সোমবার
১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনাকে কবে হস্তান্তর করবে ভারত, যা জানা গেল

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২১ পিএম আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি
expand
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবীরা ছাড়াও জুলাই আগস্টে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণা শুরু করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ে আদালত বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্য দুটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার শুরুর আগে ভারতের কাছে তাকে ফেরত চেয়ে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দুই দেশের মাঝে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও ভারত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় ঘোষণার পর শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ভারত ফেরত দেবে কি না, সেই প্রশ্ন করছেন অনেকে।

রায় ঘোষণার পর কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, ‘হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রত্যাশিত ছিল। তবে ভারত বাংলাদেশের এই পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রত্যর্পণ করবে না।’

তিনি বলেন, ‘ভারত কোনও অবস্থাতেই তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না এবং অনেক সময়ই তা ভঙ্গুর মনে হয়েছে।’

শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রত্যাশিতই ছিল।’

তিনি বলেন, দেশের ভেতরের পরিস্থিতি দেখে অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর রায় হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাংলাদেশে প্রচলিত আইনগত প্রক্রিয়া মেনেই চলেছে বলে তাঁদের মূল্যায়ন। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই বলেও তাঁরা মত দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তদন্তে এমনও দাবি রয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন।

দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে একটি পাল্টা-বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। তবে সামগ্রিকভাবে বহু বাংলাদেশির চোখে, তাঁদের মতে, হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

২০১৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ২০১৬ সালে সংশোধনের মাধ্যমে আরও কার্যকর করা হয়—যাতে দুই দেশের মধ্যে পলাতক আসামি ও বন্দিদের বিনিময় প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ হয়। এই চুক্তি মূলত ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কিছু কার্যক্রম এবং বাংলাদেশ-ভিত্তিক জেএমবি-র সদস্যদের সীমান্ত পেরিয়ে লুকিয়ে থাকার ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়।

চুক্তির কার্যকারিতা দেখা যায় ২০১৫ সালে, যখন বাংলাদেশ উলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতকে ফিরিয়ে দেয়। এরপর আরও কয়েকজন পলাতক আসামিকে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে হস্তান্তর করে।

চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ পরস্পরের কাছে এমন ব্যক্তিদের ফেরত পাঠাতে পারে—যাদের বিরুদ্ধে মামলা, অভিযোগ বা দণ্ড রয়েছে, অথবা যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে অপর পক্ষ প্রত্যর্পণ চাইছে।

যদিও ২০১৩ সালের এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ আইনত হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি করতে পারে, বাস্তবে ভূ-রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ এ প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত জটিল করে তুলেছে। ভারত যদি এমন অনুরোধ বিবেচনা করেও, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইনগত বিধান ও কূটনৈতিক বাস্তবতা—উভয় দিক থেকেই একাধিক ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

পাঞ্জাবের রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ল’-এর সহকারী অধ্যাপক ও আইনি বিশেষজ্ঞ ড. সঙ্গীতা তাক বলেছিলেন—যদিও চুক্তির নিয়মই এই প্রক্রিয়ার মূল কাঠামো নির্ধারণ করে, তবুও রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও মানবাধিকার ইস্যু এটিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়ে পরিণত করে।

তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠিয়েছে, যেখানে অভিযোগের বিবরণ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, বিচারিক আদেশসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

ড. তাক আরও জোর দিয়ে বলেন, প্রত্যর্পণের অনুরোধে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে বাংলাদেশে বিচার প্রক্রিয়া হবে ন্যায্য, পক্ষপাতহীন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন