বৃহস্পতিবার
০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব ঘোচাতে চায় ৯ দল

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৬ এএম
expand
বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব ঘোচাতে চায় ৯ দল

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে একযোগে উদ্যোগ নিয়েছে নয়টি রাজনৈতিক দল। তাদের মূল লক্ষ্য—গণভোট ও সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব দূর করা।

এই লক্ষ্যে ৯ দল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতসহ ইসলামপন্থি ও বাম ধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বসবে। আলোচনায় তারা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে সামনে রাখবে—গণভোট ও নির্বাচন একই দিনে হবে কি না, গণভোটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সংসদ অধিবেশন একই সঙ্গে সাংবিধানিক পরিষদ হিসেবে কাজ করবে কি না, এবং গণভোটে পাস হওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে কি না।

যদিও এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত মতবিরোধ রয়ে গেছে, দলগুলো মোটামুটি একমত যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজন করাই বাস্তবসম্মত হবে।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিল নয়টি রাজনৈতিক দল—গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয় দল (জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ।

বিএনপি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, রাজনৈতিক সংলাপ গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক। আমরা সব ধরনের আলোচনাকে স্বাগত জানাই এবং সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

অন্যদিকে, জামায়াতও সমঝোতার পথে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের কাঠামো নিয়ে আলোচনার জন্য দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে রয়েছেন নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ এই উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে সন্দিহান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, দলগুলো ঐক্য চায়, এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন ভিন্ন দল নিজেদের নীতিগত অবস্থান ও স্বার্থে আপস করতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা আছে। একদলীয় ঐক্য গণতন্ত্রের বৈচিত্র্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

গত ১৭ অক্টোবর বিভিন্ন দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও, এর বাস্তবায়ন নিয়ে মতানৈক্য থেকেই যায়। পরে ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, নতুন সংসদ তার প্রথম ২৭০ দিন সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে এবং গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো এ সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

তবে বিএনপি অভিযোগ করেছে, কমিশনের চূড়ান্ত প্রস্তাবে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষত, তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। বিএনপির দাবি—গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনেই হওয়া উচিত এবং সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সংযোজন বাধ্যতামূলক। অন্যদিকে, জামায়াত প্রথমে নভেম্বরে গণভোটের দাবি তুললেও এখন নির্বাচনের আগে যেকোনো সময় গণভোটে রাজি আছে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দলগুলোর মতবিরোধ দূর করে সাত দিনের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, দলগুলো নিজেরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্তে এগোবে। এই পরিস্থিতিতেই ৯ দল আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের শহিদুল্লাহ কায়সারসহ অন্যান্য নেতারা।

বৈঠক শেষে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, সরকার সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছে। আমরা সেই সময়ের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে চাই।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রতিটি দল নিজের ফর্মুলা দিচ্ছে—ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। আমরা বিতর্ক নয়, সমাধান চাই।

এনসিপির আখতার হোসেনের বলেন, সংস্কার-সংকটের সমাধান শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে। সরকারকে সাহসী ভূমিকা নিতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান জানিয়েছেন, আমরা বিএনপি-জামায়াতসহ সব ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা করছি।

সাইফুল হক বলেন, ঐকমত্য কমিশন ও সরকার দুপক্ষই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এখন আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হচ্ছে সংকট সমাধানে।

সূত্র, কালবেলা

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন