

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ছুটির সকালে কেউ পরিবার নিয়ে আরাম করছিলেন, কেউবা বাজারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন—ঠিক সেই সময় হঠাৎ কেঁপে ওঠে চারপাশ। মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সবাই ছুটে বেরিয়ে আসে খোলা জায়গায়। গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত ভূমিকম্পের কেন্দ্র নরসিংদী আর সেখানকার মানুষের অভিজ্ঞতা ছিল অনেক বেশি ভয়াবহ।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়, ঢাকার ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার পূর্বে।
এই ভূমিকম্পে নরসিংদীর তিনটি উপজেলায় বাবা-ছেলেসহ পাঁচজনের মৃত্যু এবং শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন ঘরে আসবাব ভেঙে পড়ে, বহু বহুতল ভবনে ফাটল দেখা দেয় এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনা মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে।
ঘোড়াশাল লেবুপাড়া এলাকার ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্মের শ্রমিক কামাল মিয়া বলেন, হঠাৎ মনে হচ্ছিল কোনো শব্দ হচ্ছে, তারপর দেখি আমাদের চারপাশ যেন কাঁপছে। একটু পর ফার্মের মাঠের মাটি ফেটে দুই ভাগ হয়ে গেল। তখন মনে হচ্ছিল—এবারই বুঝি শেষ সময়।
ফার্মের পশু চিকিৎসক মাসুদ রানা জানান, আমি দৌড়ে বাইরে এসে দেখি গরুগুলো লাফাচ্ছে, শ্রমিকরা চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করছে। মাঠে যে ফাটল দেখেছি, তা সত্যিই ভয়ঙ্কর।
চরপাড়ার সরকারি কর্মচারী আফসার উদ্দিন বলেন, ছুটির দিন ভেবেছিলাম একটু দেরি করে উঠব। কিন্তু ঘরের পাখা, আসবাব সব নড়তে শুরু করল। শোকেসের কাচও পড়ে ভেঙে গেল। আমি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ছয় তলা থেকে দৌড়ে নিচে নামি। ভবনটা এত জোরে কাঁপছিল যে সবাই চিৎকার করতে করতে নেমে আসে।
ঘোড়াশাল বাজার এলাকার আছমা বেগম বলেন, রান্নাঘরে ছিলাম। প্রথমে বুঝিনি, পরে জিনিসপত্র পড়তে শুরু করলে দৌড়ে নিচে নামি। এত তীব্র কম্পন জীবনে দেখিনি।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির কর্মী কফিল উদ্দিন জানান, বাচ্চাদের সঙ্গে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ সবকিছু দুলতে থাকে। রান্নাঘরের জিনিসপত্র পড়ে গেল। সবাইকে নিয়ে দ্রুত নেমে যাই। বাচ্চারা খুব ভয় পেয়েছে।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী গোলাম ফারহানা আলভী বলে, বইয়ে ভূমিকম্পের কথা পড়েছি, কিন্তু কখনো দেখিনি। আজ দেখলাম খুব ভয় পেয়েছি।
গাবতলী এলাকার শিক্ষক সুমন মিয়া বলেন, সাপ্তাহিক বাজারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঘরের শোপিস পড়ে ভেঙে যায়। পরে পরিবারকে নিয়ে ভবন থেকে দ্রুত নেমে যাই। সবাই খুব আতঙ্কে ছিল।
জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর তথ্য অনুযায়ী, অন্তত দেড় শতাধিক আহত মানুষ চিকিৎসা নিয়েছে। নরসিংদী শহর, ঘোড়াশাল বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বহু ভবনে ফাটল দেখা গেছে। পলাশ উপজেলার নতুনবাজার গ্রামে ইশাক মিয়ার একটি বাড়ি পুরোপুরিই ধসে গেছে।
এ ছাড়া ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাব-স্টেশনে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুস শহীদ জানান, দুটি ইউনিটের প্রচেষ্টায় ৩০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে সাব-স্টেশনটি আপাতত বন্ধ রয়েছে।
নরসিংদীবাসীর এই অভিজ্ঞতা ভয়াবহ বাস্তবতার জানান দেয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রস্তুতির গুরুত্ব কখনোই কম নয়
মন্তব্য করুন
