

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


আমাদের দেশে যে হারে বাড়ছে জনসংখ্যা, সে হারে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন বলছে, বেকারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা এবং উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। গ্রাম কিংবা শহর সবখানেই যেন বেকারত্বের হাতছানি। দেশে কর্মসংস্থানের অবস্থা যখন এমন, ঠিক তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে রঙিন মাছ চাষে রঙিন জীবনে পদার্পণ করছেন সাগর। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে জিতে নিয়েছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানা পুরস্কার।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা যুবক সাগরের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রামজীবন ইউনিয়নে সরকারপাড়া গ্রামে এবং তিনি ওই গ্রামের মোজাফফর ও আয়েশা দম্পতির ৫ ছেলে-মেয়ের মধ্যে চতুর্থ।
শখ থেকে মাছ চাষ শুরু ২০১৯ সালের নভেম্বরের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে একই বিষয়ের অন্য দুই বন্ধুর সাথে টিউশনির ৩ হাজার টাকায় ৩৪টি অটো ব্রিড এবং গোল্ড ফিশ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন এই তরুণ। শীতকালে গোল্ড ফিশজাতের মাছগুলো মারা গেলেও টিকে যায় অটো ব্রিড এর কয়েকটি মাছ। এমন অবস্থায় অপর দুই বন্ধু আশাহত হলেও নিরাশ হননি সাগর। পরে ২০২০ সালের গোড়ার দিকে দেশে কোভিড-১৯ বাড়তে থাকায় বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে লম্বা অবসর পান সাগর। করতে থাকেন মাছের পরিচর্যা। ঘাটাঘাটি করেন অনলাইন। সাড়া পাওয়ায় মনোযোগ বাড়িয়ে দেন আরো। পড়াশোনার পাশাপাশি হাত খরচ কমিয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আনেন মা মাছ। বাড়ির ভেতর ও বাইরের কয়েকটি চৌবাচ্চায় চাষ করা সেই মা মাছের পোনা বিক্রি করে প্রথম দিকে লাভের মুখ না দেখলেও লাভ আসা শুরু হয় মূলত: ২০২১ সালের দিকে। লাভের অংকটা বেশি হওয়ায় বাড়তে থাকতে মাছ তার চাষের পরিধি। এখন ওই চৌবাচ্চা ছাড়াও পাঁচ-পাঁচটি পুকুরে ভেসে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন জাতের অন্তত ২ লাখ রঙিন মাছ। যার বাজার দাম প্রায় ২০ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির ভেতর ও বাইরে কয়েকটি চৌবাচ্চাসহ সামনের চারটি ছোট এবং একটি বড় পুকুরে রঙিন মাছ চাষ করেছেন সরকারি চাকুরির পিছনে না ছোটা এ তরুণ উদ্যোক্ত। খামারের নাম দিয়েছেন তিনি, 'সাগর এগ্রো ফার্ম।' এখন দিন কাটে তার 'জীবন রঙিন' করা এই 'রঙিন মাছের পিছনে। সকাল, দুপুর ও বিকেলে পুকুরে নিয়মিত খাদ্য দেন তিনি। সেই খাদ্য পেয়ে সাথে সাথে ভেসে আসতে থাকে হাজারো মাছ। ভাসতে থাকা এ সব মাছের গায়ের রং কোনোটির লাল, কোনোটির কমলা, কোনোটির সাদা, কোনোটির রং কালো। আবার কোনোটির গায়ে ওই রঙের সাথে দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন রঙের আঁশ। ভিন্ন রঙ ও আকৃতির কারণে এদের নামও ভিন্ন। যেমন: টাইগার বার্ব, গোরামি, অটো ব্রিড, গোল্ডফিশ, কই সফট টেল, দানিয়া, জেব্রা, অ্যাঞ্জেল থাইটার, সোর্ডটেল, গাপ্পি কমেট, সানসেট প্লাটি, রেড মলি, ব্লাক মলি, বেলুন মলি ও জাপানি বাটারফ্লাই।
কারা কেনেন সাগরের এ রঙিন মাছ?
স্বাদ অনেকটা রুই কিংবা কার্প জাতীয় মাছের মতো হলেও রঙিন এ সব মাছের দাম কেজি প্রতি প্রায় ৪ হাজার টাকা হওয়ায় তা কেনা সাধ্যের বাইরে সাধারণ মানুষের। আর তা খাওয়া মানেই বিলাসিতা। এগুলো মূলতঃ বাহ্যাড়ম্বর (সামাজিক মর্যাদা) বাড়িয়ে দেয় বলে সৌখিন মানুষেরা তা পালন করেন বাসা-বাড়ী, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান কিংবা রেস্তোরাঁর অ্যাকুয়ারিয়ামে। আর এমন সৌখিন মানুষেরা সাগরের চাষ করা এ রঙিন মাছ কেনেন সরাসরি কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে। তবে আকার ও রং ভেদে একেকটি মাছের দাম নেন ১৫টাকা-৩০০০টাকা পর্যন্ত। এতে খরচ বাদেও প্রতি মাসে নীট লাভ হয় তার ৬০-৭০ হাজার টাকা। সাগরের ভবিষ্যত পরিকল্পনা
স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সাগর বলেন, দেশে এ মাছ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে ৬০০ কোটি টাকার রঙিন মাছের চাহিদা আছে। যার অর্ধেক আমদানি করা হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। উৎপাদন বাড়াতে পারলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে তেমনি ঘাটতি মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় কিংবা অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, পরিকল্পনা রয়েছে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সামনের বছরে আরো বড় আকারে এ মাছের চাষ বাড়ানোর। এতে শুধু আমার নয়, পাশাপাশি অন্যদেরও যাতে কর্মসংস্থান হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
পড়াশোনা শেষে চাকুরির পিছনে না ছুটে বরং ছেলে একজন উদ্যোক্তা হওয়ায় সাগরের বাবা মোজাফফর হোসেন এখন খুশি। ছেলের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে এদিকে, প্রয়োজনে সাগরকে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় ঋণেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছা. সুমিতা খাতুন। তিনি আরো বলেন, ছোট মাছ চাষের জন্যও তাকে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন