

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রাজধানীর দক্ষিণ অংশের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ঢাকা-৫ আসন এখন নির্বাচনী আমেজে সরগরম। বিএনপিতে যখন মনোয়ন নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই চরম আকার ধারণ করেছেন তখন জামায়াত রয়েছে সুযোগের অপেক্ষায়।
যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা নিয়ে গঠিত এ আসনের অলিগলিতে টাঙানো হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন।
বিএনপির তিন মুখ—সালাহউদ্দিন, নবীউল্লাহ ও নয়ন: স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, দলটির মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী এবং ব্যবসায়ী নেতা জাকির হোসেন নয়ন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
নবীউল্লাহ নবীকে নিয়মিত উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, “অন্য প্রার্থীরাও মাঠে আসুক—প্রতিযোগিতা থাকলেই ভোটের আনন্দ পাওয়া যায়। জনগণ এবার পরিবর্তন চায়।”
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ অসুস্থ থাকায় তার রাজনৈতিক কার্যক্রম সীমিত। বিএনপির অভ্যন্তরীণ নীতিমালা অনুযায়ী “এক পরিবার এক প্রার্থী” নীতির কারণে এ আসনে তার পরিবর্তে ছেলেকে অন্য আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তবে তার অনুসারীরা বলছেন, তিনি এখনো জনপ্রিয় ও অভিজ্ঞ নেতা।
জাকির হোসেন নয়ন তুলনামূলক নতুন মুখ, দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। ফলে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সালাহউদ্দিন ও নবীউল্লাহ নবীর মধ্যেই সীমিত থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।
জামায়াতের প্রচারে জুলাই স্পিরিট
অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মোহাম্মদ কামাল হোসেনও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তার ব্যানার ও পোস্টার ছড়িয়ে পড়েছে যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ ও মাতুয়াইল এলাকায়।
তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের দাবি বাস্তবায়নই আমার প্রথম দায়িত্ব। জনগণ এখন সুশাসন ও মানবিক নেতৃত্ব চায়।”
কামাল হোসেন দাবি করেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের অভাবে ঢাকা-৫ পিছিয়ে আছে। মাদক ও দখলবাজি এ অঞ্চলের বড় সমস্যা। তিনি বলেন, “আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, তারা এখন এমন নেতৃত্ব চায় যে তাদের পাশে থাকবে।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকেও সাবেক কাউন্সিলর হাজি মো. ইবরাহীম নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকেও একজন প্রার্থী নামতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে, তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মো. রাশেদুল ইসলাম (রাশেদ) এর কিছু পোস্টার দেখা গেছে।
ভোটারদের প্রত্যাশা: যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ ও শনির আখড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, এ অঞ্চলে এখনো উন্নয়ন বঞ্চনা রয়ে গেছে। সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরবস্থা, জলাবদ্ধতা ও মশার উপদ্রব তাদের নিত্যসঙ্গী।
রায়েরবাগের এক দোকানি বলেন, “আমরা রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু শান্তিতে থাকতে চাই। যে শান্তি দেবে, তাকেই ভোট দেব।”
ঢাকা-৫ আসনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে প্রতিবারই ত্রিমুখী লড়াই দেখা গেছে। ১৯৯১ সালে এখানে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেন, পরে উপনির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বিজয়ী হন। ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত হাবিবুর রহমান মোল্লা টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মশিউর রহমান মোল্লা সজল বিজয়ী হন।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-৫ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৫ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৩, নারী ২ লাখ ৪৬ হাজার ১৪৬ এবং হিজড়া ভোটার তিনজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে এই আসনে রাজনৈতিক তৎপরতা দিন দিন বাড়ছে।
মন্তব্য করুন