রবিবার
১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গরিবের ১০ হাজার বস্তা চাল পড়ে আছে গুদামে, ৪ মাসেও হয়নি বিতরণ

মো. মিনহাজ আলম, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১১ এএম
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নারীবিষয়ক কর্মকর্তা (ইনসেটে) ও তার কার্যালয়।
expand
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নারীবিষয়ক কর্মকর্তা (ইনসেটে) ও তার কার্যালয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে দীর্ঘ চার মাস ধরে ভিডব্লিউবি সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৯ হাজার ৮৩২ বস্তা চাল গুদামে পড়ে আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এসব চাল সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ না করে গুদামে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে।

এতে চাল বিতরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তার অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে চাল না পাওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সুবিধাভোগীরা সহ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে।

জানা গেছে, গত জুলাই মাসে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে লটারির মাধ্যমে ২ হাজার ৪৫৮ জন সুবিধাভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করে বদলী হয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ এবং বদলি হয়ে যাওয়া ইউএনওর পর নতুন ইউএনও মফিজুর রহমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে কয়েক দফা ডেকপ দ্রুত চাল বিতরণের নির্দেশ দিলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেননি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বরং অভিযোগ রয়েছে, পূর্বের ইউএনও’র চূড়ান্ত করা তালিকা পরিবর্তন করে প্রায় ২৫০ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু সেটাতে তিনি ব্যর্থ হন। পরে ইউএনও স্বাক্ষর না করে আগের ইউএনও'র চূড়ান্ত করা তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ করতে নির্দেশ দেন।

এদিকে লটারীর মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের যাচাই বাছাইয়ের পর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুওসুও ইউনিয়ন, ধনতলা ইউনিয়ন ও চাড়োল ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন এক মাস আগে। অভিযোগের বিষয়ে জবাব চাইলেও সন্তোষ জনক জবাব দেননি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক।

ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান ও সচিবরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন লটারিতে বিজয়ী সুবিধাভোগীরা চালের খবর জানতে ইউনিয়ন পরিষদে ভিড় করছেন। কিন্তু মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সঠিক নির্দেশনা না আসায় তারা কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা গেছে, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসের জন্য বরাদ্দ ৩০ কেজি ওজনের চালের বস্তাগুলো গুদামেই পড়ে আছে। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বিতরণে উদ্যোগ না নেওয়ায় গুদামে অতিরিক্ত চাল জমে সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে গুদাম কর্মকর্তারাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা শাখাওয়াৎ হোসেন জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রমের আওতায় সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দ করা চার মাসের ৩০ কেজি ওজনের ৯ হাজার ৮'শ ৩২ বস্তা চালের বস্তা গুদামে পরে আছে।

বার বার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বলার পরও তিনি চালগুলো বিতরণের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এর মধ্যে নভেম্বরে চাল চলে আসবে। গরীবের চাল আটকে রাখা ঠিক হয়নি। আমরাও নিরুপায়, কিছু করার নেই।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ বলেন, গরিব মানুষের জন্য ৩০ কেজি চাল মানে বড় সহায়তা। মাসের খাবার চলে যায় এই চাল দিয়ে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। কর্মকর্তাদের তো চাল কিনতে হয় না, চালের জন্য অপেক্ষাও করতে হয় না। তাই গরীবের কষ্ট তারা বোঝে না।

তালিকা পরিবর্তনের অভিযোগ স্বীকার করে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক জানান, নতুন তালিকার স্বাক্ষর হয়ে গেলেই চাল বিতরণ শুরু হবে। এবং গরীবের চাল এতদিন ফেলে রাখা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার কিছু করার নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, বিতরণের জন্য আনা চাল গুদামে ফেলে রাখার কোনো সুযোগ নেই। বার বার বলার পরেও চাল বিতরণ করেনি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।

বদলি হওয়া উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ স্পষ্টভাবে জানান, পূর্বের তারিখ দিয়ে সুবিধাভোগীদের তালিকায় স্বাক্ষরের প্রশ্নই উঠেনা। লটারীতে যাদের নাম উঠেছে, তারাই চাল পাওয়ার অধিকারী।

২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বালিয়াডাঙ্গীতে যোগদান করেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়মের কারণে আলোচনার শিরোনামে ছিলেন তিনি। ৮ বছরে ৭ জন ইউএনও বদলি হলেও তিনি একই পদে বহাল আছেন এবং পাশাপাশি রাণীশংকৈল উপজেলাতেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন