মঙ্গলবার
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বান্ধবিকে জানিয়ে হাদিকে গুলি করে শুটার ফয়সাল, চাঞ্চল্যকর তথ্য

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩০ এএম
এনপিবি গ্রাফিক্স
expand
এনপিবি গ্রাফিক্স

পুরো জাতিকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন শরিফ ওসমান বিন হাদি। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ছিলেন।

তার মৃত্যুটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়।

গত ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে হত্যার উদ্দেশে তাকে গুলি করে দুই দুর্বৃত্ত। ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আসামি হলেন ফয়সাল করিম মাসুদ।

তদন্তে উঠে এসেছে তিনি ছাত্র লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাকে নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসছে।

গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে, শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড ছিল একটি সুপরিকল্পিত মিশনের ফল। বিদেশ থেকে ফিরে একটি ‘শুটার টিম’ গঠন করা হয়। টার্গেট বাস্তবায়নে আগে সখ্যতা গড়ে তোলা হয়, এরপর মাত্র সাত দিনের মধ্যেই চালানো হয় প্রাণঘাতী হামলা।

হত্যার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মূল অভিযুক্ত শুটার ফয়সাল দেশ ছেড়ে চলে যায় বলে গণমাধ্যমে খবর আসে। গুরুত্বপূর্ণ আলামতও গায়েব করা হয় পরিকল্পনা অনুযায়ী।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার নেপথ্যে এমনই এক সুপরিকল্পিত মিশনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। হাদি এবং শুটার ফয়সালের পরিচয় হয় ইনকিলাব মঞ্চের কালচারাল সেন্টারে।

শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে হত্যার আগে শুটার কীভাবে হাদিকে অনুসরণ করে ও ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৮ মিনিটে বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসেন শুটার ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির। হাদির সঙ্গে প্রায় ছয় মিনিট বৈঠক করেন তারা।

সেই বৈঠকে ফয়সাল হাদিকে প্রস্তাব দেন নির্বাচনী প্রচারে একসঙ্গে কাজ করার। এটি ছিল হাদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রথম ধাপ শুটার ফয়সালের।

এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে ফয়সাল আবার কালচারাল সেন্টারে আসেন। এবার তার সঙ্গে ছিলেন আলমগীর।

এই বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখান থেকেই হাদির টিমে ঢুকে পড়েন ফয়সাল। ১০ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় হাদির প্রচারণায় সরাসরি অংশ নেন তিনি।

প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পরই হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন ফয়সাল। মিশন বাস্তবায়নের জন্য নরসিংদী, সাভার, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি করেন তিনি।

১১ ডিসেম্বর মিশন বাস্তবায়নের প্রস্তুতিতে ওঠেন পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায়। হামলার দিন ভোরে উবারে করে যান হেমায়েতপুরের গ্রিন জোন রিসোর্টে।

রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও আলমগীরের গাড়ি হেমায়েতপুরের গ্রিন জোন রিসোর্টে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন।

সেখানে হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে ফয়সাল বলেন, তিনি হাদির মাথায় গুলি করার পরিকল্পনা করছেন এবং এতে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হবে। তিনি ঘটনার পর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার কথা বলেন বান্ধবীকে।

সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে বান্ধবীকে নিয়ে রিসোর্ট থেকে বের হন ফয়সাল। বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন আলমগীর।

উবারে করে বান্ধবীকে বাড্ডায় নামিয়ে দেওয়ার পর বেলা ১১টা ৫ মিনিটে আগারগাঁওয়ের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে বের করে সরাসরি যান হাদির সেগুনবাগিচার প্রচারণায়। সকাল পৌনে ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছান ফয়সাল।

প্রচারণা শেষে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা হলে শুটার পেছন থেকে তার অটোরিকশা অনুসরণ করতে থাকেন।

দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হাদিকে বহন করা অটোরিকশা মতিঝিলের জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে পৌঁছায়। আলমগীর মোটরসাইকেল পার্ক করলে দুজন নেমে আবারও প্রচারণায় যুক্ত হন।

নামাজ শেষে দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে হাদি সেখান থেকে রওনা হলে শুটারাও পিছু নেয়। দৈনিক বাংলা মোড়ে ডান দিকে ঘুরে পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে ঢুকে পড়ে তারা।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা ফাঁকা জায়গা খুঁজে বেড়ানোর পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে ফয়সাল।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X