


২০২৫-এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে নির্বাচনের আগে ও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের অধিকারচর্চা, নিরাপত্তা, আবাসন সংকট দূরীকরণ, সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম-সবকিছুর মধ্যেই দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং ডাকসু প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের যথাযথ প্রতিফলন বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের সমস্যার মূলে রয়েছে আবাসন সংকট। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে গণরুম, গেস্টরুম কালচার বন্ধ হলেও আবাসন সংকট কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে সিটের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য;মাত্র ১৮ হাজার।
সম্প্রতি একনেক কর্তৃক ২৮০০ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন পেলেও, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে লাগবে পাঁচ বছর। এর আওতায় ছাত্রী ও ছাত্রদের জন্য আলাদা ৯টি আবাসিক হল নির্মাণসহ বিভিন্ন শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক ভবন, অবকাঠামো ও সুবিধা উন্নয়ন করা হবে।
এতেও নিশ্চিত হবে না শতভাগ আবাসন, বাদ যাবে বড় একটি অংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিট বাড়বে ৭ হাজার ৭০০টি। এরপরও আবসনের বাইরে থাকবে ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে হলের খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিক্ষার্থীরা একই কষ্টের কথা বলে আসছে। আধা সেদ্ধ ভাত, ডাল পানির মতো, মাছ-মাংসে দুর্গন্ধ, আর সবজিতে পোকা যেন শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন এরকম নিম্নমানের খাবার খেয়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে তাদের।
ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন , এটি শুধু একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক নৈতিক সংকটেরও প্রতিফলন। যেখানে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো জ্বালানোর কথা, সেখানে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদাই কেড়ে নিচ্ছে"
শিক্ষার্থীরা মনে করেন জবাবদিহিতা ও নিয়মিত তদারকির অভাবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের দাবি পূরণ হচ্ছে না। তাছাড়া মাঝে মাঝে অডিট বা পরিদর্শন হলেও সেগুলো কাগুজে আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে বলে অভিযোগ তাদের।
২০২৫ ডাকসু পরবর্তী সময়ে ঢাবির বেশ কয়েকটি হলের ক্যান্টিনের খাবারের মানে এসেছে যথেষ্ট পরিবর্তন, মাছ, মাংস,ডিমের পাশাপাশি যুক্ত করা হয়েছে শাকসবজিসহ আরো অতিরিক্ত কিছু পদ। যদিও কিছুটা মূল্যবৃদ্ধিও করা হয়েছে তারপরও সংশ্লিষ্ট হলের বিশেষ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মোহাম্মদ মহসিন হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে তিনবার
ক্যান্টিন মালিক পরিবর্তন করা হলেও খাবারের মানে কোন সন্তোষজনক পরিবর্তন আসেনি। নারী শিক্ষার্থীদের হল ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি হলের খাবারের মানের কোন পরিবর্তন হয়নি বলেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে অভিযোগ পরিলক্ষিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি হলের ক্যান্টিন মালিক পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট হল সংসদের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায় খাবারের মান উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলমান, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং দক্ষ ক্যান্টিন মালিকের অধীনে ক্যান্টিন পরিচালনার ভার অর্পণ করার জন্য ক্যান্টিন মালিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়াও চলমান।
সাম্প্রতি ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জোবায়ের ও কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমাকে সরাসরি মাঠে উপস্থিত থেকে শাহবাগ থানা পুলিশ ও ঢাবির প্রক্টোরিয়াল বডির ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় ক্যাম্পাস থেকে ভবঘুরে,মাদকাসক্ত,বিভিন্ন প্রকার অপকর্মে জড়িতদের ও অবৈধ স্থাপনা সমূহ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেছে। এতে করে শিক্ষার্থী সংসদ সহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড়ও উঠেছে বারংবার। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানের ফলে প্রশংসার জোয়ারে ভেসেছেন জোবায়ের-সর্বমিত্ররা।
ঢাবির মায়মুনা নামে এক নারী শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, " ডাকসু পূর্ববর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগত ও মাদকাসক্ত ভবঘুরেদের দ্বারা নারী শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার (হ্যারাসমেন্টের)শিকার হওয়ার নজির আমরা দেখেছি। এছাড়াও ক্যাম্পাসের মধ্যে এবং আশপাশের এলাকায় মাদকদ্রব্যের অবাধ বেচাকেনা সহ সাম্য হত্যার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তবে ডাকসুর বিগত দুই মাসের পরিচালিত অভিযানের ফলে এগুলো তুলনামূলক কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা এখন কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করতে পারি তাছাড়া সব থেকে বড় কথা আমাদের অভিযোগ ও দাবি উত্থাপনের একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে।"
এ প্রসঙ্গে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের এনপিবি নিউজকে বলেন," নিরাপত্তা ইস্যুতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে,মাদকাসক্ত, ভাবঘুরে ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার ফলশ্রুতিতে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ কমেছে এবং ক্যাম্পাসের দোকানপাট সমূহ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে শিক্ষার্থীদের চাওয়ার প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের যানজট নিরসনের প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে, অতি শীঘ্রই শিক্ষার্থীদের সামনে এটি দৃশ্যমান হবে।
ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, " ইতোমধ্যে আপনারা দেখে থাকবেন আমাদের বিশাল বাজেট অপ্রতুলতার মধ্যেও ডাকসু পরবর্তী দুই মাসে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাতীত পরিমাণ কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।
এই বাজেটের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এনপিবি নিউজকে বলেন,"আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এ্যালামনাই,বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠন ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ডাকসুর প্রত্যেকটা সম্পাদক এবং সদস্যদের সার্বিক ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
"তাছাড়া আমরা শিক্ষার্থীদের যে ইশতেহার বা আমাদের কমিটমেন্ট গুলো দিয়েছিলাম,আমরা কথা দিচ্ছি আমরা তার থেকেও ৫গুন বেশি কাজ করব"
মন্তব্য করুন