শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বগুড়ায় বিয়ের তুলনায় বেড়েছে তালাকের হার

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম
ফাইল ছবি
expand
ফাইল ছবি

বগুড়ায় ক্রমেই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে তালাকের সংখ্যা। জেলার বিবাহ নিবন্ধনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রতি বছর যতটি বিয়ে হচ্ছে, তার প্রায় অর্ধেকই শেষ হচ্ছে বিচ্ছেদে।

বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মাদকাসক্তি ও পরকীয়ার মতো নানা কারণে নতুন সংসারগুলো স্থায়িত্ব হারাচ্ছে, যার মাধ্যমে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের মানসিক বিকাশে।

বগুড়া জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে জেলার ১২টি উপজেলায় নিবন্ধিত হয়েছে ৮০ হাজার ৫২৭টি বিয়ে এবং একই সময়ে তালাকের ঘটনা ঘটেছে ৩৮ হাজার ৪০৮টি।

* ২০১৯-২০ অর্থবছর: বিয়ে ১৬,৬৪৫টি, তালাক ৭,৮৫৫টি

* ২০২০-২১ অর্থবছর: বিয়ে ১৪,৮৯০টি, তালাক ৬,৮৩০টি

* ২০২১-২২ অর্থবছর: বিয়ে ১৫,০৮০টি, তালাক ৭,৩৫৫টি

* ২০২২-২৩ অর্থবছর: বিয়ে ১৫,০৮০টি, তালাক ৭,৩৫৫টি

তথ্য বলছে, তালাকের আবেদনকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে তালাকের হার আরও বেশি। গ্রামাঞ্চলে স্বামীদের মাদকাসক্তি ও জুয়া খেলার প্রবণতা সংসার ভাঙনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকাশী ইউনিয়নের কাজি মো. সুজন মিয়া বলেন, অনেক স্বামী জুয়ায় আসক্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। এরপর সংসারের ব্যয় বহন করতে না পারায় দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরে।

অন্যদিকে শহরাঞ্চলে অহংবোধ, পরকীয়া, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবকেই বিচ্ছেদের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদ আজাদ লিংকন জানান, নেশা ও পরকীয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ায় ইতিবাচক দিক থাকলেও কখনো কখনো তা অহংবোধে রূপ নেয়, ফলে দাম্পত্য সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ে।

শিশু আদালতের পিপি ও সমাজকর্মী সুফিয়া বেগম বলেন, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় সন্তান। একজনের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়ে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

বগুড়ার সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল হান্নান মনে করেন, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, যৌথ পরিবারের অভাব, আর্থিক স্বাধীনতা ও পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতা সব মিলিয়েই তালাকের হার বাড়ছে।

জেলা রেজিস্ট্রার সিরাজুল করিম বলেন, “নারীরা এখন অন্যায়ের প্রতিবাদে সচেতন হয়ে উঠেছেন। তবে দাম্পত্য টিকিয়ে রাখতে সহনশীলতা ও পরস্পরের প্রতি ছাড় দেওয়ার মানসিকতা জরুরি।”

সুশীল সমাজের মতে, পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চা বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে বগুড়ায় বিয়ের তুলনায় তালাকের এই ঊর্ধ্বগতি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ সামাজিক সংকট তৈরি করতে পারে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন