শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বড়দিনের সূচনা: যিশুখ্রিস্টের জন্ম ও উৎসবের ইতিহাস

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো বড়দিন
expand
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো বড়দিন

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো বড়দিন, যা প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর পালিত হয়। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, এই দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন তাঁদের ত্রাণকর্তা যিশু খ্রিস্ট।

পবিত্র বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, দুই হাজার বছরেরও আগে ইসরাইলের নাজারেথ শহরের এক ধর্মপ্রাণ কুমারী, মরিয়ম (মেরি), ঈশ্বরের বিশেষ পরিকল্পনায় গর্ভবতী হন।

স্বর্গদূত তাঁকে জানান যে তাঁর গর্ভে আসছেন ঈশ্বরের পুত্র, যিনি মানুষের মুক্তির পথ দেখাবেন। যদিও সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মে এটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, তবু মরিয়ম ঈশ্বরের ইচ্ছা সানন্দে গ্রহণ করেন। তাঁর বাগদত্তা যোসেফকেও এক দূত স্বপ্নে এসে জানান যে শিশুটি ঈশ্বরের পরিকল্পনারই অংশ, এবং যোসেফ মরিয়মকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।

সেই সময়ে রোমান সম্রাটের আদেশে আদমশুমারি চলছিল। নিজেদের পিতৃপুরুষের শহর বেথলেহেমে নাম নিবন্ধনের জন্য যোসেফ মরিয়মকে নিয়ে সেখানে যান। কিন্তু ভিড়ে থাকার কোনো জায়গা না পেয়ে তাঁরা এক গোয়ালঘরে আশ্রয় নেন। সেখানেই জন্ম নেন যিশু। নবজাতককে কাপড়ে জড়িয়ে পশুখাদ্যের পাত্রে শোয়ানো হয়।

যিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই ঘটতে থাকে কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা। স্বর্গদূতরা মাঠে থাকা রাখালদের যিশুর জন্মবার্তা দেন, তারা ছুটে গিয়ে তাঁকে উপহারসহ দেখতে আসেন। আকাশে দেখা দেয় এক উজ্জ্বল তারা, যা দেখে দূর দেশের জ্ঞানী পণ্ডিতেরা নবজাতকের খোঁজে বেথলেহেমে পৌঁছান এবং তাঁকে সোনা ও সুগন্ধি দ্রব্য উপহার দেন।

যিশু পরবর্তীতে মানুষকে মুক্তি ও প্রেমের বার্তা দিতে শুরু করেন। তিনি বহু অলৌকিক কাজ করেন, যা দেখে অনেকে তাঁর অনুসারী হন। তাঁর শিক্ষা ও কর্মকাণ্ড তৎকালীন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর বিরাগভাজন হয়। ষড়যন্ত্রে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, কিন্তু খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, তিন দিন পর তিনি পুনরুত্থিত হয়ে স্বর্গে ফিরে যান।

তবে যিশুর জন্মদিনকে ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালনের প্রথা অনেক পরে শুরু হয়। প্রাথমিক খ্রিস্টানরা তাঁর জন্মোৎসব পালন করতেন না। দ্বিতীয় শতাব্দীতে খ্রিস্টান পণ্ডিতেরা ধীরে ধীরে এই দিনটিকে ধর্মীয় উৎসবের মর্যাদা দেন। ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, ২০০ খ্রিস্টাব্দে মিসরে প্রথম বড়দিন পালনের প্রমাণ পাওয়া যায়। ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে সরকারি উদ্যোগে প্রথম বড় আকারে বড়দিন উদযাপন শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

সময়ের পরিক্রমায় বড়দিন ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আকারও ধারণ করে। মধ্যযুগে ইউরোপের রাজপরিবার ও রাজনৈতিক ঘটনাবলির প্রভাবে এ উৎসবের প্রচলন আরও বিস্তৃত হয়। কিছু সময় বড়দিনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিরোধিতা দেখা দিলেও পরবর্তীতে প্রায় সব খ্রিস্টান সম্প্রদায় দিনটিকে স্বীকৃতি দেয়।

ভারতবর্ষে প্রথম বড়দিন উদযাপনের প্রমাণ মেলে ১৬৬৮ সালে, কলকাতার সুতানুটি এলাকায় ইংরেজ বণিক জব চার্ণকের হাত ধরে। এরপর থেকে ভারতসহ উপমহাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায় দিনটি পালন করে আসছে।

আজ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উদযাপিত হয়। তবে রাশিয়া, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইউক্রেন, মিসর ও সার্বিয়ায় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ৭ জানুয়ারি ক্রিসমাস পালিত হয়। উত্তর ইউরোপীয়রা প্রাচীন শীত উৎসবের উপাদানও বড়দিনে যুক্ত করেছে, যার ফলে উৎসবে স্থান পেয়েছে শীতকালীন ঐতিহ্য।

দুই হাজার বছর আগে যিশু খ্রিস্ট মানুষকে যে প্রেম, শান্তি ও মুক্তির বার্তা দিয়েছিলেন, বড়দিনের উৎসব সেই বার্তাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই এটি এখন শুধু ধর্মীয় নয়, সার্বজনীন আনন্দ-উৎসবের রূপ পেয়েছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন