি), ইনি, ব্রিটিশ প্রেট্রোলিয়াম ও শেল এ কয়েকটি করপোরেশনের দ্বারা বেশি পরিচালিত হচ্ছে। ‘কার্বন বোমা’ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও সৌদি আরব।
এছাড়া, বিশ্বের ৬৫টি বৃহত্তম ব্যাংক ২০২১ সাল থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর পেছনে ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যদিও এসব ব্যাংক জলবায়ু লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ইউরোপজুড়ে জীবাশ্ম খাতে বিনিয়োগে সবচেয়ে সক্রিয় ব্যাংক হিসেবে উঠে এসেছে বার্কলেস এর নাম। ব্যাংকটি জীবাশ্ম জ্বালানি সম্প্রসারণে ইনি, এক্সনমবিল, টোটাল ইঞ্জিনিয়ার্সসহ ৬২টি কোম্পানিকে ইতোমধ্যে ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।
ডাটা ফর গুড এর পরিচালক লু ওয়েলগ্রিন বলেন, “এই তথ্য প্রমাণ করে যে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প ও তাদের অর্থদাতারা প্যারিস চুক্তিকে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে।” তার মতে, জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণ অব্যাহত থাকলে অপরিবর্তনীয় জলবায়ু বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।
প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সাল থেকে তেল ও গ্যাস খাতের “কার্বন বোমা” প্রকল্পগুলো থেকে ইতোমধ্যে ৫৪ গিগাটন কার্বন নির্গমন ঘটেছে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৩০টি নতুন প্রকল্প চালু হয়েছে, অথচ এ সময়ের মধ্যে মাত্র ১২টি প্রকল্প বাতিল হয়েছে।
রিক্লেইম ফাইন্যান্স এর গবেষক লুই-ম্যাক্সেন্স ডেলাপোর্টে বলেন, “বড় ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে অর্থ ঢেলে জলবায়ু সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করছে। এই অর্থ এখন টেকসই জ্বালানি সমাধানে বিনিয়োগ করা জরুরি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব সরকার ও ব্যাংক এখনো দূষণকারী শিল্পে সহায়তা দিচ্ছে, তারা শিগগিরই আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আইনি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এক মতামতে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে সরকারি ভর্তুকিকে জলবায়ু ক্ষতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে। কার্বন বোমস এই প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি বিশ্বের সব বড় জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেগুলো তাদের আয়ুষ্কালে ১ গিগাটনের বেশি কার্বন নির্গমন করবে।
মন্তব্য করুন
