শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে ৩ পদক্ষেপ নিলে ১ দিনে উদ্ধার হবে দখল করা জমি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
expand
যে ৩ পদক্ষেপ নিলে ১ দিনে উদ্ধার হবে দখল করা জমি

বেদখল জমি ফেরত পাওয়া এখন আর অতীতের মতো জটিল নয়। নতুন প্রণীত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এবং এর বিধিমালা অনুযায়ী প্রশাসনিক ও আদালতীয় উভয় স্তরে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মাত্র তিনটি কার্যকর ধাপ অনুসরণ করলেই অনেক ক্ষেত্রে দখলকৃত জমি দ্রুত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানা গেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসে থাকলেও বা দীর্ঘদিন জমি অরক্ষিত থাকলেও আইনানুগ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করলে মালিকরা আবারও নিজেদের জমি ফিরে পাচ্ছেন।

প্রথম ধাপ: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রশাসনিক আবেদন

নতুন আইনের বিধিমালায় এখন প্রশাসনিক পর্যায়ে অবৈধ দখল প্রতিরোধের ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ যদি জাল দলিল বা প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখল করে, তাহলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ও জেলা রেজিস্ট্রার বিষয়টি অবহিত হবেন।

এই অবস্থায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে দখল উচ্ছেদ বা প্রতিরোধের নির্দেশ চাইতে পারেন। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার নির্দেশ দিতে পারেন, ফলে পুলিশি সহায়তায় দখল পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।

করণীয়: মূল দলিল, জাতীয় পরিচয়পত্র, ও প্রমাণপত্রসহ জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে আবেদন জমা দিন।

দ্বিতীয় ধাপ: দ্রুত দখল পুনরুদ্ধারে ধারা ১৪৫ অনুযায়ী মোকদ্দমা

দখল ফিরে পাওয়ার আরেকটি কার্যকর উপায় হলো ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৪৫ অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোকদ্দমা করা। এটি একটি ত্বরিত প্রক্রিয়া, যেখানে মূল গুরুত্ব দেওয়া হয় ‘বাস্তব দখল’-এর উপর।

ভূমি উপ-কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই সাধারণত রায় দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে দখল ফেরত না দিলে, নির্বাহী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

করণীয়: নিকটস্থ থানার মাধ্যমে বা সরাসরি ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে ১৪৫ ধারায় আবেদন দাখিল করুন এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণ উপস্থাপন করুন।

তৃতীয় ধাপ: চূড়ান্ত মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোষণামূলক মামলা

যদি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় সমাধান না আসে, বা জমির স্থায়ী মালিকানা নিয়ে বিরোধ থেকে যায়, তবে Specific Relief Act, 1877-এর সেকশন ৪২ অনুযায়ী ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা হয়।

আদালত মালিকানা ঘোষণা করলে সেই রায় চূড়ান্ত আইনি প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়, যা ভবিষ্যতে দখলদারকে উচ্ছেদে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

করণীয়: জমির সকল দলিল, খতিয়ান, সাক্ষ্য এবং প্রমাণসহ অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করুন।

কুমিল্লার এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে রায় পাওয়ার পরও দখলদার জমি ছাড়ছিল না। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় জমি পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি ধাপে দলিল ও প্রমাণ সংরক্ষণ এবং অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অবৈধভাবে দখলমুক্ত করতে কখনোই আত্মবিচার বা বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেওয়া উচিত নয়।

ভূমি সংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই সহজ নয়, তবে বর্তমান আইন ও বিধিমালা অনুসারে সঠিক প্রক্রিয়ায় এগোলে দ্রুত ও কার্যকর সমাধান পাওয়া সম্ভব। তিন ধাপ- নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশাসনিক প্রতিরোধ, ধারা ১৪৫ অনুযায়ী ত্বরিত দখল পুনরুদ্ধার, এবং ঘোষণামূলক মামলার মাধ্যমে স্থায়ী মালিকানা প্রতিষ্ঠা. এই ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে বেদখল জমি ফেরত পাওয়া এখন সম্ভব।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন