

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলোর আন্দোলনকে হটকারী ও অশুভ উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘আন্দোলনের নামে তারা দেশকে অস্থিতিশীল ও সংঘাতের দিকে ধাবিত করে আসন্ন নির্বাচনকে অনিশ্চিত করতে চায়। বিএনপির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতেই নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।’
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার দাখিল মাদরাসা মিলনায়তনে উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রিন্স বলেন, ‘হাত পাখা দিয়ে বিগত ২৯ বছর আওয়ামী লীগকে বাতাস করা পীর সাহেব এখন জামায়াতকে বাতাস করছেন। তিনি বলেছিলেন, জামায়তের বিষ যেখানেই লাগবে তা ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই পীর সাহেব এখন জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করে নিজের শরীরে জামায়াতের বিষ লাগিয়েছেন। নিজের কথা অনুযায়ী নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনছেন।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে জামায়াতের বিষ এখন তার (পীর সাহেব) কাছে অমৃত সুধায় পরিণত হয়েছে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে আর কোনোদিন ইসলাম কায়েমের সুযোগ থাকবে না বলেও এই পীর সাহেব নসিহত করেছিলেন। তার কাছে জানতে ইচ্ছে করে, তিনি কি জেনেশুনেই বিষপান করছেন?’
প্রিন্স বলেন, ‘পরস্পরবিরোধী এই দুটি দলের নেতারা আগে একে অপরের বিরুদ্ধে বিদেশি দালালির অভিযোগ করতেন। হঠাৎ তাদের এই ঐক্য কোন দেশের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হয়েছে, জনগণ তা জানতে আগ্রহী।’
মৎস্যজীবী দলের সম্মেলন ছাড়াও এদিন বিকেলে ধোবাউড়া উপজেলার পুরাকান্দুলিয়া ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনেও প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এমরান সালেহ প্রিন্স। ইউনিয়নের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন ও দুর্গাপূজার প্রস্তুতি পরিদর্শনও করেন।
এর আগে সকালে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন- বাগাছাসের নেতৃবৃন্দ প্রিন্সের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়ে তাদের সমস্যা বিষয়ে অবহিত করেন। এরপর তিনি গোয়াতলা বাজারে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান, বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের স্বান্তনা ও সহযোগিতা দেন।
দুপুরে পুরকান্দুলিয়া ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, বিকেলে দুধনই ও সন্ধ্যায় বতিহালা বাজারে অনুষ্ঠিত ১,২,৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির পৃথক পৃথক সম্মেলনে যোগ দেন।
এসময় প্রিন্স বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে জনগণের কোনো সমর্থন নেই।’ তিনি তৃণমূল পর্যায়ের সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অশুভ শক্তি গ্রামে গ্রামে ইসলামের ধর্মের নামে বিএনপির বিরুদ্ধে জঘণ্য মিথ্যাচার চালাচ্ছে।
প্রিন্স বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ সংযোজন করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা পরিবর্তন করে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ প্রতিস্থাপন করেছিলেন। বিএনপি ইসলামি মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইসলামি মূল্যবোধ ও কোরআন, সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন হবে না।’ জমায়াত ইসলাম নিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘জামায়াত নেতা ভারতের বুদ্ধিজীবীদের বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে ইসলামি শরিয়াহ আইন করবে, এ কথা তারা বলে নাই। তারা ইসলামি শরিয়াহ আইনের কথা ধর্মপ্রাণ মানুষকে বললেও আদতে তা বিশ্বাস করে না।’
তিনি মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে যাওয়ার কর্মসূচি নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ঘরে ঘরে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম পৌঁছে দিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রার্থনার আহ্বান জানান।
প্রিন্স বলেন, ‘আগামী বিএনপি সরকার দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পাশাপাশি দেড় বছরে এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থান, ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে অসচ্ছল পরিবারকে রেশনিংয়ের আওতায় আনা, শিক্ষিত বেকারদের এক বছরের জন্য বেকার ভাতা, অসচ্ছল কৃষকদেরকে একটি ফসলের উৎপাদন খরচ প্রদান, সকলের জন্য স্বাস্থ্য কর্মসূচির অওতায় অসচ্ছল নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহসহ জনকল্যাণে যুগান্তকারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করবে। এসব কর্মসূচি জনগণের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিতে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশ গড়তে দেশপ্রেমিক কাফেলার নেতা। আসুন, বাংলাদেশপন্থিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমিক কাফেলা জোরদার করি এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
বাগাছাস নেতৃবৃন্দের প্রতি তারেক রহমান ও বিএনপির প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ইনক্লুসিভ ও পজেটিভ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। আসন্ন নির্বাচনে ধোবাউড়া, হালুয়াঘাটে ধানের শীষ বিজয়ী হলে স্থানীয়ভাবে পর্যায়ক্রমে গারো সম্প্রদায়ের অর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ গারো পল্লীর যাতায়াত ব্যবস্থা, পানীয় জলের সমস্যা, নদীভাঙন, ভূমি রেজিস্ট্রেশন, খেলার মাঠসহ ক্রীড়া ও সংস্কৃতির চর্চা, গারো সম্প্রদায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরতে পৃথক জাদুঘর স্থাপন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র অক্ষুণ্ন রেখে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সাফারী পার্ক স্থাপন করা হবে। জাতীয়ভাবে বিএনপি সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়নে পৃথক সরকারি কর্তৃপক্ষ গঠন করবে।
ধোবাউড়া উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মানিকের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শামীম মিয়ার সঞ্চালনায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি হযরত আলী সাকিব।
এসময় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- ধোবাউড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম কাজল, সদস্যসচিব আনিসুর রহমান মানিক, জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি মঞ্জুরুল হক।
সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মিজানুর রহমান মানিককে সভাপতি, শামীম মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক, শফিকুল ইসলামকে সিনিয়র সহসভাপতি, আব্দুস শহীদ তালুকদারকে সহসভাপতি, সাইফুল ইসলাম বুলবুলকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ধোবাউড়া উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বাগাছাস নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম কাজল, যুবদল নেতা ফারুক হোসাইন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, বাগাছাস সাধারণ সম্পাদক পেট্রিক চিসিম, বাগাছাস নেতা তেনজিং ডিব্রা, ঐশ্বর্য রেমা, দৃশ্য রাখসাম, এপ্রিল মানখিন, জুন মানখিন, দুর্জয় ম্রং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে উপজেলা নেতৃবৃন্দ ছাড়াও পুরকান্দুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সোলায়মান সরকার, সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হোসেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন, উপজেলা তাঁতীদলের সদস্যসচিব হাসান শাহ বক্তব্য দেন।
গোয়াতলায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে উপজেলা নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম টোটন, ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব আনসার আলী তুলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন