

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান পরিবার ও আপনজনদের ছেড়ে প্রায় ১০ বছর প্রবাস জীবন কাটান তিনি। প্রবাস থেকে দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত নেন হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করার। হার্ডওয়্যারের ব্যবসা শুরু করার পর ফাঁকা সময়ে ইউটিউব দেখে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বলছি প্রবাস ফেরত আক্তার হোসেনের কথা। তার জীবনের শুরুটা হয়েছিল একেবারে সাধারণভাবে। সামান্য লেখাপড়া থাকলেও তিনি স্থানীয় বিভিন্ন ওয়েল্ডিং শপে কাজ করতে করতে ওয়েল্ডিংয়ের দক্ষতা অর্জন করেন।
২০০৭ সালে পরিবারের কথা চিন্তা করে এবং ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের মরহুম শুক্কুর আলীর ছেলে মো. আক্তার হোসেন।
২০১৭ সালে প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশের মাটিতে ফিরে এসে সিডস্টোর বাজারে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা শুরু করেন। তবে বিদেশ যাওয়ার আগে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত থাকায় কৃষির প্রতি এক আলাদা টান রয়ে গেছে তার।
প্রথমে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা শুরু করলেও পরবর্তীতে কৃষিকাজের প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে। হার্ডওয়্যার ব্যবসার ফাঁকে অবসর সময়ে ইউটিউব দেখে বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
এরপর স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ ও গবেষণার পর চলতি বছর আক্তার হোসেন তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া সাড়ে পাঁচ কাঠা জমিতে প্রথমবারের মতো সাড়ে পাঁচ হাজার বস্তায় আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করেন।
তার আধুনিক চাষপদ্ধতিতে এপ্রিল-মে মাসে লাগানো আদার চারা এরই মধ্যে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বড় হতে শুরু করেছে। তবে বড় হওয়া আদার চাপ সামলাতে না পেরে ফসলের কিছু বস্তায় ফাটলও ধরেছে।
আদা চাষি আক্তার হোসেন জানান, সাড়ে পাঁচ হাজার বস্তায় আদা চাষের জন্য বস্তা তৈরি থেকে শুরু করে আদার বীজ রোপণ, একাধিকবার বিভিন্ন প্রকারের সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, একবার সেচ, আগাছা নিড়ানো। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার প্রায় এক লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে তিনি আদা উত্তোলন করতে পারবেন। তখন হয়তো আরও ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হবে।
তার মতে, আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ যথেষ্ট লাভজনক। বস্তায় চাষে আদায় রোগবালাই কম হয় এবং আদা পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তার ধারণা, পাঁচ হাজার বস্তায় প্রায় পাঁচ মেট্রিক টন আদা উৎপন্ন হবে। আর প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দরে হলেও পাঁচ মেট্রিক টন আদা বিক্রি করে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা আয় হবে। তাতে সব খরচ বাদে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা লাভ থাকবে।
এদিকে, বস্তায় আদা চাষ করে এরই মধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আক্তার হোসেন। তিনি আশা করছেন, সেই আদা বিক্রি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে। তার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন আশপাশের অনেকেই।
হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন জানান, বস্তায় আদা চাষ করলে ছত্রাকের আক্রমণ কম হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিতেও আদা পচে না। ফলে জমিতে চাষের চেয়ে বস্তায় আদা চাষ অনেক বেশি লাভজনক।
তিনি আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণের লক্ষ্যেই আক্তার হোসেনকে বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বস্তায় লাগানো আক্তার হোসেনের আদার ফলন যথেষ্ট ভালো হয়েছে। তার সফলতা দেখে এলাকায় অনেকে এরই মধ্যে বস্তায় আদা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, বস্তায় আদা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো জায়গা কম লাগে। চাইলে যে কেউ ঘরোয়া বা সীমিত জায়গাতেও এই চাষ করতে পারেন। পাশাপাশি রোগবালাই কম হওয়ায় লাভও তুলনামূলকভাবে বেশি বলে জানিয়েছেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন