শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুদ্ধপূর্ণিমা : বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব

এনপিবিনিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৮ এএম
বুদ্ধপূর্ণিমা
expand
বুদ্ধপূর্ণিমা

বুদ্ধপূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বিশ্বজুড়ে এই দিনটি উদ্‌যাপিত হয়। গৌতম বুদ্ধের জীবনের তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনা— জন্ম, বোধিলাভ এবং মহাপরিনির্বাণ — একদিনেই সংঘটিত হওয়ায় দিনটি বৌদ্ধদের কাছে পবিত্রতম হিসেবে বিবেচিত হয়।

জন্ম: সিদ্ধার্থের আগমন

খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ সালে, কপিলবাস্তুর লুম্বিনীতে রাজা শুদ্ধোধন ও রানি মহামায়ার ঘরে জন্ম নেন সিদ্ধার্থ গৌতম। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাজপরিবারে নতুন প্রাণের আগমন আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। ‘সিদ্ধার্থ’ নামের অর্থ— ইচ্ছাপূরণকারী। তিনিই পরবর্তীকালে ‘গৌতম বুদ্ধ’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হন। ‘বুদ্ধ’ মানে — যিনি জ্ঞানের আলোয় জীবনের সত্য উপলব্ধি করেন এবং মানবকল্যাণে তা প্রচার করেন।

বোধিলাভ: বুদ্ধ হয়ে ওঠা

খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৮ সালে, বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে, ৩৫ বছর বয়সে সিদ্ধার্থ গৌতম বোধগয়ার বটগাছের নিচে গভীর ধ্যানের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করেন। এই বোধিলাভ তাঁকে ‘বুদ্ধ’ রূপে প্রতিষ্ঠা করে। তাঁর উপলব্ধির ভিত্তিতে তিনি জীবনের জন্য ‘মধ্যমার্গ’ নির্দেশ করেন — যা কঠোর তপস্যা ও অতিরিক্ত ভোগের মাঝামাঝি একটি সুষম পথ। এই শিক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে অষ্টাঙ্গিক মার্গ, যেখানে সৎ দৃষ্টি, সৎ সংকল্প, সৎ বাক্য, সৎ আচরণ, সৎ জীবিকা, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ মনন ও সৎ ধ্যান — এই আটটি নীতি জীবনের দুঃখ মোচনের দিশা দেয়।

মহাপরিনির্বাণ: বুদ্ধের দেহত্যাগ

খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪৩ সালে, বৈশাখী পূর্ণিমার দিনেই, ৮০ বছর বয়সে গৌতম বুদ্ধ কুশিনগরে দেহত্যাগ করেন। বৌদ্ধরা একে মহাপরিনির্বাণ বলেন। যদিও তাঁর শারীরিক জীবন শেষ হয়, তাঁর শিক্ষা ও দর্শন চিরকালীন হয়ে থাকে। শান্তি, করুণা ও অহিংসার বাণী আজও বিশ্বকে আলো দেখায়।

ধর্মীয় আচার ও পালন

বুদ্ধপূর্ণিমায় বৌদ্ধরা বিশ্বজুড়ে বিশেষ পূজা, সূত্র পাঠ, ধ্যান, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল পালনের মতো ধর্মীয় আচার পালন করেন। পঞ্চশীল মানে পাঁচটি নৈতিক নীতি: প্রাণহানি না করা, চুরি না করা, মিথ্যা না বলা, মাদক পরিহার করা ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকা। অষ্টশীল উচ্চতর নৈতিক শৃঙ্খলা, যা বিশেষ দিনে পালিত হয়। এ ছাড়া অনেক বৌদ্ধবিহারে আলোচনা সভা, বুদ্ধের জীবনী পাঠ, ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, আলোকসজ্জা, দান ও সম্প্রদায়ভিত্তিক ভোজের আয়োজন করা হয়।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

বুদ্ধপূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার বার্তা স্মরণ করার দিন। শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ভারতসহ বহু দেশে এই উৎসব বর্ণাঢ্যভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বিশেষ উৎসাহে বুদ্ধপূর্ণিমা পালিত হয়। সরকারি ছুটির দিনে বৌদ্ধবিহারগুলো আলোকিত হয়ে ওঠে, প্রার্থনার সুরে পরিবেশ ভরে যায়, আর সমাজের অসহায় মানুষের জন্য দানের হাত বাড়ানো হয়।

বুদ্ধের শিক্ষা: চিরন্তন অনুপ্রেরণা

বুদ্ধের শিক্ষা মানুষের দুঃখ মোচনের পথ দেখায়। তাঁর বাণীতে রয়েছে চার আর্য সত্য — জীবনে দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখ থেকে মুক্তি সম্ভব, আর সেই মুক্তির পথও আছে। এই দর্শন শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য আজও প্রাসঙ্গিক।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন