

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাদারীপুরের শিবচরের বিভিন্ন এলাকায় পদ্মা নদীতে চলছে মা ইলিশ ধরার উৎসব। নিষিদ্ধ সময়টাকেই যেন জেলেরা ইলিশ শিকারের প্রকৃত মৌসুম হিসেবে ধরে নিয়েছে।
সরকার ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু শিবচরের বন্দরখোলা, মাদবরের চর, কাঁঠালবাড়ি ও চর জানাজাত ইউনিয়নের নদীপাড়ে এ নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। শুধু মাছ ধরা নয়—নদীর তীরে বসছে অস্থায়ী হাট, সেখানে বিক্রি করা হচ্ছে এসব ইলিশ।
একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে খাবারের দোকান ও হোটেলও। প্রশাসনের টহল থাকলেও নদীর বিস্তৃতি ও গোপন তৎপরতার কারণে মূল হোতারা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্দরখোলা ইউনিয়নের কাজীর সুরায় বসেছে ইলিশের অস্থায়ী হাট। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই একের পর এক ট্রলার মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড়ছে। সেখানেই চলছে বিক্রি।
আকারভেদে এক কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ১,৬০০ টাকায়। পদ্মাপাড়ের প্রায় সব ঘাটেই এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে সরকারি অভিযান সেভাবে চোখে পড়েনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজীর সুরা ও হিরা খাঁর বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
দাম তুলনামূলক কম থাকায় আশপাশের এলাকা থেকে ক্রেতারাও ছুটে আসছেন উৎসবের আমেজে। অভিযানের খবর জেলেদের কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়, ফলে তারা ট্রলার নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যায় বা কাশবনে লুকিয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে বলেন, “বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় নদীতে নামতেই হয়। পেট তো আইন বোঝে না, মাছ না ধরলে বাচ্চারা খাবে কী? নিষেধাজ্ঞা মানলে আমরা না খেয়ে মরব, তাই জীবন ঝুঁকি নিয়েই নদীতে নামি।”
স্থানীয় শিক্ষক শামসুল আলম বলেন, “নিষিদ্ধ সময়টাকেই জেলেরা সোনালী মৌসুম মনে করে। তখন নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য বেশি থাকে। অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভের আশাই তাদের প্রলোভিত করে।
যদি এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হয়, তাহলে আগামী মৌসুমে ইলিশ উৎপাদন অনেক কমে যাবে।”
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সত্যজিৎ মজুমদার বলেন, “মা ইলিশ রক্ষায় আমরা কঠোর নজরদারি চালাচ্ছি।
৪ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মিটার অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪৩ জন জেলেকে কারাদণ্ড ও ২ লাখ ৪১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৩৭০ কেজি জব্দ করা ইলিশ স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। তবুও নদীর বিস্তৃতি ও অন্ধকারের সুযোগে জেলেরা বারবার নজরদারি ফাঁকি দিচ্ছে।”
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ. এম. ইবনে মিজান বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। লোকবল কম থাকায় অনেক সময় জেলেদের হামলারও শিকার হচ্ছি। তারপরও থেমে নেই—নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
