সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় লাম্পি স্কিন ও খুরারোগের প্রাদুর্ভাব: টিকার সংকটে খামারিরা দিশেহারা

মো. দুলাল মিয়া, কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১১ পিএম
লাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) আক্রান্ত গরু। ফাইল ছবি
expand
লাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) আক্রান্ত গরু। ফাইল ছবি

কুমিল্লায় গবাদি পশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত রোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ও খুরারোগ (এফএমডি)।

গত দুই মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় এক লাখ গরু এসব রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের।

তাদের ভাষ্যমতে, এ সময়ের মধ্যে মারা গেছে ১০ হাজারের বেশি গরু, যার বেশির ভাগই বাছুর। টিকার তীব্র সংকটের কারণে খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ১৭টি উপজেলায় ছোট-বড় ৪ হাজার ৫৮৭টি খামারে প্রায় ১২ লাখ গরু রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত টিকার অভাবে রোগ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

তাঁরা বলছেন, আগের তুলনায় এবার টিকার বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম চললেও লাম্পি স্কিন ডিজিজের ভ্যাকসিনে সংকট তীব্র।

নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, চৌদ্দগ্রাম, বরুড়া, চান্দিনা, হোমনা ও বুড়িচং উপজেলায় রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় গত দুই মাসে ১০ হাজারের বেশি গরু মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।

নাঙ্গলকোটের রায়কোট গ্রামের কৃষক মজিবুল হক, আব্দুল খালেক, রেজু হাজারী ও ইয়াছিন মোল্লাসহ অনেকে জানান, তাঁদের গরু খুরারোগে মারা গেছে। গোমকোট গ্রামের আব্দুল মান্নানের চারটি ও পেরিয়া গ্রামের মাহবুবুর রহমানের দুটি গরু মারা গেছে বলে তাঁরা জানান।

এদিকে লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর দেখা দেয়, এরপর খাবারে অনীহা, নাক-মুখ দিয়ে লালা পড়া, পা ফুলে যাওয়া এবং শরীরে পি-আকৃতির ক্ষত তৈরি হয়। ক্ষত থেকে রক্ত ও পুঁজ বের হয়, ফলে শরীর ফুলে যায়। মুখের ভেতরের ক্ষতের কারণে গরু পানি ও খাদ্য গ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে খুরারোগে গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, মুখ ও পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়, ফেনাযুক্ত লালা পড়ে এবং খোঁড়াভাব দেখা দেয়। গর্ভবতী গাভীর গর্ভপাত ও দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বিশেষ করে ৬ মাসের কম বয়সি বাছুরের মৃত্যুহার প্রায় ৯৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

এ বিষয়ে নাঙ্গলকোটের গোমকোট গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কেনা গাভী ও বাছুর খুরারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল থেকে ১,৫০০ টাকার ওষুধ নিলেও কোনো কাজ হয়নি। পরে হোমিও ও বনজ ওষুধে কিছুটা উপকার পেয়েছি।

বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ডাপুর গ্রামের খামারি সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী অভিযোগ করে বলেন, আমার খামারে ৩০০ গরু আছে। নিয়মিত টিকা দিই, কিন্তু এবার কোনো টিকা পাইনি। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকেও কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।”

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল আল মামুন সাগর বলেন, খুরারোগের তুলনায় এবার লাম্পি স্কিন ডিজিজ বেশি দেখা যাচ্ছে।

শুধু আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২০টি গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে ভ্যাকসিনের সংকট রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামছুল আলম বলেন, আমরা প্রতিটি খামার নিয়মিত পরিদর্শন করছি। খুরারোগ কিছুটা বেড়েছে, তবে টিকার স্বল্পতার মধ্যেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। অনেক গরু ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছে।

স্থানীয় খামারিরা বলছেন, টিকা সংকট দ্রুত সমাধান না হলে কুমিল্লার গবাদি পশু খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন