

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং এলাকায় একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরপর পাঁচ ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি শিক্ষককে ধরে গণধোলাই দেন এবং জুতার মালা পরিয়ে অপমান করেন। পরে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিষয়টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন এবং সালিশের আয়োজন করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যাদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ডের মামলা চলছে—তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সক্রিয় ছিলেন।
ওই সালিশে কৃষকদলের এক নেতাকেও সম্পৃক্ত করা হয়। প্রথমে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হলেও পরে তা কমিয়ে ৪ লাখ টাকায় চূড়ান্ত করা হয়।
ভুক্তভোগী চার ছাত্রের পরিবারকে মোট এক লাখ টাকা দেওয়া হলেও বাকি অর্থ সালিশে যুক্ত কয়েকজন “মাতব্বরের” হাতে চলে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এলাকাবাসী জানায়, আটি হাউজিং এলাকার জমজম টাওয়ারে নূরে মদিনা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শরীফুল ইসলাম ইব্রাহীম (৩২) গত দুই মাসে পাঁচ ছাত্রকে তার কক্ষে ডেকে বলাৎকার করেছেন। তার বাবা সামসুল হক তালুকদার মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও ভবনের মালিক।
উল্লেখযোগ্য হলো, ২০১৯ সালে দুই ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগে একই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর স্থানীয় কিছু তরুণ শিক্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলার আসামি দেলোয়ার ও ফরিদ মাস্টার ঘটনাটি ‘সামাজিকভাবে’ মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তাদের থামিয়ে দেন। পরে গত ১১ নভেম্বর হাউজিং এলাকার অফিসে বসল সালিশ। অভিযুক্ত শিক্ষকের পিতা সেখানে চার লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, তাদের মধ্যে চার পরিবার মাত্র ২৫ হাজার টাকা করে পেলেও একটি পরিবার কোনো সহায়তা পায়নি। একজন ছাত্র এখনও অসুস্থ—চিকিৎসা চলছে, পড়ালেখাও বন্ধ রয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক শরীফুল ঘটনার পরও এলাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
তারা বলছেন, প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না, তবে নিরপেক্ষ বিচার চান।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বাবা সামসুল হক তালুকদার ফোনে দাবি করেন, তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না, সালিশে যুক্ত ফরিদ মাস্টার বা দেলোয়ারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
ফরিদ মাস্টার ফোনে জানান, ভুক্তভোগী এক ছাত্র তাদের আত্মীয় হওয়ায় তিনি সালিশে যুক্ত হন। তার দাবি, থানায় গেলে পুলিশ সামাজিকভাবে মীমাংসার পরামর্শ দেয়।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে চার লাখ টাকা ধরা হয়েছিল, পরে তিন লাখে সমাধান করা হয় এবং কিছু টাকা ভুক্তভোগী পরিবার ও উপস্থিত কয়েকজনকে দেওয়া হয়।
আরেক সালিশদার দেলোয়ার বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে অল্প সময় ছিলেন এবং টাকার বণ্টন সম্পর্কে বেশি জানেন না। শুধু শুনেছেন, বিএনপির এক নেতা, কয়েকজন সাংবাদিক ও ৪ ভুক্তভোগী কিছু টাকা পেয়েছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম বলেন, এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। পুলিশ কোনো ভুক্তভোগীকে মামলা করতে নিরুৎসাহিত করে না। কোনো পরিবার চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
