

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় সমিতির আড়ালে গড়ে উঠেছে ভয়াবহ সুদের ব্যবসা। অতিরিক্ত সুদ ও ব্ল্যাঙ্ক চেকের অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে নানাভাবে প্রতারণা, হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে কেউ কারাগারে, আবার কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগী ও প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা যায়, কেন্দুয়ার সান্দিকোনা বাজারে ‘রুরাল ইউনিক প্রগ্রেসিভ অ্যাসোসিয়েশন (রূপা)’ নামের একটি সমিতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলছে উচ্চ সুদের ঋণ ব্যবসা। সমিতির প্রধান রফিকুল আলম বিভিন্ন গ্রামের কৃষকসহ নানা শ্রেণি,পেশার মানুষের কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেক রেখে মোটা অঙ্কে টাকা ধার দেন। নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত দিতে না পারলেই চেকের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের মামলা করে হয়রানি করা হয় ঋণগ্রহীতাদের।
মামুদপুর গ্রামের শিরিন আক্তার চার বছর আগে পারিবারিক প্রয়োজনে ভগ্নিপতি রফিকুল আলমের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেন। বিনিময়ে দেন দুটি খালি চেক। কিছুদিন পর তিনি ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও বাকি টাকার ওপর অস্বাভাবিক সুদের দাবিতে রফিকুল একটি চেকে ২১ লাখ টাকা এবং তাঁর বোন আইরিন আক্তার আরও একটি চেকে ২০ লাখ টাকার মামলা করেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত শিরিনকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। শিরিন কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর প্রতিবন্ধী দুই সন্তানকে বারান্দায় আটকে রেখে দেখাশোনা করতে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। বাকি দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা অবস্থায় আছেন স্বামী মিল্টন মিয়া।
শিরিনের মা তাহেরা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এত টাকা সে নেয়নি। সম্পত্তির লোভেই অন্য মেয়েরা এমন করেছে।
গ্রামছাড়া শিবলী, মায়ের লাশও দেখতে পারেননি একই গ্রামের শিবলী আক্তার ‘রূপা’ সমিতি থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে ব্ল্যাঙ্ক চেক দেন। পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাঁর বিরুদ্ধে ৮ লাখ ও ১৬ লাখ টাকার দুটি মামলা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে চার বছর ধরে গ্রাম ছেড়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর মা মারা গেলেও মামলার ভয়ে তিনি লাশ দেখতে পর্যন্ত আসতে পারেননি।
শিবলীর ভাই রনি মিয়া বলেন, রফিকুল ও তার সহযোগী হাবুলের সুদের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব। কেউ গরু বেচে, কেউ ঘর বন্ধক রেখে টাকা শোধ করেছেন,তবু রেহাই পাননি।
এলাকার আরও কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুদের টাকা পরিশোধ করার পরও তাঁদের চেক ফেরত দেওয়া হয়নি। চেক চাইতে গেলে নানা ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হয়।
যোগাযোগ করা হলে রফিকুল আলম বলেন, এসব বিষয়ে আমাকে বিরক্ত করবেন না।এরপর তিনি ফোন সংযোগ কেটে দেন।
এদিকে, রফিকুলের কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছেন,এমন অভিযোগ রয়েছে মোহনগঞ্জ আদালতের পেশকার মো. রাজিবের বিরুদ্ধেও। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইউনুস রহমান বলেন, ‘রূপা ইউনিক প্রগ্রেসিভ অ্যাসোসিয়েশন’ নামে কোনো সমিতি সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত নয়। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, সুদের ব্যবসা সম্পূর্ণ বেআইনি। কেউ প্রতারণার শিকার হলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন