শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেই বাবা-মা, ৯ বছরের শিশুর কাঁধে সংসারের ভার

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম
বাংলাদেশের গৌরব বয়ে আনা হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকি
expand
বাংলাদেশের গৌরব বয়ে আনা হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকি

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মাদারবাড়িয়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী মরিয়ম খাতুনের জীবনে নেমে এসেছে গভীর অন্ধকার। বয়স যখন খেলাধুলা আর স্কুলের বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা, তখনই সে হারিয়েছে মা-বাবা দুজনকেই। এখন ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে এই ছোট্ট শিশু।

প্রায় পাঁচ বছর আগে স্ট্রোকে মারা যান মরিয়মের বাবা ওয়াজেদ আলী। বাবার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে অভাবের ছায়া। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২৩ দিন আগে একই কারণে মারা যান মা আজিমা খাতুন। এরপর থেকে একমাত্র ভাই ইসমাইল হোসেনকে নিয়ে শুরু হয় মরিয়মের সংগ্রাম।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মরিয়মের বয়স মাত্র নয়। তবুও সে সকাল-বিকেল নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট ভাইয়ের খাওয়া-দাওয়া, গোসল, স্কুলে যাওয়া, এমনকি রাতের ঘুম পর্যন্ত নিজেই দেখাশোনা করে। ইসমাইলের বয়স ছয় বছর, সে স্থানীয় একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি আছে।

খানমরিচ ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, “বাচ্চা দুটির বাবা প্রায় পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। মা একা হাতে কষ্ট করে সন্তানদের বড় করছিলেন। কিন্তু ২৩ দিন আগে তিনিও মারা যাওয়ায় দুই শিশুই এখন সম্পূর্ণ এতিম হয়ে পড়েছে। তবুও মরিয়ম হাল ছাড়েনি—ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে একাই টিকে থাকার চেষ্টা করছে।”

মরিয়মের প্রতিবেশী হোসেন আলী জানান, “ওদের ঘরে এখন কেউ নেই। ছোট্ট মরিয়ম-ইসমাইলকে পাড়ার মানুষ মিলে দেখাশোনা করছি। তাদের ঘরের অবস্থা খুবই খারাপ, জমি-জমা কিছুই নেই। সমাজের সচ্ছল মানুষরা যদি একটু সাহায্যের হাত বাড়ান, তাহলে ওরা অন্তত টিকে থাকতে পারবে।”

ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ও হিউম্যান ওয়েলফেয়ার রিসোর্স সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুব উল আলম বাবলু বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমরা শিশু দুটির পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এমন অসহায় পরিবারের জন্য সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। যতটা সম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করা হবে।”

নয় বছরের এই ছোট্ট মরিয়ম এখন মা-বাবার অনুপস্থিতিতে একাই নিজের ও ভাইয়ের ভবিষ্যতের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজের সহানুভূতি ও সহযোগিতাই পারে এই শিশু দুটির জীবনে নতুন আলো ফিরিয়ে আনতে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন