

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘ এক বছরের যাচাই-বাছাই ও সব বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পরও সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। দলটি এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন প্রার্থীকে মনোনয়নের সবুজ সংকেত দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি এবার বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। দলটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬০ আসনে নিজেদের প্রার্থী দিতে চায় এবং শরিকদের জন্য ৪০ আসন ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিএনপির জোটে যুক্ত হলে তাদের জন্য ৮টি আসন রাখার বিষয়েও প্রাথমিক আলোচনা চলছে।
এক বছর আগে থেকেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য করে বিএনপি সারাদেশে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯০০ সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি তালিকা তৈরি করে হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন সূত্রে ওই প্রার্থীদের যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা যাচাই করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন, তখনই বিএনপি প্রার্থী চূড়ান্তের গতি বাড়ায়। কেন্দ্র থেকে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে একের পর এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়।
তবে অনেক আসনে একাধিক প্রার্থী মাঠে নামায় স্থানীয় পর্যায়ে বিভক্তি তৈরি হয়। কোথাও কোথাও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিরোধ ও সমালোচনার ঘটনায় দলীয় নেতারা বিব্রত হন।
এই পরিস্থিতিতে গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা, আর লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান।
২৬ অক্টোবরের বৈঠকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা (প্রস্তাবিত), ময়মনসিংহ, ফরিদপুর (প্রস্তাবিত) ও রংপুর বিভাগের প্রার্থীরা অংশ নেন। পরদিন ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
তারেক রহমান বৈঠকে বলেন, “ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যাকে যেখানে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাইকে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না; প্রয়োজনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও আশ্বাস দেন, দল ক্ষমতায় গেলে ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “প্রার্থী নির্ধারণে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে বৈঠক শেষ করেছি। এখন দলের অভ্যন্তরে ঐক্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।”
সূত্র জানায়, প্রায় ৮০০ মনোনয়ন প্রত্যাশীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জোট গঠন, আসন বণ্টন এবং নির্বাচনী কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তারেক রহমানের বক্তব্যে অনেক নেতাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
বর্তমানে বিএনপি প্রায় ৪০টি সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব দলের মধ্যে কেউ কেউ একাধিক আসন দাবি করেছে, যদিও বিএনপি সর্বোচ্চ ৪০টি আসন ছাড়ার নীতিতে অটল রয়েছে।
তবে জোটভুক্ত দলগুলো ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে প্রার্থী দিতে পারবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী প্রতিটি দলকে নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচন করতে হয়। এ নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপি ও তাদের শরিকরা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে।
সব মিলিয়ে, বিএনপি একদিকে প্রার্থী চূড়ান্তের শেষ ধাপে, অন্যদিকে জোটের আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দলের ভেতরে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—কে কোথায় মনোনয়ন পাবেন।
মন্তব্য করুন
