

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দেশ-বিদেশে পাবনার শুটকির ব্যাপক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দেশীয় মাছ বাজারে আবির্ভাবের (চলনবিল ও গাজনার বিলের পানি শুকানোর) পূর্বেই শুটকির উৎপাদন শুরু করেছে পাবনার শুটকি খামারিরা।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যানুযায়ী এ বছর জেলায় শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১৫০ টন। তবে চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে খাল-বিল থেকে দেশীয় মাছ শিকারের কারণে মাছের অভাবে শুটকি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পুরণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট'রা।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলনবিল ও গাজনাবিল পাড়ে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল। চাটমোহর উপজেলার চলনবিল এলাকার বোয়াইলমারী ব্রিজ সংলগ্ন চাতাল, সুজানগরের মসজিদপাড়া বালুরচর শুটকি খামার, গাজনাবিল পাড়ে চরদুলাই, সাঁথিয়ার সাতানীর চর, আরাজী গোপিনাথপুর, হুইখালী, কলাগাছী ও রঘুনাথপুর, বেড়া উপজেলার কৈটলার শুটকি ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী চাতাল নির্মাণ করে শুটকি উৎপাদন করে থাকে।
জানা যায়, সুস্বাদু হওয়ায় পাবনার শুঁটকির বেশ চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশে।স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাবনার শুটকি দেশের সবচেয়ে বড় শুটকি বাজার নীলফামারি জেলার সৈয়দপুরে ও ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা সহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
সেখান থেকে পৃথিবীর অন্তত ১৫ টি দেশে রপ্তানি হয় এখানকার শুঁটকি। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, শুটকি খামারিদের প্রণোদনার মাধ্যমে রপ্তানীমুখী এই শিল্পখাতকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট'রা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম দুইটি বিল এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখানে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। তারা সারাবছর এলাকার খাল,বিল ও পুকুর থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। যেকারণে এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে শুঁটকি তৈরির চাতাল।
স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিলের পানি কমতে থাকলে চলনবিল ও গাজনাবিলের বিভিন্ন স্থানে জেলেদের জালে ধরা পড়ে পুঁটি, খলসে, চেলা, ট্যাংরা, কৈ, মাগুর, শিং, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, গুচিবাইম, বোয়াল, ফলি, কাতলা, নওলা, শোল, গজারসহ নানা জাতের মাছ। এসব মাছ কিনে চাতালে শুকিয়ে উৎপাদন করা হয় শুঁটকি। পরে এ শুঁটকি পাঠানো হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও দেশের অভ্যান্তরে বিভিন্ন স্থানে।
দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাতাল থেকে পছন্দের শুঁটকি কিনে নেন। এসব শুঁটকি মানভেদে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেডের (ভালোমানের) শুঁটকি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্তত ২০টি দেশে রপ্তানি হয়।
এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের কাছে চলনবিল ও গাজনার বিলের শুঁটকির কদর রয়েছে। এছাড়া ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের শুঁটকি দেশের ভেতরে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও এসব শুটকির চাতালে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে জেলার প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক।একেকটি চাতালে গড়ে ১০ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন। পুরুষ শ্রমিকরা শুটকির চাতালে ও নারী শ্রমিকরা মাছ বাছাইয়ের করেন দিন হাজিরায়।
সুজানগর মসজিদপাড়া'র শুঁটকি ব্যবসায়ী আজাদ কমিশনার বলেন, গাজনার বিলের মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শুঁটকি তৈরি করে সৈয়দপুর, ভাঙা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনরকম প্রণোদনা না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিপক কুমার পাল বলেন, এবছর জেলায় শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ টন। ইতিমধ্যেই ৩০ জন শুটকি ব্যবসায়ীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তবে কোন প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই।
মন্তব্য করুন