

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতিতে খুলনা বিভাগ বরাবরই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দলটি এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন, আন্দোলন ও জনসম্পৃক্ততার দিক থেকে প্রভাবশালী অবস্থানে ছিল।
তবে গত কয়েকটি নির্বাচনে প্রশাসনিক প্রভাব ও রাতের ভোটে আওয়ামী লীগ আসন দখলে রাখলেও মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা এখন ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে।
গত বছরের ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর খুলনা বিভাগের রাজনৈতিক উত্তাপ দ্রুত বেড়েছে। দীর্ঘ সময় পর ভোটের পরিবেশ ফিরতে পারে—এমন প্রত্যাশায় নতুন করে আশাবাদী স্থানীয় জনগণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি যদি এবারও সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে জামায়াত চমক দেখাতে পারে। আ.লীগ মাঠে না থাকায় বড় শক্তি হিসেবে মাঠের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে জামায়াত।
‘২৪ সালের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিএনপি নতুন কাঠামোয় পুনর্গঠন শুরু করলেও বিভিন্ন জেলায় কোন্দল, চাঁদাবাজি ও মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ দলে ভাঙন সৃষ্টি করেছে। মাঠপর্যায়ের নেতাদের মতে, এই বিভক্তি না কাটাতে পারলে সংগঠনের প্রভাব হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে। অন্যদিকে জামায়াত বেশ চাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি, যেখানে জামায়াত ইতোমধ্যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো প্রার্থী নির্ধারণ ও ঐক্য ফিরিয়ে আনতে পারলে বিএনপি খুলনা বিভাগে ভালো ফল করতে পারে।
জেলা ভিত্তিক চিত্র
মেহেরপুর (২ আসন): ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপি-প্রবণ জেলা, দুটি আসনেই তাদের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা, তবে জামায়াতও বেশ শক্ত অবস্থানে।
কুষ্টিয়া (৪ আসন): কুষ্টিয়া-১, ৩ ও ৪ এ বিএনপি শক্ত অবস্থানে, তবে কুষ্টিয়া-২ তে জামায়াতের প্রভাব বাড়ছে। আমির হামজাকে প্রার্থী করা সে আসনটি নিশ্চিত জামায়াত পাবে।
চুয়াডাঙ্গা (২ আসন): চুয়াডাঙ্গা-১ এ বিএনপি এগিয়ে, চুয়াডাঙ্গা-২ তে জামায়াতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে হাড্ডাহাড্ডি। তবে এখানে একটি জামায়াত ও একটি বিএনপির ঘরে যাবে।
ঝিনাইদহ (৪ আসন): ১, ২ ও ৪ নম্বর আসনে বিএনপি ভালো অবস্থানে, তবে ৩ নম্বরে জামায়াতের প্রার্থী জনপ্রিয়তা বেশি।
যশোর (৬ আসন): যশোরের পাঁচটি আসনে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও ২ নম্বর আসনে জামায়াতের উত্থান স্পষ্ট।
মাগুরা (২ আসন): উভয় আসনেই বিএনপি এগিয়ে; প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুলনামূলকভাবে কম।
নড়াইল (২ আসন): নড়াইল-১ এ বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে, কিন্তু নড়াইল-২ এ জামায়াতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হবে হাড্ডাহাড্ডি।
বাগেরহাট (৩ আসন): বাগেরহাট-১ ও ২ এ বিএনপি এগিয়ে, তবে ৩ নম্বর আসনে জামায়াতের অভিজ্ঞ নেতা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
খুলনা (৬ আসন): খুলনা-১ থেকে ৪ পর্যন্ত বিএনপি এগিয়ে থাকলেও ৫ ও ৬ এ জামায়াত এগিয়ে।
সাতক্ষীরা (৪ আসন): জামায়াতের ঐতিহ্যবাহী আধিপত্য থাকলেও ৩ নম্বর আসনে তাদের অবস্থান কিছুটা দুর্বল। তবে এবার সাতক্ষীরার ৪ আসনে জিততে মরিয়া জামায়াত।
খুলনা বিভাগের রাজনীতি বর্তমানে এক সন্ধিক্ষণে—একদিকে বিএনপির পুনরুত্থানের সম্ভাবনা, অন্যদিকে জামায়াতের টেকসই অগ্রগতি। এই দুই শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নির্ধারণ করবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নির্বাচনী ফলাফল কোন দিকে যাবে।
মন্তব্য করুন
