শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খাঁচাবন্দি হচ্ছে ইতিহাস: বিবির পুকুর ঘিরে নতুন বিতর্ক

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
ছবি সংগৃহীত
expand
ছবি সংগৃহীত

বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষী জলাশয় বিবির পুকুর ঘিরে আবারও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। নগর সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে পুকুরে ফোয়ারা স্থাপনসহ সংস্কারকাজ চললেও দক্ষিণ পাশে লোহার তৈরি বিশাল খাঁচা বা গ্রিল বসানোর উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই খাঁচা পুকুরের মুক্ত আকাশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঢেকে দেবে। নগরবাসীর আশঙ্কা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই জলাশয় তার স্বাভাবিক রূপ হারাবে। এর আগে নগরীর বেলস পার্ক লেক ঘিরে দেওয়ার উদ্যোগের বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদের মুখে কাজ স্থগিত করতে হয়েছিল সিটি করপোরেশনকে।

খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক উইলিয়াম কেরি ১৮০০ সালের দিকে বরিশালে এসে পর্তুগিজ দস্যুদের হাত থেকে এক মুসলিম নারীকে উদ্ধার করেন। নাম রাখা হয় জিন্নাত বিবি। নিঃসন্তান এই নারী ১৯০৮ সালে মানুষের কল্যাণে নিজের জমিতে একটি বৃহৎ জলাশয় খনন করেন—যার নামেই পরিচিত হয় বিবির পুকুর।

প্রায় ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮৫০ ফুট প্রস্থের এই পুকুর একসময় দুটি খালের মাধ্যমে কীর্তনখোলা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। জোয়ারে নদীর পানি ও মাছ এসে ভরাত পুকুরটি। সময়ের ব্যবধানে সেই খাল আজ বিলুপ্ত, ফলে পুকুরও পরিণত হয়েছে বদ্ধ জলাশয়ে।

প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেনের সময় পুকুর ঘিরে পার্ক, বেঞ্চ, আলোকসজ্জা ও ফোয়ারাসহ সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই সৌন্দর্য দীর্ঘদিন ধরে হারিয়ে গেছে। দক্ষিণ পাশে গড়ে ওঠে অবৈধ দোকানপাটও।

স্থানীয় কবি ও ইতিহাসবিদ হেনরি স্বপন বলেন, “একসময় বিবির পুকুর ছিল বরিশালের গর্ব। এখন সেখানে মাছ চাষ, ময়লা আর দোকানের ভিড়ে হারিয়ে গেছে আগের রূপ। যে শহর নিজের জলাশয় বাঁচাতে পারে না, সে তার ইতিহাসও টিকিয়ে রাখতে পারে না।”

বরিশাল সিটি করপোরেশনের বাজার কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ভাড়া তুলছিলেন—তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। বৈধ ব্যবসায়ীদের স্টিকার দেওয়া হচ্ছে, প্রতিদিন ৫০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, “ফোয়ারার কাজ প্রায় শেষ। কাজ সম্পন্ন হলে বিবির পুকুর আগের সৌন্দর্য ফিরে পাবে। পুকুরে ময়লা না পড়ার জন্যই দক্ষিণ পাশে গ্রিল ও নেট বসানো হচ্ছে।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন