

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দক্ষিণাঞ্চলকে বলা হয় দেশের মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। এই দক্ষিণাঞ্চলের সাগর তীরবর্তী একটি জেলা বরগুনা। দেশের দ্বিতীয় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এই জেলাতেই অবস্থিত। এখানকার কয়েক লাখ জেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে দিন দিন এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন জেলেরা। অনেকে জীবীকা নির্বাহের জন্য বিকল্প আয়ের মাধ্যম বেছে নিয়েছেন।
বিভিন্ন এনজিওর ঋণ ও মহাজনদের দাদন পরিশোধের চাপ, কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়া, একের পর এক নিষেধাজ্ঞা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি, জলদস্যু আতঙ্ক ও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে এই পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা, এমনটাই জানিয়েছেন জেলেরা।
                                    
দেশের মোট চাহিদার ৪০ ভাগ মাছ আসে সাগর, নদ-নদীসহ প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে। জেলেরা এসব উৎস থেকেই মাছ শিকার করে সকলের সামুদ্রিক মাছের চাহিদা মেটায়। তারা পেশা পরিবর্তন করলে সামুদ্রিক মাছের ব্যপক চাহিদা দেখা দিবে৷ তাই জেলেরা যাতে এই পেশায় থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য সরকারে সহযোগিতা কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে জেলেদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অতীতে জেলে পেশা দিয়ে খুব ভালোভাবেই সংসার চলত। এখন এ পেশার পাশাপাশি অন্য কাজ না করলে তিনবেলা খাবারের ব্যাবস্থা হয় না। সাগরে মাছ না থাকায় অনেক সময় লোকসানে পরতে হয়৷ তাই তারা বিকল্প পেশা খুঁজছেন।
সদর উপজেলার বাওয়ালকর এলাকার জেলে বাবুল মাঝি বলেন, "আমি ৪০ বছর ধরে মাছ ধরে আসছি৷ আগে যেমন তেলের দাম ছিল তাতে ভালো করেই থাকতে পেরেছি। কিন্তু এখন তেলের দাম চড়া, এতে আমাদের ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে হিমশিম খেতে হয়৷ সাগর থেকে এসে অন্য কাজ না করলে পোষায় না৷ সাগরে গিয়ে এখন আর লাভ নাই৷ অন্য পেশা দিয়ে যদি কোনভাবে বেঁচে থাকতে পারি"।
আরেক জেলে ফোরকান মিয়া বলেন, "সব মালামালের দাম বেড়েছে৷ চাল,ডাল, তেল, বরফ সবকিছুই কিনতে হয় অধিক দামে৷ এভাবে জীবন চালানো কষ্টকর। মাছ ধরার সিজন থাকে ৫ মাস। এর আড়াই মাসই থাকে নিষেধাজ্ঞা। বাকি আড়াই মাসে ঝড়ঝাপটা-বৈরী আবহাওয়া থাকে৷ এরমধ্যে পৌষমাসে মাছ ধরে পোষায় না। এখন শুধুমাত্র জেলে পেশা দিয়ে সংসার চালানোর মত কোন উপায় নাই৷ তাই অন্য পেশা খুঁজছি"।
নলী এলাকার জেলে আনোয়ার বিশ্বাস বলেন, "সাগরে ইলিশ তেমন পাওয়া যায়না৷ মাঝে মাঝে খুব ইলিশ ওঠে৷ কিন্তু আগে সাগরের কিছু পয়েন্টে মাছ পাওয়া যেতই৷ এখন আর সেসব পয়েন্টও মাছ নেই৷ এই পেশায় এখন লাভের চেয়ে লোকসান বেশি৷ সাগর থেকে এসেও আমাদের অন্য কাজ খুঁজতে হয়, তারচেয়ে জেলে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়াই ভালো। অন্য পেশায় নিশ্চিত থাকা যায় যে দিনশেষে কিছু হলেও মজুরি পাব"।
তালতলীর সোনাকাটা এলাকার জেলে শামীম মিয়া বলেন, "আগে সাগরে যে মাছ পাওয়া যেত তা বিক্রী করে নিজেরাও খাওয়ার জন্য নিয়ে আসতাম। বর্তমানে সাগরেও মাছের আকাল। আগে যেসব পয়েন্টে মাছ পেতামই এখন সে যায়গাগুলোতেও মাছ নেই। তারমধ্যে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানান প্রতিকুলতা তো আছেই। তাই বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছি"।
এদিকে মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসূমে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এসময় ইলিশ আহরণ, বিপনন, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ। এসময় মাছ ধরতে পরছে না বরগুনা উপকূলের জেলেরা। ফলে চরম আর্থিক সঙ্কটে পরেছে তারা। সরকার জেলে প্রতি ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ দিলেও তা দিয়ে মূলত তেমন কোন উপকার হচ্ছে না জেলেদের। আবার প্রকৃত সকল জেলেরাও এই খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলো মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই আমরা জেলেদের অভিযোগ সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। এবছর প্রায় ৩৮ হাজার জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ এসেছে। আমরা প্রতিবছরই চাই যে সকল জেলেদের জন্যই চাল পরিপূর্ণভাবে আসুক। সেভাবে আমরা একটা আবেদনও দেই। কিন্তু এটা আসলে নীতি নির্ধারক মহলের ইস্যু। এটা আমাদের হাতে না। আমরা যেটাই করি বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে করি। আশা করি এ সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
প্রসঙ্গত, বরগুনার ৬ উপজেলায় মোট ৪৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এসব জেলেদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় দরিদ্র প্রায় ৩৮ হাজার জেলেকে চাল সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়াও দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গত ২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৭৫৫ জনকে ছাগল বিতরণ করা হয়। এবং ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় জেলার ৫৬০ জন জেলেকে বিকল্প আয়ের উৎস্য সৃষ্টির লক্ষ্যে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়।
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
