

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় শুক্রবার (২১ নভেম্বর) তীব্র ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী থাকলেও এর প্রভাব ছিল মারাত্মক।
ঢাকা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে মোট ১০ জন নিহত এবং অন্তত ৬০০ মানুষ আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি স্থাপনাসহ হাজার হাজার ভবন।
এই মূল ভূমিকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন দফা আফটারশক অনুভূত হয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর পরই রাজধানী ঢাকা ও নরসিংদীতে দুই সেকেন্ডের মধ্যে দুটি কম্পন রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে ৩ দশমিক ৭ মাত্রার প্রথম ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল বাড্ডা। মাত্র এক সেকেন্ড পর, ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার দ্বিতীয় কম্পনটি অনুভূত হয়, যার উৎস ছিল নরসিংদী।
সব মিলিয়ে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় দেশে চারটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাত্রার কম্পনগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ এমনিতেই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বড় কোনো ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ঢাকা শহরে, যেখানে অধিকাংশ ভবনই বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে নির্মিত। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কমাতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও নেয়নি কোনো সরকার।
কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার জিওলজি ও ওশানোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. খালেকুজ্জামান জানান, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে একসঙ্গে ৭২ হাজার ভবন ধ্বস ও ব্যাপক প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এজন্য নিতে হবে ৪ ধাপের প্রস্তুতি। বাংলাদেশের ভবন নির্মাণ নীতিমালাকে আরও যুগোপযোগী এবং নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করা না গেলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের অপেক্ষা করতে হবে ঢাকাবাসীকে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের লক্ষ্যে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, মুগদা ও বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।
এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের লক্ষ্যে শনিবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, মুগদা ও বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।
পরিদর্শনকালে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এই ভূমিকম্প আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল। এর থেকে সতর্ক না হলে আমাদের জন্য বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে সিলগালা, বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ও কিছুক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণও করা হচ্ছে। সচেতন না হলে অদূর ভবিষ্যতে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে আমাদেরকে।
মন্তব্য করুন