শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়ছে ২৩ কোটি টাকার সড়ক

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৬ এএম
ছবি সংগৃহীত
expand
ছবি সংগৃহীত

নীলফামারী জেলা শহরে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে তিন বছর আগে ২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক প্রশস্ত করা হয়। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে এ সড়কটি প্রশস্ত করা হয়েছিল, তা অপূর্ণই রয়ে গেছে। সড়কটিতে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁকের কারণে ভারী যানবাহনের চালকরা এ পথ ধরতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এমনকি হালকা গাড়ির চালকরাও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন এই পথ। ৭ কিলোমিটারের এই বাইপাস সড়কে ছোট-বড় ৪২টি বাঁক রয়েছে, যা রীতিমতো একধরনের মরণফাঁদ। সামান্য অসাবধানতাতেই দুর্ঘটনা অনিবার্য। যেহেতু বাইপাস সড়কটি তেমন কাজে আসছে না, তাই শহরের মূল সড়ক দিয়েই অধিকাংশ যানবাহন চলাচল করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুর হয়ে আঞ্চলিক সড়ক ধরে নীলফামারীর দিকে আসার পথে শহরের প্রবেশদ্বার মশিউর রহমান কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়েছে বাইপাস সড়কটি। এরপর এটি জেলখানা, পাঁচমাথা, ইটাখোলা ইউনিয়নের বাদিয়ার মোড়, মায়ার মোড়, বড় দিঘির পাড়, শাহপাড়া, শিমুলতলী মোড়, পোড়পোড়ার মোড় হয়ে নটখানায় মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

সড়কের ৪২টি বাঁকের মধ্যে বাদিয়ার মোড় এলাকা থেকে পোড়পোড়ার মোড় পর্যন্ত ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক রয়েছে ১২টি। মায়ার মোড়, বড় দিঘির পাড়, শাহপাড়া, পোড়পোড়ার মোড় ও নটখানায় প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণের বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকে বিপরীত দিক থেকে কোনো যানবাহন বা মানুষ আসছে কি না—তা বোঝার উপায় নেই। ফলে এসব স্থানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা সর্বদা থেকেই যায়।

কুষ্টিয়া থেকে ইটবোঝাই ট্রাক নিয়ে বাইপাস সড়ক ধরে ডোমারে যাচ্ছিলেন ট্রাকচালক মকবুল হোসেন। শিমুলতলী মোড়ে তিনি বলেন, “সামান্য এই সড়কে চলতে গিয়ে ২৪টি বাঁক অতিক্রম করতে হয়। এর মধ্যে কিছু বাঁক আসলেই মরণফাঁদ। এসব বাঁক অতিক্রমের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়।”

জেলা শহরের নিউবাবুপাড়ার ট্রাকচালক মো. খতিবর রহমান খোকন বলেন, “কালিতলা থেকে পুলিশ লাইন পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪২টি বাঁক অতিক্রম করতে হয়। বিশেষ করে বড় ট্রাক (১০ চাকা) ও কোচ (বাস) এসব বাঁকে ঘুরানো যায় না। অনেক সময় দোকানপাট ও বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে। সড়কটি সোজা করা হলে যান চলাচল সহজ হবে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমবে।”

ইটাখোলা ইউনিয়নের শাহপাড়ার বাসিন্দা মাহাবুল হোসেন বলেন, “বাদিয়ার মোড় থেকে পোড়পোড়ার মোড় পর্যন্ত সড়কটিতে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকে চালকদের মোড় ঘুরতে সমস্যা হয়, আবার সড়কের পাশে বাড়িঘর থাকায় আমরাও ঝুঁকিতে থাকি। কিছুদিন আগে একটি পাথরবোঝাই ট্রাক ঠিকমতো মোড় নিতে না পেরে আমার বাড়িতে ঢুকে পড়ে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই।”

কান্দুরার মোড়ের মুদি দোকানদার আনোয়ার হোসেন জানান, “সড়কটিতে অসংখ্য বাঁক থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় যানবাহনের ক্ষতি ছাড়াও অনেকে আহত হন। গত পাঁচ বছরে অন্তত অর্ধশতাধিক ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।”

নীলফামারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্যমতে, মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে নটখানা পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার। তিন দশমিক ৭০ মিটার প্রস্থের পুরনো সড়কটিকে শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে পাঁচ দশমিক পাঁচ মিটারে উন্নীত করে বাইপাস সড়কে রূপান্তর করা হয়। ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। তিন দশমিক ৭০ মিটার থেকে ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ বৃদ্ধিকরণে মোট ব্যয় হয় ২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, “৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কে প্রায় ৪০ থেকে ৪২টি বাঁক রয়েছে। এটি সোজা করার প্রক্রিয়া চলছে। বাইপাস সড়কটি সোজা করতে প্রায় ৮ দশমিক ৪ একর জমির প্রয়োজন হবে। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে—অনুমোদন মিললেই সড়কটি সোজা করা হবে, তখন নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল সম্ভব হবে।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন