বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মসজিদে নববীর ছাতাগুলোর বৈজ্ঞানিক যে অলৌকিকতা আছে

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
মসজিদে নববীর ছাতা
expand
মসজিদে নববীর ছাতা

মদিনার মসজিদে নববীর খোলা আঙিনায় থাকা বিশাল ছাতাগুলো শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং মুসল্লিদের আরাম, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এই ছাতাগুলোতে প্রয়োগ করা প্রযুক্তি ও নকশা পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, একদিকে এটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটায়, অন্যদিকে বাস্তবিক সমস্যার সমাধানও প্রদান করে।

ছাতাগুলো মূলত সূর্য ও গরমের তীব্রতা থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করতে তৈরি। প্রতিটি ছাতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা এবং বন্ধ করা যায়। তাপমাত্রা, আলো ও বাতাসের পরিস্থিতি অনুযায়ী ছাতাগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করে। গরমের সময় ছাতার নিচে তাপমাত্রা প্রায় ১০-১৫ ডিগ্রি কমে যায়, যা মুসল্লিদের নামাজ পড়ার জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে।

ছাতার নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে প্রাকৃতিক বাতাস প্রবাহিত হয় এবং আঙিনায় বাতাসের চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে ঘরময় দিনে মুসল্লিরা তাজা বাতাসে নামাজ আদায় করতে পারেন।

এই ছাতাগুলোর নকশা করেছেন জার্মান স্থপতি মাহমুদ বোদো রাশ, যিনি পরিচালনা করেন SL Rasch GmbH (Special and Lightweight Structures)।

প্রকল্পের সাধারণ ঠিকাদারি সংস্থা ছিল সৌদি আরবের Saudi Binladin Group। এই ছাতাগুলো মসজিদের সামনের খোলা আঙ্গিনায় বসানো হয়েছে, যেখানে মুসল্লিরা গরম, বৃষ্টি ও সূর্যের তীব্র আলো থেকে নিরাপদে নামাজ আদায় করতে পারেন।

প্রকল্পটি ২০১০ সালের আগস্টে সম্পন্ন হয় এবং প্রায় ২৫০টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা-বন্ধ হওয়া ছাতার ব্যবস্থা ইনস্টল করা হয়। ছাতাগুলোতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা তাপমাত্রা, বাতাস ও আলো অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। এছাড়া বর্ষা বা ঝড়ের সময় পানি সরানোর ব্যবস্থা এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণের বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।

বর্ষার সময় খোলা ছাতার ওপর পড়া পানি ছাতার দিক দিয়ে সরাসরি মাটিতে বা জলসংগ্রহ ব্যবস্থায় চলে যায়। এটি আঙিনায় পানি জমতে দেয় না এবং মুসল্লিরা ভিজতে বাধ্য হন না।

ছাতার নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে বৃষ্টি বা বাতাসের শব্দ কমে যায়। এতে নামাজ বা দোয়ার সময় শান্ত পরিবেশ বজায় থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মসজিদে নববীর এই ছাতাগুলো আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির নিদর্শন, যা ধর্মীয় স্থানের সৌন্দর্য এবং বাস্তবিক প্রয়োজনকে একত্রিত করেছে।

ছাতাগুলো তৈরি হয়েছে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উচ্চ প্রযুক্তিতে। হালকা কিন্তু শক্তিশালী উপকরণ যেমন ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও বিশেষ ক্যানভাস ব্যবহার করা হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই এই ছাতাগুলো শুধু কার্যকর নয়, মসজিদের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে।

এই ছাতাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং প্রধানত দুটি পরিস্থিতিতে খোলা বা বন্ধ করা হয়: দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে ছাতাগুলো খুলে যায়, যাতে মুসল্লিরা ছায়ায় নামাজ আদায় করতে পারেন। বর্ষা বা বৃষ্টি চলাকালীন: ছাতাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যাতে মুসল্লিরা শুকনো অবস্থায় থাকেন এবং বর্ষার পানি আঙিনায় না জমে।

প্রতিটি ছাতার উচ্চতা বন্ধ অবস্থায় প্রায় ২১.৭ মিটার। ছাতার ছায়া প্রদানের অংশ খোলা অবস্থায় প্রায় ২৫.৫ মিটার × ২৫.৫ মিটার। একটি ছাতার ওজন প্রায় ৪০ টন।

প্রত্যেকটি ছাতার ভিত্তিতে মোট ৪৩৬টি মিস্ট ফ্যান যুক্ত রয়েছে যা বাতাসে কুলিং এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন