

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


মোঘল শাসনের আগে ও পরের তিন আমলের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের চিত্রসংবলিত দিনাজপুরের রাজবাড়ীটি প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস বহন করে যাচ্ছে।
কালের পরিক্রমায় রাজবাড়ীটি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। তবে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় রাজবাড়ীটি রক্ষায় কাজ শুরু হয়েছে। জঙ্গল পরিস্কার, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নতুনরূপে রাজবাড়ীটির রূপ দিতে কাজ চলছে। ৪০০ বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক বাড়িটি রক্ষায় জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পর্যটক ও স্থানীয়রা। জানা গেছে, দিনাজপুর শহর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বটতলা মোড়ের কাছে নিরিবিলি মনোরম এক গ্রামীণ পরিবেশে মোঘল শাসনের আগে ও পরের তিন আমলের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের চিত্রসংবলিত রাজবাড়িটি অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘রাজবাটি’ নামে পরিচিত।
দিনাজপুর শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁওগামী মহাসড়কের চিরিরবন্দর সংযোগ সড়কের মোড় থেকে রাজবাটির দূরত্ব ১ কিলোমিটার। রাজবাড়ির বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু গুটিকয়েক স্থাপনা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। রাজবাড়ির প্রবেশ পথে পশ্চিমমুখী একটি মিনার আকৃতির সাদা বিশাল তোরণ আছে। রাজবাড়ির সীমানার মধ্যে তোরণের কিছু দূরে বাম দিকে একটি উজ্জ্বল রং করা কালিয়া জিউমন্দির এবং ডান দিকে রাজবাড়ির বহিঃমহলের কিছু ধ্বংসাবশেষ আছে। রাজবাড়ির কালিয়া জিউমন্দির নির্মিত হয়েছিল আঠারো শতকে। তখন থেকেই পূজা-অর্চনা হয়ে আসছে। মন্দিরের ভেতরে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি। শ্রীকৃষ্ণের মন্দির প্রাঙ্গণের পাশে আরেকটি মণ্ডপ। এটি দুর্গাপূজার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মন্দিরের সমসাময়িককালে।
চারদিকে টানা বারান্দা, মাঝখানে খোলা চত্বর আর বারান্দার মাঝখানে ঠাকুরের স্থান। পূজার সময় লোক আসে দূর-দূরান্ত থেকে। রাজা রামনাথের রাজত্বকালে (১৭২২-১৭৬০ সালে) রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা শুরু হয়। দরজার পেছনে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় রাজবাড়ির একাংশ। বড় গাছগাছালির মধ্যে একতলা বা দোতলা প্লাস্টার খসে যাওয়া ভবন দাঁড়িয়ে আছে। দিনাজপুর রাজবাড়ি প্রায় সতেরো একর জায়গাজুড়ে বানানো হয়েছিল। রাজবাড়ি প্রধানত তিনটি মহল বা ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত, যথাক্রমে- আয়নামহল, রানীমহল ও ঠাকুরবাটিমহল। বাঁ পাশের মহলের নাম আয়নামহল। প্রবেশমুখের আদল মিনারের মতো গোলাকার। দরজা তিনটি।
ভেতরে বিশাল উঠান আর উঠানের চারধারে বর্গাকৃতির দোতলা মহল। কোনো দেয়ালে এখন আর আবরণ নেই। ইটের পাঁজর বেরিয়ে পড়েছে, দেয়ালের গা বেয়ে উঠছে আগাছা, গাছপালায় ছেয়ে গেছে আঙিনা। দিনাজপুর রাজবাড়ি ও রাজ্য রাজা দিনরাজ ঘোষ স্থাপন করেন। কিন্তু অনেকের মতামত পঞ্চদশ শতকের প্রথমার্ধে ইলিয়াস শাহির শাসনামলে সুপরিচিত ‘রাজা গণেশ’ এই বাড়ির স্থপতি। রাজা দিনরাজ ঘোষ গৌড়েশ্বর গণেশনারায়ণের (১৪১৪-১৪১৮ খ্রি.) অন্যতম রাজকর্মচারী। তিনি ছিলেন উত্তর রাঢ়ের কুলীন কায়স্থ।
রাজা দিনরাজের নাম থেকেই রাজ্যের নাম হয় ‘দিনরাজপুর’, যা বরেন্দ্র বঙ্গীয় উপভাষায় পরিবর্তিত হয়ে হয় দিনাজপুর। গৌড়সংলগ্ন সনাতনি রাজ্য দিনাজপুর পাঠান, মুঘল ও নবাবদের বহু যুদ্ধে পরাস্ত করেছে। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরী দিনাজপুরের জমিদার হন।
কিন্তু শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরীর ছেলের অকাল মৃত্যু হওয়াতে, তাঁর ভাগ্নে সুখদেব ঘোষ তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন। ১৭২২ সাল থেকে জমিদার প্রাণনাথের চল্লিশ বছরের শাসনকালে দিনাজপুর রাজ্য বাংলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি ও তাঁর পুত্র রামনাথ উভয়েই বাংলায় বর্গির আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করেন বলে কথিত রয়েছে।
মন্তব্য করুন