শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাকসুর ব্যালট ছাপানোর সময় ৫ ধাপে নিরাপত্তা

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২০ এএম
expand
ডাকসুর ব্যালট ছাপানোর সময় ৫ ধাপে নিরাপত্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে ব্যালট পেপার ছাপানোর স্থান ও নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ।

গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল বেশিরভাগ পদে জয়ী হলেও ছাত্রদল, বাম সংগঠন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের দিন থেকেই নানা অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ করে আসছেন। তাদের অন্যতম অভিযোগ—‘ব্যালট পেপার নীলক্ষেতের ছাপাখানায় অরক্ষিতভাবে ছাপানো হয়েছে’।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথমে এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে একটি অংশের ব্যালট নীলক্ষেত এলাকায় ছাপানো হয়েছিল। প্রথমে ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপানোর কথা বলা হলেও প্রশাসনের দাবি, তাদের অর্ডারই ছিল ৮৮ হাজার কাগজের। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ব্যালট যেখানেই ছাপানো হোক, পাঁচ ধাপের নিরাপত্তা প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় কারচুপির সুযোগ ছিল না।

এমআরএম ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সূত্রমতে, ব্যালট পেপার তৈরির কাজ ধাপে ধাপে হয়—প্রথমে ছাপানো, পরে সঠিক মাপে কাটিং, বিশেষ সিকিউরিটি কোড সংযোজন, মেশিনে প্রি-স্ক্যান এবং শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সিল ও স্বাক্ষর। এভাবে তৈরি ব্যালট নকল করা সম্ভব নয়। ২২ রিম কাগজে মোট ৮৮ হাজার ব্যালট প্রস্তুত হয়। এক কর্মচারীর ভুল তথ্যের কারণে ৯৬ হাজার বলে সংবাদে আসে।

গণমাধ্যমকে এমআরএন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কর্মচারী ফেরদৌস ওয়াহিদ জানিয়েছেন, কাটিং মেশিনে সমস্যা হওয়ায় সময়মতো সরবরাহের জন্য নীলক্ষেতে কাজ করতে হয়েছে। “আমাদের ৮৬ হাজারের কিছু বেশি ব্যালট দরকার ছিল, তাই ২২ রিম কাগজে ছাপাই। ভুলক্রমে জালাল প্রেস ৯৬ হাজার বলেছিল,” তিনি বলেন।

ডাকসুর মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪। প্রত্যেক ভোটারের জন্য ছয়টি করে ব্যালট ধরলে প্রয়োজন হয় প্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার ব্যালট। আনজা করপোরেশন ও এমআরএম ইঞ্জিনিয়ারিং মিলে এই ব্যালট সরবরাহ করেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল ও ছাত্র সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে—ব্যালট কোথায় ছাপানো হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি, ব্যবহৃত ব্যালটে ক্রমিক নম্বর ছিল না, ভোটার উপস্থিতি ছাড়াই ভোটার তালিকায় স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে, নকল ব্যালট উদ্ধার হয়েছে, ওএমআর মেশিনে কারচুপির অভিযোগ আছে এবং নির্বাচনের আগের রাতে এজেন্ট তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলও সংবাদ সম্মেলনে অনুরূপ অভিযোগ তোলে—ভোটারদের আগে থেকেই নির্দিষ্ট প্যানেলের ব্যালট দেওয়া, তালিকায় আগাম স্বাক্ষর এবং ব্যালট সংখ্যা প্রকাশ না করা।

গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক ফররুখ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্বাচন–পরবর্তী সব আবেদন ও অভিযোগ খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আইনজীবীদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আবেদন আলাদাভাবে জবাব দেওয়া হবে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ ও ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা অত্যন্ত গোপনীয় নথি। এগুলো পাবলিক ডকুমেন্ট নয় এবং নির্বাচন বিধিতেও এর কপি প্রদানের নিয়ম নেই। তবে কোনো প্রার্থী যদি নির্দিষ্ট সময় বা ঘটনার ফুটেজ দেখতে চান, নিয়ম মেনে আবেদন করলে মনোনীত বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত স্থানে তা দেখা যাবে।

ব্যালট পেপার মুদ্রণের প্রতিষ্ঠান বা ভেন্ডরের পরিচয় সচেতনভাবে গোপন রাখা হয়েছে বলেও প্রশাসন জানায়। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি ধাপে কঠোর তদারকি ছিল; মুদ্রিত ব্যালট ওএমআর মেশিনে স্ক্যান করে মেশিন রিডেবিলিটি নিশ্চিত করার পর সিলগালা প্যাকেটে সরবরাহ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ভোটের আগে খালি ব্যালট বাক্স পরীক্ষা ও সিলগালা করা হয় এবং বণ্টিত ব্যালট পেপার ও প্রদত্ত ভোটের মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্য ছিল না। “কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নীলক্ষেতে ব্যালট পেপার ছাপানোর বিষয়ে কমিশন ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।

গঠনতন্ত্রের ধারা অনুসারে ১৫টি অভিযোগের লিখিত জবাব দেওয়া হয়েছে, বাকি অভিযোগগুলোরও জবাব দেওয়া হবে। কমিশন বলেছে, ব্যালট সংক্রান্ত অভিযোগ তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং শিগগির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন