

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের খননকাজের কারণে কাওলাবাজার থেকে দক্ষিণখান বাজার পর্যন্ত প্রায় ২.৫ কিলোমিটার সড়ক দুই বছর ধরে ভগ্নদশায় পড়ে আছে।
চার মাস আগে শিয়ালদাঁগা সড়ক থেকে কাওলাবাজার পর্যন্ত আরেক অংশে খননকাজ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
সোমবার বিকেলে শিয়ালদাঁগা সড়কের বাসিন্দা তানভীর আহমেদকে মাঝারি সাইজের একটি স্যুটকেস ও একটি ভারী ব্যাগ হাতে নিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে কোনো যানবাহন না থাকায় তিনি বাধ্য হন হেঁটে যেতে।
রাজশাহী থেকে আসা তানভীর বলেন, এই ভারী ব্যাগগুলো নিয়ে আমার বাসায় যেতে আমাকে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটতে হয়, কারণ এই রাস্তা দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না।
কাওলাবাজার থেকে দক্ষিণখান বাজার হয়ে শিয়ালদাঁগা সড়ক পর্যন্ত প্রায় ২.৫ কিলোমিটার সড়ক ঝড়ের পানি নিষ্কাশন লাইন বসানোর কাজে খনন করে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, দক্ষিণখান বাজার থেকে নর্দান ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশে দুই বছর ধরে কাজ চলছে। যদিও পাইপলাইন বসানো হয়েছে, তবে এর সামান্য কিছু অংশ কার্পেটিং করেছে ডিএনসিসি। অন্যদিকে, শিয়ালদাঁগা সড়ক থেকে কাওলাবাজার পর্যন্ত অংশে চার মাস আগে খননকাজ শুরু হওয়ায় সড়ক পুরোপুরি চলাচল করা যাচ্ছে না।
রাস্তাটির বেহাল দশায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নর্দান ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা রাণী রায় বলেন, আগে কাওলাবাজার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ৫ মিনিটের পথ ছিল। এখন হেঁটে যেতে ২০ মিনিট লাগে। রিকশাভাড়া যেখানে ২০ টাকা ছিল, এখন দিতে হচ্ছে ৬০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির সময় এই রাস্তা আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। কাদামাটি পিচ্ছিল হয়ে যায়, একবারে হাঁটাই যায় না।
মিরপুর-১৩ ও গাজীপুর থেকে আসা নর্দান ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ও তায়েবা জান্নাত বলেন, প্রতিদিনের যাতায়াত এখন ক্লান্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারা বলেন, বাস থেকে নেমে রিকশা নিতে হয়, তারপর আরও ১৫ মিনিট হেঁটে যেতে হয়। আগে যেখানে ৩০ টাকায় যাতায়াত হতো, এখন ঘুঁরে যাওয়ার কারণে ভাড়া লাগে ১২০ টাকা।
স্থানীয় মোহাম্মদ মোনির জানান, দক্ষিণখান বাজার থেকে শিয়ালদাঁগা সড়ক পর্যন্ত কাজ চলছে দুই বছর ধরে, আর নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে কাওলাবাজার পর্যন্ত কাজ চলছে ছয় মাস হলো।
শিশুরাও সমস্যায় পড়ছে। খিলক্ষেত কাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর নাহার মিম বলেন, বৃষ্টির দিনে ১০ মিনিটের পথ হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। কাদা কারণে হাঁটা যায় না।
রাস্তার এই অবস্থা নিয়ে ব্যবসায়ীরাও হতাশ। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. রাসেল বলেন, আয়ের অর্ধেক কমে গেছে। গত দুই মাসের ভাড়া দিতে পারিনি। রাস্তায় কোনো ক্রেতা আসে না, গাড়িও ঢুকতে পারে না।
শিয়ালদাঁগা সড়কের ৪৩নং বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক তাসলিমা আক্তার বলেন, ভাড়াটিয়ারা আর বাসা নিতে চায় না, কারণ আসবাবপত্র আনা–নেওয়া প্রায় অসম্ভব। আগে আমাদের গ্যারেজে ৯-১০টি গাড়ি থাকত। এখন একটি নেই। মালিকেরা বাইরে অন্য জায়গায় ভাড়া দিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছেন, মাসে ২-৩ হাজার টাকা খরচ করে। রাস্তাটি অনেকদিন ধরেই খারাপ, বৃষ্টিতে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এই ড্রেনেজ কাজ স্বস্তি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু উল্টো ভোগান্তি বেড়েছে।
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিলম্বের কথা স্বীকার করে বলেন, কিছু মানুষ সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য জায়গা ছাড়তে অনিচ্ছুক। এতে কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার।
মন্তব্য করুন
