রবিবার
২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকা–বরিশাল রুটে স্টিমার সার্ভিস পুনরায় চালুর উদ্যোগও হোঁচট

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম
প্যাডেল স্টিমার পিএস মাহসুদ
expand
প্যাডেল স্টিমার পিএস মাহসুদ

পদ্মা সেতু চালুর পর নৌপরিবহন সেক্টরে যাত্রী কমে যাওয়ায় তিন বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ঢাকা–বরিশাল রুটের ঐতিহ্যবাহী স্টিমার সার্ভিস। দীর্ঘ প্রস্তুতি ও প্রচার-প্রচারণার পর অবশেষে সেই স্টিমার সার্ভিস ফের চালুর উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রথম দিনেই যাত্রী সংকটে থেমে গেল উদ্বোধনী যাত্রা।

গতকাল শুক্রবার ‘প্যাডেল স্টিমার পিএস মাহসুদ’-এর ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এক জন যাত্রীও না পাওয়ায় সেটি বাতিল করা হয়। বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা জানান, যাত্রা শুরুর আগেই পাঁচ-ছয়জন বুকিং দেওয়া যাত্রী নিজেদের বুকিং প্রত্যাহার করে নেন।

স্টিমার সার্ভিসে যাত্রী না পাওয়ার পেছনে উচ্চ ভাড়া অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন নৌখাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যদিও বিআইডব্লিউটিসি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভাড়া ঘোষণা করেনি, একটি সূত্র জানায়—ঢাকা–বরিশাল রুটে এসি কেবিনের ভাড়া ৬ হাজার, নন–এসি কেবিন ৪ হাজার এবং সাধারণ চেয়ার সিট ২ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে।

অন্যদিকে একই রুটে বেসরকারি লঞ্চে প্রথম শ্রেণির কেবিনের ভাড়া ২ হাজার টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার এবং সাধারণ চেয়ার ৭০০ টাকা—যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক (যাত্রী ও প্রশাসন) গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘এখনও কোনো ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কমিটির। তারা শিগগিরই সভা করে ভাড়া চূড়ান্ত করবেন।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি সপ্তাহেই ভাড়া নির্ধারণ হয়ে আগামী শুক্রবার পিএস মাহসুদের নিয়মিত যাত্রা শুরু হবে।

প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ নির্মিত হয় ১৯২৮ সালে। বহু বছর অচল থাকার পর ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটিকে সংস্কার করা হয়েছে। কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রেখে নতুন সাজে ফিরেছে স্টিমারটি। নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের ব্যক্তিগত আগ্রহে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংস্কার শেষে গত ২৪ অক্টোবর স্টিমারটি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয় এবং ১৫ নভেম্বর নৌপরিবহন উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্টিমারটি প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল এবং শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকায় চলবে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন প্রমোদভ্রমণের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে।

একসময়ে ঢাকা–বরিশাল–ঝালকাঠি–পিরোজপুর হয়ে খুলনা পর্যন্ত নিয়মিত স্টিমার চলত। সময় লাগত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এটি ছিল এক ধরনের আভিজাত্যের ভ্রমণ। তবে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় ধীরে ধীরে যাত্রী কমতে থাকে। বেসরকারি লঞ্চগুলো কোনোভাবে টিকে থাকলেও বন্ধ হয়ে যায় সরকারি স্টিমার সার্ভিস।

এখন প্রশ্ন—উচ্চ ভাড়া ও সীমিত যাত্রী চাহিদার মধ্যে পর্যটননির্ভর এই স্টিমার সার্ভিস কতটা সফল হবে। বিআইডব্লিউটিসি বলছে, সময়ই এর উত্তর দেবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন