


নীলফামারীতে সমাজ ভিত্তিক সম্মন্বিত শিশু প্রারম্ভিক বিকাশে আলোকিত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।একই সাথে দিনের বেলায় শিশু যত্ন কেন্দ্র নিরাপদে অবুঝ শিশুকে রেখে নিশ্চিন্ত মনে সংসারিক কাজ কর্মে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মজীবি মা-বাবারা।
শনিবার থেকে বৃহস্পিতবার সপ্তাহে ছয়দিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত চলে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের কারুকলাম শেখাচ্ছে শিশু যত্নকারীরা।পাশাপাশি পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু’র হার কমাতে সাঁতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুদের সাঁতারে দক্ষতা অর্জনেও ভুমিকা রাখছে আইসিবিসি শীর্ষক প্রকল্পটি।
নীলফামারী জেলা শিশু একাডেমি দপ্তরের তখ্যমতে জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন আইসিবিসি প্রকল্পটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির তত্বাবধানে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা সাঁতার প্রশিক্ষন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লোকাল আইডিয়া ফর এম্পাওয়ারমেন্ট লাইফ। অ¦াইসিবিসি প্রকল্পটি ২০২২ সালের ১২ জুন চালু হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লোকাল আইডিয়া ফর এম্পাওয়ারমেন্ট লাইফ এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর বিনয় কৃষ্ণ রায় জানান,নীফামারী জেলায় আইসিবিসি প্রকল্পটি চালু হয় ২০২৪ সালের মার্চ মাসে।এ প্রকল্পের আওতাধীন নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলায় ২১০টি, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৯০টি ও সৈয়দপুর উপজেলায় ১০০টি।সর্বমোট ৫০০টি যতœ কেন্দ্রে ১ থেকে ৫ বছর বয়সের ১২ হাজার ৫০০ কোমলমতি শিশুরা ভর্তি রয়েছে। সমাজ ভিত্তিক সম্মন্বিত শিশু প্রারম্ভিক বিকাশে আলোকিত হচ্ছে কমলমতি শিশুরা। পাশাপাশি ৬ থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুরা ডিমলা উপজেলায় ২২টি, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৮টি ও সৈয়দপুরপুর উপজেলায় ১০টি। সর্ব মোট ৫০ টি সাঁতার কেন্দ্রে ২২ হাজার ৫০০ জন শিশু সাঁতার প্রশিক্ষন নিয়ে সাঁতারের দক্ষতা অর্জন করছে।
ফিল্ড সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিটি শিশু যতœ কেন্দ্রে ২৫ জন ভর্তি শিশু রয়েছে তাদের দেখাশোনার জন্য মমতাময়ী একজন যত্নকারী ও একজন যতœসহকারী দায়িত্ব পালন করছেন। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত কোমলমতি শিশুদের অ্যাক্ট্রিভিটিসের মাধ্যমে শারিরিক ও মানষিক বিকাশের নানা কলা-কৌশল গ্রহন করেন।বিশেষ করে শিশুদের খেলার ছলে সৃজনশীল কার্যকলাপসহ বিনোদনমুলক কার্যক্রম রয়েছে এই শিশু স্বপ্ন কেন্দ্রে।
গত বৃস্পতিবার সকাল ১২ টায় ডিমলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাবুর হাট প্রামের শিশু যত্ন কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এক বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের মায়েরা কোলে করে নিয়ে এসে শিশু যতœ কেন্দ্রে রেখে যাচ্ছে।এসব শিশুদের নিয়ে শিশু যন্তকারীদের নিরাপত্তায় রেখে স্বপনের ভুবন,গল্পের ভুবন, রঙ্গিন ভুবন,বাইরের ভুবনসহ বইয়ের কারিকুলামের নানাদিক শেখানো হয়। আর এতে সহায়তা করে যাচ্ছে যতœকারী লুনা আক্তার ও আজজিনা সহকারী যতœকারী।
ডিমলা উপজেলা বালাপাড়া ইউনিয়নের মধ্য সুন্দর খাতা গ্রামের শিশুযতœ কেন্দ্রে গেলে দেখা যায়, খেলাধুলার এক পর্যায়ে শিশু মাসুমা (৪) ক্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।তাকে শিশু যত্নকারী সোনালী আক্তার ও সহকারী যতœকারী মাসুমা আক্তার মিলে শিশুটিকে কেন্দ্রের এক কোনে নির্মিত অপন ভুবনে শুয়ে দেয় তাকে। আইসিবিসি প্রকল্পের অধিকাংশ শিশু যতœ কেন্দ্রের একই চিত্র।
ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের মধ্য সুন্দরখাতা গ্রামের শিশু অভিভাবক আফসানা আক্তার জানান, শিশু যত্নকেদ্রে হওয়ায় অমাদের গ্রামের মা-বাবাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এই কেন্দ্রে বাচ্চাদের রেখে বাড়ীতে আমরা সাংসারিক কাজকর্ম নিশ্চিন্ত মনে করতে পারি।একই সাথে আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখানে নিয়মিত আগ্রহ মনে আসতে ভালবাসে।মেধা বিকাশে ছবি দেখে বিভিন্ন জীবজন্তুর সাথে পরিচিতি লাভ করে তাদের ছবি আঁকা,ভাল-ভাল কথা ও ছন্দে-ছন্দে ছড়া ও নাচ শিখছে।এসব শিখে তারা বাড়ীতে এসে আবার আমাদের শোনায়। আমাদের বাচ্ছাদের জন্য এরকম একটি সুন্দর ব্যস্থাপনার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই।
ডিমলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট গ্রামের শিশু অভিভাবক শারমিন আক্তার জানান,অমার ছেলের বয়স আড়াই বছর সে আগে কথা বলতে পারতো না; চুপচাপ থাকতো।এ কেন্দ্রে এসে অন্য বাচ্ছাদের সাথে মিশে এখন সে কথা বলতে পাড়ে। আগে আমাদের এলাকার ডোবাপুকুরে পড়ে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।শিশু যত্নকেন্দ্র হওয়ায় থেকে এই এলাকায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, এ স্কুলের পক্ষে বড়ভিটা শিশু যত্নকেন্দ্র পরিদর্শনে যাই।আমি দেখতে পাই ১ থেকে ৫ বছর বয়সের কোমলমতি ২৫ জন শিশু রয়েছে।শিশুদের প্রতি যতœকারীর আদয়-সেহ্ন-মায়া দিয়ে নানা কলা-কৌশলে শিশুদের মেধা বিকাশে নিরলস প্রচেষ্ঠা দেখে আমি মগ্ধ হয়েছি।পাশাপাশি একটি সাঁতার প্রশিক্ষন কেন্দ্রে যাই সেখানে দেখি পুকুরে সাঁতার প্রশিক্ষক য়ে-ভাবে সাঁতার প্রশিক্ষন দিচ্ছে আমার মনে হচ্ছে তারা সাঁতারে পারদর্শি হয়ে উঠবে।
ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের খগাগড়িবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী জানান, সরকারের শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আওতায় আইসিবিসি প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু যতœ ও সাঁতার কেন্দ্র গোটা দেশে চালু করা যায় এবং দীর্ঘ মেয়াদি করা হলে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে।আর কোমলমতি শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ দ্রুত ঘটবে। একই সাথে স্কুলে যাওয়ার আগেই অনেকটা দক্ষ ও মানসিকভাবে শক্তিশালি হয়ে উঠবে।এতে ভবিষতে জাতি গঠনে অন্যতম মাধ্যম হবে শিশু যত্ন কেন্দ্র।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লোকাল আইডিয়া ফর এম্পাওয়ারমেন্ট লাইফ এর উপ-পরিচালক সুভাস চন্ত্র পাল জানান, নীরফামারী জেলার ডিমলা-কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলায় আইসিবিসি প্রকল্পের আওতায় ৫০০টি শিশু যতœকেন্দ্রের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব কেন্দ্রে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত শিশু যতœ কেন্দ্রে থাকায় বাড়ীর পাশে ডোবা-নালা ও পুকুরের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে বাবা-মায়েরা নিশ্চিতি মনে থাকে।একই সাথে শিশু যতœ কেন্দ্র শিশুরা অন্যান্য শিশু ছেলে-মেয়েদের সাথে মেলামিশায় কথা বলার জড়তা ও ভয়কে জয়সহ খেলা-ধুলায় সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে।
সাম্প্রতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান,ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরারানুজ্জামান ও মহিলা বিষয় কর্মকর্তা পুরবি সরকার শিশু যতœ ও সাঁতাল কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তারা।
মন্তব্য করুন