শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইয়াবা সাম্রাজ্যে আলোচনায় মিজান–ফারুক

উখিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
মিজান ও ফারুক
expand
মিজান ও ফারুক

দেশের মাদক চোরাচালানের সবচেয়ে ভয়ংকর রুট হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ইয়াবা প্রবেশ ও সরবরাহ এখনো থামেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযানের পরও এসব রুট কার্যত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেটের হাতে। গোয়েন্দা সূত্র ও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এই নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি আলোচিত নাম মিজান ও ফারুক।গত কয়দিন ধরে উখিয়ার সীমান্ত এলাকায় চলছে ব্যাপক আলোচনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার থেকে ইয়াবা প্রথমে সীমান্তের দুর্গম এলাকা দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। এরপর তা স্থানীয় গুদাম ও ট্রানজিট পয়েন্ট ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় লাইনম্যান, ক্যারিয়ার ও ম্যানেজার এমন কয়েক স্তরের লোক কাজ করে।

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া, চাকবৈটা-সহ সীমান্তের কয়েকটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে দীর্ঘদিন ধরে একই সিন্ডিকেট সক্রিয়। তাদের অনুমতি ছাড়া বড় চালান চলাচল করা প্রায় অসম্ভব।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সীমান্তের একটি অংশে রত্নাপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া এলাকার হানিফের পুত্র মিজান এবং শামসুল আলমের পুত্র ফারুক নামের দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা সরাসরি মাঠে না নেমে মধ্যস্থতাকারী ও স্থানীয় বাহকের মাধ্যমে ইয়াবা পারাপার ও বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করেন। গত ১০ ডিসেম্বর ফারুক ও মিজান বিজিবির ধাওয়া খেয়ে ২৪ লাখ টাকার ইয়াবা রেখে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের করা মামলায় আসামি হয়েছেন তারা। উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাঁর মামলা নং ১৮। মামলার বাদী রেজুপাড়া বিওপির নায়েক মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, বর্তমানে আমি ছুটিতে আছি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বড় চালান আসার আগে এলাকায় অস্বাভাবিক নীরবতা দেখা যায়। অনেকেই জানে কারা এসব নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু মুখ খুলতে ভয় পায়।

তবে মিজান ও ফারুক পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

করইবনিয়া এলাকার সচেতন কয়েকজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, ইয়াবা সিন্ডিকেটগুলো শুধু মাদক নয়—টাকা, অস্ত্র ও প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সীমান্ত এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি, তথ্য ফাঁস এবং স্থানীয় সহযোগিতার কারণেই তারা বারবার আইনের চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও সোর্স ইনফরমেশন ব্যবহার করে বড় সিন্ডিকেট শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নুর আহমদ বলেন ইয়াবা মামলার পলাতক আসামি মিজান ও ফারুককে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস. এম. খায়রুল আলম, পিএসসি বলেন, পলাতক মাদক চোরাকারবারিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিজিবি শুধু সীমান্ত পাহারাতেই নয়, বরং মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধেও সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X