শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধোপাজান নদী থেকে বালু লুট: লিমপিড কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে মামলা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম
সুনামগঞ্জে ধোপাজান নদীতে বালু লুট
expand
সুনামগঞ্জে ধোপাজান নদীতে বালু লুট

ধোপাজান-চলতী নদীতে দিনে-রাতে ড্রেজার, বোমা মেশিনসহ নানা ধরণের খনন যন্ত্র দিয়ে চলছে বালু লুট। ভিটবালু তোলার কাগজ দেখিয়ে নদী থেকে তোলা হচ্ছে সিলিকা বালু

বিআইডব্লিউটি’র অনুমতির চুক্তি ভেঙে টোকেনের বিনিময়ে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন এসব বালু বিক্রয় করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিমপিড ইঞ্জিয়ারিংয়ের লোকজন। এতে হুমকির মুখে পড়ছে নদীপাড়ের ফসলি জমি বাড়ী-ঘর।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) আদালতে এমন অভিযোগ এনে লিমপিড ইঞ্জিয়ারিংয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ আরপিননগরের বাসিন্দা মো. গোলাম হোসেন

বৃহস্পতিবার বিশ্বম্ভরপুর আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় লিমপিড ইঞ্জিয়ারিং নামীয় প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধিদের আসামী করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের কোম্পানী নদীতে নির্দিষ্ট জায়গায় ভিটমাটি উত্তোলনের অনুমতি এনেছে। তারা নির্ধারিত জায়গার বাইরে গিয়ে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করছে। বাদীর রেকর্ডিয় জায়গা থেকে এই কয়েকদিনে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে বলে মামলায় দাবি করা হয়। এতে বাদীর জায়গাসহ স্থানীয়দের জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। অবৈধকাজে বাঁধা দিলে মারধরের হুমকি দেয় লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

এবিষয়ে মামলার বাদী মো. গোলাম হোসেন বললেন, নদীর পাড়ে আমার আমন জমি রয়েছে। গত ২৭ তারিখ রাতে লিমপেডের ড্রেজার মেশিন লাগায় ওখানে। তাদের প্রায় ৭০ জনের মতো লোক ছিলো। আমি বাঁধা দেওয়ায় তারা হুমকি দিয়েছে। পরে আমি চলে আসি। এতে আমার তিন বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। একারণে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আশাকরি ন্যায় বিচার পাবো।

মামলার আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা বলেন, লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের কোম্পানী ভিট বালু তোলার কথা। তারা সিলিকন বালু তুলছেন। ওনার জায়গা থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার বালু নিয়ে গেছে তারা। আদালত মামলা আমলে নিয়ে সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ডলুরা চলতি নদীর প্রবেশ মুখেই জেলার একমাত্র বালুমিশ্রিত পাথর কোয়ারি ধোপাজান। স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা আর পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৮ সালে কোয়ারি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে আদেশ দেন আদালত। দীর্ঘবছর বালু উত্তোলন বন্ধ থাকার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর শুরু হয় হরিলুট। লুট বন্ধ না করে উল্টো বিভিন্ন অভিযোগে প্রত্যাহার হন তৎকালীন এসপি আনোয়ার হোসেন। এরপর প্রশাসন তৎপর হলে ফের বন্ধ হয় বালু উত্তোলন।

তবে বালুমহালে উত্তোলন বন্ধ থাকলেও সরকারি সিদ্ধান্তে কয়েকদিন ধরে নদীতে চলছে বালু উত্তোলন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য মাত্র এক কোটি টাকা রাজস্বের বিপরীতে ১ কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এরপর থেকেই নদীর একাধিক স্থানে পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার আর বোমা মেশিনের তান্ডব চালাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং। অনুমতি দেয়ার পর থেকেই নিজেদের বসত ভিটা, ফসলি জমি, বাঁধ, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ সহ নানা স্থাপনা বাঁচাতে আন্দোলন ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন