বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিকেবি‘র ঋণে নতুন দিগন্ত, ১.৭৮ লাখ কৃষক পেল স্বল্প সুদ সুবিধা

এনপিবিনিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম
বিকেবি‘র ঋণে নতুন দিগন্ত, ১.৭৮ লাখ কৃষক পেল স্বল্প সুদ সুবিধা
expand
বিকেবি‘র ঋণে নতুন দিগন্ত, ১.৭৮ লাখ কৃষক পেল স্বল্প সুদ সুবিধা

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) দেশের কৃষি খাতে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করে সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৬ জন নতুন কৃষক ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন, যা মোট ৩ হাজার ১১৬ কোটি টাকার ঋণের সমান। এই উদ্যোগ কৃষকেরা স্বাবলম্বী হতে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়েছে।

বিকেবি রেমিট্যান্স আহরণেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ব্যাংক প্রায় ১৯৭৬.২১ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ২৪,৩২৪ কোটি টাকা রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে। এই অর্জনের ফলে ব্যাংক প্রবাসী আয় আহরণে তিন নম্বরে অবস্থান করছে। ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ রেকর্ড ২.১৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

কৃষি ব্যাংক সাম্প্রতিক অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ঋণ ছিল ৮,৮৯৫ কোটি টাকা; যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯,০৫৬ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১,৭৫৬ কোটি টাকা। এছাড়া অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণেও ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিএমএসএমই খাতে ঋণ ছিল ৪,৪৩৩.৬৮ কোটি টাকা; যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫,৫৩৫.১৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ও পল্লী খাতে ৩৯,০০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২.৬৩ শতাংশ বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৩,৮৮০ কোটি টাকার মধ্যে কৃষি ব্যাংককে একাই ৭,৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন নীতিমালায় ঋণ প্রদানের জন্য সিআইবি রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তবে ২.৫০ লাখ টাকার নিচে ঋণের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ মওকুফ রাখা হয়েছে।

করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে কম সুদের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ধাপে ধাপে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আরও প্রণোদনা স্কিম চালু করা হয়েছে। কৃষি ব্যাংক এই স্কিমগুলো বাস্তবায়নে সফল হয়ে সরকারের প্রশংসা পেয়েছে। বিশেষ করে কৃষিতে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান উল্লেখযোগ্য।

বিকেবি পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন, সবুজ গৃহায়ন এবং সোলার ইরিগেশন প্রকল্পেও ঋণ প্রদান করে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি বিকল্প শস্য ও অন্যান্য ফসলের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ৪,৩১১ জন কৃষককে ৪৫.৭১ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে।

খেলাপি ঋণ আদায়েও ব্যাংক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। গত অর্থবছরে শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে ১,০৯১.৯৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র আড়াই মাসে ১,১৯০.২৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। হালখাতা, নবান্ন ও মধুমেলার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও আমানত সংগ্রহে বিকেবি সফল হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকের আমানত ছিল ৪৫,১৮৮.০২ কোটি টাকা; যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে ৫০,২০৩.১৪ কোটি টাকা হয়েছে। এটি শতকরা ১১.১০ শতাংশ বৃদ্ধি।

বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিন্তে আলী বলেন, “রেমিট্যান্স সংগ্রহে ব্যাংকের বর্তমান অবস্থান ৮টি সরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম এবং সব ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয়। গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা শাখা ও উপশাখার ডিজিটাল সেবা প্রবাসীদের আস্থা বাড়িয়েছে। কৃষি নীতি বাস্তবায়নে ব্যাংক কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

সব মিলিয়ে, কৃষি ব্যাংক দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক, নারী উদ্যোক্তা এবং নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে স্বল্প সুদে ঋণ পৌঁছে দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন