

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


জগতের প্রতিটি মানুষ চায়, সাধ্য অনুযায়ী তার পরিবারকে সুখী করতে। চালায় নানা কর্মযজ্ঞ, চায় দিনের ক্লান্তি শেষে রাতে একটুখানি বিশ্রাম। আর এ জন্য চাই সুন্দর পরিবেশ ও মনের মতো একটি বাড়ি।
কেউ বা সেই বাড়ি পাথর দিয়ে প্রাসাদ তুল্য বানায়, আবার কেউ বা ইটের তৈরি আধা-পাকা টিনসেড বাড়ি বানায়। কিন্তু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এসব নয়, বরং পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন মো. হাকিম নামের এক অটোরিকশা চালক।
যা দেখে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুরা রীতিমতো মুগ্ধ। আর তার সুখের বোতলবাড়ি দেখে বাউল তো সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করেছেন উত্তরের সুরভরা ভাওয়াইয়া গান।
মো. হাকিমের বাড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে, ছাপড়হাটি ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামে।
মাওলানা ভাসানী সেতু-লক্ষীপুর সংযোগ সড়কের দক্ষিণ ধারে গেলে চোখে পড়বে তার নজরকাড়া সুখের বাড়িটি। ইট বা পাথর নয়, কেবল পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে বাড়িটি তৈরি করেছেন তিনি।
ভিন্ন রঙের বোতল ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ভর্তি করে পাশের চৌবাচ্চায় ডুবিয়ে রাখতেন। দুই-তিন দিনের মধ্যে বোতল বাছাই করে একে একে গাঁথনি শুরু করতেন। দেখেই বোঝা যায়, শুধু টাকা নয়, শ্রম ও সময় দুটোই ব্যয় হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বারান্দাসহ তিনটি কক্ষ ও একটি বাথরুম তৈরি করেছেন মো. হাকিম। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে আধা-পাকা বাড়ি তৈরি হলেও ভিত্তি ও মেঝে ইটের। ধাপে ধাপে লাগানো হয়েছে খয়েরি, ওয়াটার কালার, সাদা, নীল ও গাঢ়-হালকা সবুজ রঙের বোতল।
চতুর্ভুজ আকৃতিতে দেওয়ালের চারপাশে বড় সাদা বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। জানলার দুই পাশে সাদা ও নীল বোতল দিয়ে ভিন্নভাবে করা চতুর্ভূজ বাড়িটিকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। বারান্দার ওয়ালে গাঁথা লাভ চিহ্ন এবং উপরে লাগানো সবুজ টিন বাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
বাড়িটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। ইউটিউবার ও বাউলও আসছেন। কেউ বাড়ির সামনে বা ভেতরে সেলফি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন।
স্ত্রীসহ আসা বাউল আজিজুল হক গেয়ে ফেলেছেন সুখের বোতলবাড়ি নিয়ে উত্তরের সুরের ভাওয়াইয়া গান, যা শুনে দর্শনার্থীরা আনন্দিত হয়েছেন।
ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী আনারুল হক বলেন, “একজন রিকশা চালকও এতো সুন্দর বাড়ি তৈরি করতে পারেন, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না।”
গাজীপুর থেকে আসা অপর দর্শনার্থী বলেন, “কোনো কিছু করতে গেলে মানুষের ইচ্ছাশক্তিই বড়। একজন অটোরিকশা চালক হয়তো দিনে ৮০০-১০০০ টাকা ইনকাম করেন, কিন্তু সেই ইনকাম দিয়ে এতো সুন্দর বাড়ি তৈরি করা সত্যিই আশ্চর্যের।”
মো. হাকিম নিজেও বলেন, “পাশাপাশি সবার বিল্ডিং দেখে মনটা খারাপ হত। ভাবতাম, আমারও যদি একটা বাড়ি হত। একদিন তিনিও করব, তবে অন্যদের থেকে ভিন্ন।
রোজা মাসে কাজ শুরু করেছি, এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১১ লাখ টাকার বেশি। রংসহ কিছু কাজ বাকি আছে। আরও অন্তত দুই-তিন লাখ টাকা লাগবে। শখের বাড়ি তৈরি করে মানুষ যেভাবে ছুটে আসছে, তাতে খুবই খুশি।”
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
