বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইবিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি, আহত শিক্ষার্থী

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২০ পিএম
ছবি সংগৃহীত
expand
ছবি সংগৃহীত

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের একটি মেসে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে তারা।

আহতরা হলেন— ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব (২০২১-২২), সিনিয়র শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম রোহান (২০১৯-২০) ও এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এন্ড জিওগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন (২০২১-২২)। এছাড়া মেস মালিকও আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জুনিয়র শিক্ষার্থী সজিব গুরুতর আহত হয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

জানা যায়, আহত সজিব ও রোহান সহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করে। মেসের নিয়ম অনুযায়ী মাসে ৪৫টি মিল (খাবারের হিসাব) ধার্য করা ছিল।

কিন্তু গত মাসে পূজার ছুটিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যাওয়ায় নির্ধারিত মিলের সংখ্যা ৪৫টা থেকে কমিয়ে ৪০ করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।

এতে মেসেঞ্জারে পোলে ৫ জন সদস্য ৪০টি করার পক্ষে মতামত দিলেও জুনিয়র পেটানো রোহান দ্বিমত জানায়। সে ৪৫টা মিলই ধার্য রাখার পক্ষে অবস্থান নিলে রোহান ও সজীবের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।

পরে সজিব আর নয়ন উভয়ে মিলে রোহানের সাথে কথা বলতে রোহানের রুমে যায়। এ সময় উভয়ের মধ্যে আবারও কথা-কাটাকাটি হলে ধস্তাধস্তি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সজীব ইসলাম গুরুতর আহত হয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উভয় পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা ও ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।

চিকিৎসাধীন সজীব ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার রাতে মেসে মিলের বিষয়ে কথা বলার সময় রোহান ভাই হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।

আমি প্রতিবাদ করলে তিনি আমার মুখে-মাথায় ঘুসি মারেন এবং হাত মুচড়ে ধরেন। এক পর্যায়ে আমাকে মাটিতে ফেলে মাথা ও শরীরে এলোপাতাড়ি ঘুসি মারেন এবং পা টাইলসে আঘাত করে জখম করেন।

লিখিত অভিযোগ দিব, আমি সারাদিন সিটি স্কান, এক্সরে, চোখ পরীক্ষা নিয়ে দৌড়াঁচ্ছি। ঘটনা অন্যদিকে ডাইভার্ট না করার অনুরোধ।

এদিকে ঘটনা সত্য প্রকাশের দাবি জানিয়ে পাল্ট অভিযোগ করে মনিরুল ইসলাম রোহান বলেন, রাত ৯টার দিকে সজিব, শিহাব-সহ কয়েকজন আমাকে হিসাব-নিকাশের জন্য ডাকে।

এসময় খাবারের সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ হয়। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শেষে সবাই মিলে আবার হিসাব করে। কিছুক্ষণ পর সজীব ও নয়ন কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ ২০-২৫ জন লোক নিয়ে এসে বাসার মালিক ও অন্যান্যের সামনে আমাকে মারধর করে এবং আমার গেঞ্জি টেনে ছিঁড়ে ফেলছে। এরপর আমাকে রাতের মধ্যেই কুষ্টিয়া ছাড়ার হুমকি দেয়। বাসার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সনাক্ত করে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেস মালিক তুহিন বলেন, সজিব আর রোহানের ধস্তাধস্তির সময় আমি ছিলাম না, পরে শব্দ শুনি এবং একজন আমাকে জানালে সমাধানের জন্য তাদেরকে নিচে আসতে বলি।

কিন্তু এদিকে সজিব তার বন্ধুবান্ধ-সহ অনেক মানুষ ডেকে নিয়ে আসে ফলে বাইরে ধস্তাধস্তি হয় দুই পক্ষের মাঝে। এতে আমিও হাতে ব্যথা পাই। ঝামেলা সামলাতে না পেরে আমি রোহানকে তার রুমে পাঠাই এবং বাকিদেরকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, ‘রাতে আহত অবস্থায় সজিব ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

বিশেষ করে হাত, মুখমণ্ডল ও চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে। আমরা সিটি স্ক্যান ও এক্সরে করার পরামর্শ দিয়েছি। আপাতত তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’

এদিকে আজ সকালে হাসপাতালে দেখতে গেলেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সরকার। তিনি জানান, ‘আমি শুনে হাসপাতালে আসলাম। অভিযোগ পত্র পাইনি৷ প্রক্টরের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান জানান, ‘ঘটনা শোনার পরপরই রাত থেকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি। আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা মতে শরীরের ভিতরে বেশি সমস্যা হয়নি। বাহ্যিক আঘাত ছিল। বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখনও আনুষ্ঠানিক লিখিত অভিযোগ পাইনি৷’

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন