

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সামনে যে নির্বাচন রয়েছে, সে নির্বাচনকালীন সাংবাদিকতা যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। একই সঙ্গে সাংবাদিকতা দিয়ে আপনারা এ রাষ্ট্রকে সঠিক পথে পরিচালনার চেষ্টা করতে পারেন। আবার এই নির্বাচন ভণ্ডুল করার ক্ষেত্রেও আপনাদের ভূমিকা থাকতে পারে। কোনটা বেছে নেবেন, তা আপনাদেরই চিন্তা করতে হবে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জেলায় কর্মরত ১৬ জন সাংবাদিকের মাঝে অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
জেলা প্রশাসক এস এম মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সম্রাট খীসা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হোসাইন আহমেদ হেলাল, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আ. হ. ম. মোশতাকুর রহমান, দেশ টিভির জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম স্বপনসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
সাংবাদিক নেতা এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে। এই ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুজব ছড়িয়ে, মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশনের মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার ক্ষেত্রেও সাংবাদিকদের একটি ভূমিকা থাকতে পারে। যাতে কোনো রকম অপতথ্য ছড়িয়ে নির্বাচনকে ভণ্ডুল করা, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা কিংবা নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণ্ন করা না হয়—এ ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ থাকবে।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ আরও বলেন, আমরা এখন মুক্ত পরিবেশে আছি। গণমাধ্যমও মুক্ত আছে। গত ১৫–১৬ বছর ফ্যাসিস্ট রেজিমে আমাদের সাংবাদিকতাকে দলন করে, পিষ্ট করে সমস্ত গণমাধ্যমকে ভঙ্গুর ও ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পেশাদার ও দেশাত্মবোধ নিয়ে যেসব গণমাধ্যম কাজ করেছিল, তাদের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছিল এবং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সম্পাদকদের জেলে ঢুকানো হয়েছিল। জুলাইয়ে প্রায় ১,৪০০ মানুষের জীবন এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষের অঙ্গহানির বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি, মুক্ত সংবাদমাধ্যম পেয়েছি। এখন আমরা যেন দায়িত্বহীন সংবাদমাধ্যমে পরিণত না হই। দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা যেন আমাদের মাঝে তৈরি না হয়—এ বিষয়ে আপনাদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ রাখব।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন গণমাধ্যম নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। গত ৩–৪ দিন ধরে গণমাধ্যম নিয়ে ভয়াবহভাবে আলোচনা হচ্ছে। দুটি গণমাধ্যমে আগুন দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম আমরা দেখছি। আমরা এ ধরনের গণমাধ্যমে অগ্নিসংযোগ, গণমাধ্যমে সন্ত্রাস—একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে, একজন গণতন্ত্রমনা মানুষ হিসেবে এবং একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে—কোনোভাবেই সমর্থন করি না। কিন্তু যদি এমনভাবে দেখানো হয় যে এই প্রথম বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তখন তা আমাদের জন্য পীড়াদায়ক ও কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। কারণ গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৫৯ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। প্রতি মাসে ২৫–৩০ জন সাংবাদিক পঙ্গু হয়েছেন, মামলার আসামি হয়েছেন, জেল খেটেছেন। এটি প্রায় প্রতি মাসের হিসাব।
এম আবদুল্লাহ বলেন, যারা ৫৪ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছেন, তাদের অতীতটা একটু ঘেঁটে দেখতে বলব। অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিরাও যখন এসব কথা বলেন, তখন আমাদের বেদনা ও দুঃখ রাখার জায়গা থাকে না। কারণ আমরা দেখেছি কিভাবে একেকজন সম্পাদককে চ্যাংদোলা করে ধরে নেওয়া হয়েছে, কমান্ডো স্টাইলে শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো করে মাহমুদুর রহমানকে দুই দফায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি সাড়ে পাঁচ বছর জেল খেটেছেন এবং ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। আবুল আসাদের মতো একজন জ্যেষ্ঠ সম্পাদকের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নামে কিছু সন্ত্রাসী কী কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা আমরা দেখেছি। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন একটি টকশোতে মাত্র একটি কথা বলার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কিভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে জেলখানার ফ্লোরে শুইয়ে রাখা হয়েছিল—এসব ইতিহাস চাইলেই মুছে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, তাই আগামী দিনে আমাদের সাংবাদিকতায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সত্যকে উপেক্ষা করে বা বিকৃত করে তা করা যাবে না। সত্য স্বীকার করতে হবে। কোনো আমলেই আমরা সংবাদমাধ্যমে নিপীড়ন চাই না।
মন্তব্য করুন
