

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, ইরান ও ইয়েমেনের পর সম্প্রতি কাতারে ইসরাইলের বিমান হামলা আঙ্কারায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তেলআবিবের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে এখন তুরস্কও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঘটনার পরপরই মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল রুবিন সতর্ক করে বলেন, তুরস্ক হতে পারে ইসরাইলের পরবর্তী টার্গেট, আর ন্যাটো সদস্যপদও হয়তো তুরস্ককে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট হবে না। ইসরাইলি বিশ্লেষক মেইর মাসরিও সামাজিক মাধ্যমে লেখেন—“আজ কাতার, কাল তুরস্ক।”
এর জবাবে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের একজন উপদেষ্টা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, তুরস্কের ওপর হামলার চিন্তা করলে ইসরাইলকে ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে।
গত কয়েক মাসে ইসরাইলি গণমাধ্যমে তুরস্ককে “সবচেয়ে বড় হুমকি” হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের উপস্থিতি ও যুদ্ধোত্তর সিরিয়ায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা—এসবকে নতুন চ্যালেঞ্জ বলে দেখছে ইসরাইল।
আগস্টে গাজায় হামলার প্রেক্ষিতে তুরস্ক ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করে পাল্টা বার্তা দেয়। আঙ্কারার মতে, ইসরাইল সীমা অতিক্রম করছে এবং এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে।
তুরস্কে আরও একটি প্রশ্ন উঠেছে—ন্যাটো কতটা কার্যকর প্রতিরক্ষা জোট? কারণ, কাতারের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রের ওপর ইসরাইলি হামলার পরও পশ্চিমা শক্তিগুলোর দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ও তুরস্কের উদ্বেগ
ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণাকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আগস্টে এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, অবশ্যই, আমি এ ধারণায় বিশ্বাস করি। এ মন্তব্য আঙ্কারায় কেবল প্রতীকী হিসেবেই বিবেচিত হয়নি, বরং এটিকে তুরস্কের আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আল জাজিরাকে বলেন, গ্রেটার ইসরাইলের লক্ষ্য হলো—এই অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর এবং বিভক্ত করে রাখা।
এই প্রেক্ষাপটে, ইসরাইল শুধু গাজা বা পশ্চিম তীরেই নয়—সিরিয়া, ইয়েমেন, এমনকি তিউনিসিয়ায় গাজায় পাঠানো সাহায্য বহরে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি, ইরানের ওপর সামরিক হামলায় প্রবলভাবে অংশ নিয়েছে।
আঞ্চলিক আধিপত্য: সংঘাতের মূল রূপরেখা
ইসরাইলকে আঞ্চলিক একচ্ছত্র শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে প্রবণতা, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে জুলাইয়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে তুরস্কের দূত ও সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম বারাক স্বীকার করেন—ইসরাইল একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সিরিয়া চায় না।
সিরিয়ার ওপর একাধিক হামলা, লেবাননের দক্ষিণে হিজবুল্লাহ নেতৃত্বে আঘাত এবং ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ—এ সবই ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইল আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের একে একে দুর্বল করতে চাইছে।
সাবেক তুর্কি নৌ-অ্যাডমিরাল এবং ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ কৌশলের রূপকার সেম গুরদেনিজ বলেন, তুরস্ক ও ইসরাইলের প্রথম সংঘর্ষের ক্ষেত্র হতে পারে সিরিয়ার স্থল ও আকাশসীমা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ায় গ্রিস, গ্রিক সাইপ্রাস ও ইসরাইলের সমন্বয়ে সাইপ্রাসে যে সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটি শক্তিশালী হচ্ছে, তা তুরস্কের ব্লু হোমল্যান্ড নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণা, কাতারে ইসরাইলি হামলা, সিরিয়ায় আঞ্চলিক কর্তৃত্বের প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে আঙ্কারার চোখে এখন ইসরাইল একটি আগ্রাসী ও একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে পরিচালিত শক্তি।
অন্যদিকে তুরস্কও তার সামুদ্রিক ও আঞ্চলিক কৌশল নিয়ে এই আধিপত্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা।
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
 
 
                    