রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভেন্টিলেশন কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে কাজ করে?

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম
প্রতীকী ছবি (ফাইল চিত্র)
expand
প্রতীকী ছবি (ফাইল চিত্র)

রোগীকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে শুনলেই অনেকে ধরে নেন, তার অবস্থা খুবই সংকটজনক।

বাস্তবে ভেন্টিলেশন এক ধরনের জরুরি সহায়তা, যা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভেন্টিলেশন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা দূর করতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা নিচে তুলে ধরা হলো।

ভেন্টিলেশন কি?

এটি মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা প্রদানকারী একটি যন্ত্রভিত্তিক পদ্ধতি। যখন কারও ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না বা প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন টানতে ব্যর্থ হয়, তখন এই সাপোর্ট দেওয়া হয়।

যেমন কিডনি বিকল হলে ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়—তেমনি শ্বাসযন্ত্র অকার্যকর হলে ভেন্টিলেশন প্রয়োজন পড়ে।

ভেন্টিলেশনের ধরন ১. নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন (NIV)

মুখ বা নাকে একটি বিশেষ মাস্ক লাগিয়ে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এটি অপেক্ষাকৃত সহজ পদ্ধতি এবং শুরুর পর্যায়ে কার্যকর হয়।

২. ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন

রোগীর মুখ বা নাক দিয়ে একটি নল শ্বাসনালিতে প্রবেশ করানো হয়, যা ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যখন রোগীর অবস্থা খুবই জটিল হয়, তখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

কারা ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন পড়ে?

গুরুতর ফুসফুসের রোগ—যেমন নিউমোনিয়া

বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের পরে দুর্বলতা—যখন রোগীর নিজে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমে আসে

স্নায়বিক রোগের কারণে শ্বাসনালির প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ না করা

স্নায়ুরোগে ভেন্টিলেশন কেন দরকার হয়?

স্বাভাবিক অবস্থায় কাশি ও কফ শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বাধা দূর করে। কিন্তু গুরুতর স্নায়ুবিক সমস্যায় মস্তিষ্ক থেকে শ্বাসনালি নিয়ন্ত্রণকারী নির্দেশ ঠিকমতো না গেলে এই ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়।

ফলে কফ জমে নিউমোনিয়ার সৃষ্টি হয় এবং শ্বাসকষ্ট বাড়ে—এ অবস্থায় ভেন্টিলেশন অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

ভেন্টিলেশন থেকে রোগীকে কীভাবে বাদ দেওয়া হয়?

ডাক্তারেরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন রোগী যন্ত্রের সহায়তা ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে কি না।

প্রথমে ভেন্টিলেটরের দেওয়া অক্সিজেনের মাত্রা কমানোর চেষ্টা করা হয়।

প্রয়োজন হলে কিছু সময় রোগীকে যন্ত্র ছাড়া শ্বাস নিতে বলা হয়।

যদি দেখা যায় রোগী নিজে শ্বাস নিতে সক্ষম, তখনই ভেন্টিলেশন বন্ধ করা হয়।

স্নায়ুরোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রোটোকল

যাঁরা স্নায়বিক দুর্বলতা নিয়ে দীর্ঘসময় ভেন্টিলেশনে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই ট্র্যাকিওস্টোমি করার প্রয়োজন হয়।

এতে গলার শ্বাসনালিতে একটি ছোট নল বসানো হয়, যা ভেন্টিলেশন থেকে দ্রুত বের হতে সহায়তা করে এবং ইনফেকশন ঝুঁকি কমায়।

ট্র্যাকিওস্টোমি কেন করা হয়?

দীর্ঘসময় ভেন্টিলেশন প্রয়োজন হলে এটি নিরাপদ

শ্বাসনালীতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়

রোগীকে বাড়িতে সাপোর্ট নিয়ে রাখা যায়, যেটি হাসপাতালের তুলনায় বেশি নিরাপদ

দীর্ঘসময় ভেন্টিলেশনে থাকলে কী ঝুঁকি থাকে?

হাসপাতালে দীর্ঘকাল থাকা এবং শরীরে নল থাকা অবস্থায় ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শ্বাসনালিতে নল যতদিন থাকে, সংক্রমণের ঝুঁকিও তত বাড়ে।

ইনফেকশন কমাতে

রোগীকে কিছুটা উঁচু করে রাখা

নির্দিষ্ট মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা

নিয়মিত সাকশনসহ অন্যান্য পরিচর্যা করা হয়

তারপরও কখনো কখনো ইনফেকশন হতে পারে।

ভেন্টিলেশন থেকে বাড়ি ফেরার পর কী করণীয়?

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ

পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার

ঠান্ডা-লাগা বা সংক্রমণ এড়ানোর চেষ্টা

প্রয়োজন হলে নার্স বা হোমকেয়ার সহায়তা

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X