রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হৃৎস্পন্দন চলছে, শ্বাসও আছে তবু কেন ‘ব্রেন ডেথ’ বলা হয় 

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
এনপিবি গ্রাফিক্স
expand
এনপিবি গ্রাফিক্স

আইসিইউর কাচের ওপাশে শুয়ে থাকা মানুষটি দেখতে যেন এখনো বেঁচে আছেন। শরীর উষ্ণ, বুক ওঠানামা করছে, মনিটরে ভেসে উঠছে হার্টবিট। তবু চিকিৎসকেরা বলছেন ‘ব্রেন ডেথ’।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এমন একটি বিষয়, যা পরিবার-স্বজনদের জন্য সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর ও মানসিকভাবে আঘাতের।

ব্রেন ডেথ হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে মানুষের মস্তিষ্ক ও ব্রেনস্টেম সম্পূর্ণ ও স্থায়ীভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

যন্ত্রের সাহায্যে তখনও শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন চালু রাখা সম্ভব হলেও, মস্তিষ্ক আর কোনও নির্দেশ পাঠাতে পারে না। তাই বাইরে থেকে ‘জীবিত’ মনে হলেও বাস্তবে তিনি আর বেঁচে নেই।

ব্রেন ডেথ কেন হয়

মস্তিষ্কের কোষ একবার স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলো আর নতুন করে গড়ে ওঠে না। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি হলে মস্তিষ্ক আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। ব্রেন ডেথের সাধারণ কারণগুলো হলো—

যেভাবে চিকিৎসকরা ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন

ব্রেন ডেথ কোনও সহজ বিষয় নয়। এটি সাধারণত ঘোষণা করেন নিউরোলজিস্ট। তারা নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে একাধিক ধাপে পরীক্ষা করেন এবং সব তথ্য লিখিতভাবে নথিভুক্ত করেন।

একবার ব্রেন ডেথ ঘোষণা হলে, আইন অনুযায়ী সেই তারিখই ব্যক্তির মৃত্যুর তারিখ হিসেবে ধরা হয় হার্ট পরে বন্ধ হলেও।

ব্রেন ডেথ ঘোষণার আগে চিকিৎসকেরা তিনটি বিষয় নিশ্চিত করেন—

১. কোনগ প্রতিক্রিয়া নেই

আলো, শব্দ বা স্পর্শে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না।

২. রিফ্লেক্স সম্পূর্ণ অনুপস্থিত

গলার গ্যাগ রিফ্লেক্স, চোখে আলো ফেললে পিউপিলের নড়াচড়া সবই বন্ধ।

৩. নিজে থেকে শ্বাস নিতে অক্ষম

ভেন্টিলেটর ছাড়া শ্বাস নেয়ার কোনও চেষ্টা দেখা যায় না।

ব্রেন ডেথ কোনও সহজ বিষয় নয়। এটি সাধারণত ঘোষণা করেন নিউরোলজিস্ট। তারা নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে একাধিক ধাপে পরীক্ষা করেন এবং সব তথ্য লিখিতভাবে নথিভুক্ত করেন। ছবি: সংগৃহীত

কোমা আর ব্রেন ডেথ কি এক: অনেকেই ভাবেন কোমা আর ব্রেন ডেথ হয়তো একই বিষয়। তবে বিষয়টা একেবারেই আলাদা।

কোমায় থাকা মানুষ বেঁচে থাকতে পারেন, মস্তিষ্কে কিছু কার্যক্রম থাকে এবং অনেক সময় তারা জ্ঞানেও ফেরেন।

কিন্তু ব্রেন ডেথ মানেই মস্তিষ্কের সব কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ।

আরও পড়ুন: চল্লিশ পেরোলেও থাকুন ২৫-এর মতো, ৪টি খাবারেই তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব

যেসব পরীক্ষা করা হয়

প্রথমে নিশ্চিত করা হয় ওষুধের প্রভাব, অতিরিক্ত ঠান্ডা বা রক্তচাপের সমস্যা যেন ভুলভাবে ব্রেন ডেথ মনে না হয়। এরপর করা হয়—

কোল্ড ক্যালোরিক টেস্ট: কানে ঠান্ডা পানি ঢুকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা অ্যাপনিয়া টেস্ট: ভেন্টিলেটর সরিয়ে নিজে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা আছে কি না দেখা

প্রয়োজনে ইইজি বা ব্রেন ব্লাড ফ্লো স্টাডি

ব্রেন ডেথ এমন এক বাস্তবতা, যা গ্রহণ করা মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন। যন্ত্রের সহায়তায় শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন চললেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মস্তিষ্কের মৃত্যু। যেকোনও পরিবারের জন্য এটা মেনে নেয়া কঠিন।

সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ও ভেরি ওয়েল হেলথ

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X